spot_img

কোরআনের ভাষায় ব্যর্থ যারা

অবশ্যই পরুন

ব্যর্থতা বুঝানোর জন্য পবিত্র কোরআন ‘খা-বা’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। আর ‘খায়বাহ’ এমন একটি শব্দ, যা বলার সময় এবং শোনার সময় মানুষের মনে দুঃখ, হতাশা, নিরাশা, হীনমন্যতা, অক্ষমতা, ব্যর্থতা ও অসহায়ত্বের ছায়া ফেলে। খায়বাহ বা ব্যর্থতা হলো কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জনে ব্যর্থ হওয়া, যা প্রত্যাশা করেছিল তা না পাওয়া, যা আশা করেছিল তাতে সফল না হওয়া। ব্যর্থতা শুধু আশার পরেই আসে। যখন আশা ভেঙে যায়, তখন ব্যর্থতা এবং তার সাথে যুক্ত হূদয়বিদারক অনুভূতিগুলো আসে।

কোরআনুল কারিমে খায়বাহ বা ব্যর্থতার কথা চার স্থানে উলে্লখ করা হয়েছে, যার সবগুলোই জুলুমের সঙ্গে সম্পর্কিত। হয় ব্যাপক অর্থে জুলুম (শিরক), অথবা বান্দাদের প্রতি জুলুম, অথবা নিজের প্রতি জুলুম।
প্রথমত, জালিমুন বা জালেমরা : কোরআনুল কারিমের সুরা ত্বাহায় বলা হয়েছে—‘আর যে জুলুম বহন করেছে সে ব্যর্থ হয়েছে।’ (সুরা ত্বাহা, আয়াত : ১১১)

ইবনে আব্বাস (রা.) বলেছেন, ‘যে আল্লাহর সঙ্গে শিরক করেছে সে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, আর জুলুম হলো শিরক।’ এই ব্যাপক অর্থে জুলুম বলতে শিরক বোঝানো হয়েছে। শিরক দুই প্রকার : প্রকাশ্য শিরক, গোপন শিরক (যা পিপড়ার চলার চেয়েও সূক্ষ্ম), এবং ছোট শিরক (রিয়া বা লোক দেখানো)

দ্বিতীয়ত জাবাবেরাহ ও ‘আনীদ তথা অত্যাচারী একগুঁয়েরা : পবিত্র কোরআন অত্যাচারী একগুঁয়েদেরওে ব্যর্থ বলে চিহ্নিত করেছে। সুরা ইবরাহিমের ১৫ নং আয়াতে বলা হয়েছে—‘আর তারা ফায়সালা চাইল, এবং প্রতিটি অত্যাচারী একগুঁয়ে ব্যর্থ হলো।’

যে মানুষকে তার ইচ্ছার উপর জোর করে চালিত করে সেই অত্যাচারী। আর যে সত্যের বিরোধিতা করে এবং তা থেকে দূরে থাকে সে একগুঁয়ে। হাদিসে এসেছে, ‘নিশ্চয়ই জাহান্নামে একটি উপত্যকা আছে, আর সেই উপত্যকায় একটি কূপ আছে যার নাম ‘হাবহাব’। আল্লাহর ওপর হক যে তিনি প্রতিটি অত্যাচারী একগুঁয়েকে সেখানে বাস করাবেন।’ (তাবারানি, আল-মুজামুল কাবির, হাদিস : ১২২১৭)

তৃতীয়ত মিথ্যারোপকারীরা : পবিত্র কোরআন মিথ্যারোপকারীদেরও ব্যর্থ বলে চিহ্নিত করেছে। সুরা ত্বাহার ৬১ নং আয়াতে বলা হয়েছে—‘আর যে মিথ্যারোপ করেছে সে ব্যর্থ হয়েছে।’ সুরা আনকাবুতের ৬৮ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে—‘আর তার চেয়ে বড় জালেম কে, যে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপ করে অথবা তার কাছে সত্য আসার পর তা অস্বীকার করে?’

ইফতিরা হচ্ছে—‘অন্যের ব্যাপারে এমন মিথ্যা বলা যা সে পছন্দ করে না’। আল-কাফাওয়ির মতে, ইফতিরা হচ্ছে মিথ্যার চরম রূপ। ইমাম সুয়ূতির মতে, ইফতিরা হচ্ছে এমন বিষয়ের উদ্ভাবন যার কোনো ভিত্তি নেই। চতুর্থত নিজ আত্মকে কলুষিতকারীরা : পবিত্র কোরআন আত্মাকে কলুষিতকারী ব্যক্তিকেও ‘খা-বা’ বা ব্যর্থ হয়েছে বলে চিহ্নিত করেছে। সুরা শামস এর ১০ নং আয়াতে বলা হয়েছে—‘আর যে তাকে (আত্মাকে) কলুষিত করেছে সে ব্যর্থ হয়েছে।’

হাসান বসরি (রহ.)-এ র মতে, এই আয়াতে সেই লোক উদ্দেশ্য—‘যে নিজেকে ধ্বংস করেছে, পথভ্রষ্ট করেছে এবং পাপের দিকে পরিচালিত করেছে’। আর ইবনুল আরাবির এই আয়াতে সেই লোক উদ্দেশ্য—‘যে নিজেকে নেককারদের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেছে অথচ সে তাদের কর্মধারার মধ্যে নেই।’

যে ব্যক্তি কোরআনের এই চারটি স্থানে ব্যর্থতার কারণগুলো লক্ষ্য করবে, সে বুঝবে যে এগুলো কোনো নির্দষ্টি যুগ বা প্রজন্মের সাথে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এগুলো এমন ভূমিকা যা নির্দষ্টি পরিণতির দিকে নিয়ে যায়। ব্যর্থদের করণীয় যাদের মধ্যে আল্লাহ তাআলা তাঁর কিতাবে উলে্লখিত ব্যর্থতার কারণগুলো আছে, তাদের মুক্তির একমাত্র পথ হলো, আন্তরিকভাবে সেগুলো থেকে বের হয়ে আসার দৃঢ় নিয়ত, সত্যিকারের তাওবা ও সংশোধন। অন্যথায় তারা হবে দুনিয়ার সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত লোক অথচ নিজেরা তা বুঝতেও পারছে না। সুরা কাহাফের ১০৪ নং আয়াতে বলা ‘যাদের দুনিয়ার জীবনে সকল প্রচষ্টো বিপথগামী হয়েছে, অথচ তারা মনে করছে যে তারা সুন্দর কাজ করছে।’

মহান আল্লাহ আমাদের সকলকে সঠিক বুঝ দানের মাধ্যমে কোরআনের ভাষ্যমতে ব্যর্থদের তালিকা থেকে বেঁচে থাকার তাওফিক দান করুন। আমিন।

লেখক : শিক্ষার্থী, তাকমিল ফিল হাদিস, জামিয়া ইমদাদিয়া দারুল উলুম মুসলিম বাজার, মিরপুর, ঢাকা।

সর্বশেষ সংবাদ

জেল ভেঙে পালানো ৭০০ বন্দী এখনও পলাতক: কারা মহাপরিদর্শক

গত ৫ আগস্টের আগে ও পরে দেশের বিভিন্ন জেল ভেঙে পালিয়ে যাওয়া প্রায় ৭০০ বন্দীকে এখনো গ্রেপ্তার করা যায়নি...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ