লোকমুখে বলা হয়- কারাগার মানুষকে পরিশুদ্ধ করে; আত্মা থেকে বাহির সবক্ষেত্রে। তবে এই জেলে থেকেই একজন নিজেকে সংশোধন করে, আর অন্যজন আরও দুর্ধর্ষ হয়ে ওঠে।
বাংলাদেশে এমন এক বিতর্কিত তারকা রয়েছেন, যিনি গানবাজনার থেকেও ব্যক্তিগত বিষয় নিয়ে বেশি চর্চায় থাকেন। বলছিলাম নারী নির্যাতন মামলায় কারাগারে থাকা গায়ক মাইনুল আহসান নোবেলের কথা।
গতকাল শনিবার (৭ জুন) পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারে অনুষ্ঠিত হয়েছে বিশেষ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সেখানে কারাবন্দি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী মইনুল আহসান নোবেল। মঞ্চে উঠে তিনি গেয়েছেন নগর বাউল জেমসের গান; মাতিয়েছেন বন্দিদের।
জেমস ১৯৮০ সালে প্রতিষ্ঠা করেন ব্যান্ড ‘ফিলিংস’। সেই ব্যান্ডে থেকে দুটি অ্যালবাম বের করে বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠেন তিনি। এরপর ১৯৯০ সালে আসে ‘জেল থেকে বলছি’ একটি অ্যালবাম। জেমস সত্যিকার অর্থে কারাগার থেকে ‘জেল থেকে বলছি’ অ্যালবাম বের করেনি; করেছেন প্রতীকী অর্থে।
তবে সত্যিকারে কারাগার থেকে যদি কোন ব্যান্ড থেকে থাকে, সেটি হচ্ছে ‘কাকতাল’। কারাগারে থেকেই কাকতালীয়ভাবে ব্যান্ডটির জন্ম। প্রায় দুইশ-আড়াইশ গান জেলে বসেই কম্পোজ করেছে ব্যান্ড কাকতাল।
কারাগারের জীবন হয়তো অনেক সহজ; হয়তো কঠিন; কিংবা কোনটিই নয়। যে জেলে থেকেছে, শুধুমাত্র সেই জানে, মুক্ত কিংবা স্বাধীন থাকার মর্ম কেমন। অপরাধ করে জেলে গিয়ে পরিশুদ্ধির সময়টা অনেক কঠিন। আর যে কোনো আনন্দের মুহূর্ত যেমন: ঈদে একাকী বন্দি জীবন কাটানো হয়তো আরও দুর্বিষহ। সেই মানুষগুলোর জন্য এক মুহূর্তের জন্য হলেও কেউ যদি আনন্দ দিতে পারেন, তাহলে ওই বন্দিদের জন্য সেই মানুষটি অসাধারণ। ঠিক যেন ১৯৯৪ সালের থ্রিলার মুভি ‘শশাঙ্ক রিডেম্পশন’-এর মতো।
‘শশাঙ্ক রিডেম্পশন’ সিনেমার একটি দৃশ্যে, জেলে একদিন ক্যাপ্টেন হ্যাডলি কিছু ডলার পেয়েছেন, কিন্তু সরকার ট্যাক্স কেটে নিবে এই ভয়ে ভীষণ চিন্তিত তিনি। অ্যান্ডি—যিনি সেই সিনেমার নায়ক; সেই সাথে একজন ব্যাংকার ও ছিলেন।
তিনি ওই অফিসারকে এমন বুদ্ধি দেন, যা করে ট্যাক্স থেকে বেঁচে যান ওই অফিসার। এই উপকারের বদলে অ্যান্ডি চেয়েছিলেন শুধু কিছু ঠাণ্ডা বিয়ার; তার এবং তার কয়েদি বন্ধুদের জন্য। ওইদিন সকালে কাজ করার পর, জেলের ফ্যাক্টরি রুফে বিয়ার খাচ্ছিলেন সব কয়েদি, আর সবাই এটাই ভাবছিলেন, জেলে বিয়ার—এক কথায় একটু হলেও জেলের জীবনে বিনোদন; যা বাস্তবে অসম্ভব!
বিয়ার স্বাস্থ্যর জন্য ক্ষতিকর। কিন্তু গল্পের মূল চরিত্র অ্যান্ডির মাধ্যমে পরিচালক হয়তো দেখাতে চেয়েছিলেন ‘হোপ’, যেটির বাংলা অর্থ ‘আশা’, যেটি আমাদের বাঁচিয়ে রাখে।
ঈদের দিনে জেলের বন্দিদের জন্য গান গেয়ে হয়তো ‘আশা’ দেখিয়েছেন নোবেল। বন্দি মানুষগুলোর জন্যও হয়তো ঈদ হতে পারে আনন্দের। যদিও গায়ক নোবেল নিজেকে পরিশুদ্ধ করে ফিরে আসবে গানের জগতে, এমনটাই হয়তো চাইবেন তার ভক্তরা।
ঈদের দিন শনিবার বিকাল সাড়ে তিনটায় কারা কর্তৃপক্ষের আয়োজনে বন্দিশালার মাঠে আয়োজিত হয় এই বিশেষ অনুষ্ঠান।
মঞ্চে নোবেল ‘অভিনয়’, ‘ভিগি ভিগি’, ‘সেই তুমি কেন এত অচেনা হয়ে গেলে’সহ তার জনপ্রিয় কয়েকটি গান পরিবেশন করেন। নোবেলের কণ্ঠে গাওয়া এসব গান শুনে অন্য বন্দিরাও আবেগ-উচ্ছ্বাসে মেতে ওঠেন। গানে গানে তৈরি হয় এক ভিন্নরকম উৎসবমুখর পরিবেশ।
উল্লেখ্য, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নোবেলের মারধরের একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। পরে ভুক্তভোগীর পরিবার তাকে চিনতে পেরে জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯ এ কল করে। এরপর গত ১৯ মে রাত সাড়ে ৯টার দিকে ডেমরা থানা পুলিশ ভুক্তভোগীকে উদ্ধার করে। এ ঘটনায় সেই ভুক্তভোগীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে ডেমরা থানায় একটি নারী নির্যাতন মামলা রুজু করা হয়।
থানা সূত্র জানায়, মামলাটির তদন্তের সময় ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ ও প্রযুক্তির সহায়তায় ঘটনার সাথে জড়িত কণ্ঠশিল্পী নোবেলকে গ্রেপ্তার করা হয়।