গুনাহ দুই প্রকার। সগিরা গুনাহ ও কবিরা গুনাহ। আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সা.) যেসব কাজ করতে কঠোরভাবে নিষেধ করেছেন এবং যেসব কাজের জন্য শাস্তির বিধান অথবা আল্লাহর ক্রোধের ঘোষণা আছে, সেগুলোকে কবিরা গুনাহ বলা হয়। এমন না হলে তাকে সগিরা গুনাহ বলা হয়। কবিরা গুনাহ কোনো ইবাদতের দ্বারা মাফ হয় না—এর জন্য তাওবা করতে হয়। আর সগিরা গুনাহ নেক আমল দ্বারাও মাফ হয়ে যায়। তবে সগিরা গুনাহও যদি বেপরোয়া ও ঔদ্ধত্বের সঙ্গে বারবার করা হয়, তাহলে তাও কবিরা গুনাহর অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।
গুনাহর প্রভাব : গুনাহর প্রভাব হলো—তা যেকোনোভাবে গুনাহগারকে চিন্তিত ও অশান্ত করে রাখে। গুনাহ করার প্রথম পর্যায়ে অনেকে মনে করে, আজ এ গুনাহ করে ফেলি, তারপর ছেড়ে দেব। পরে তাওবা করে ফেলব। কিন্তু শয়তানের প্ররোচনায় সে গুনাহ সহজ হয়ে ওঠে না; বরং দিন দিন আরো মারাত্মক গুনাহে লিপ্ত হয়। গুনাহ করতে করতে একপর্যায়ে গুনাহ করা অভ্যাসে পরিণত হয়। তখন চাইলেও সহজে তা থেকে মুক্ত হওয়া যায় না। গুনাহ ক্যান্সারের মতো। ক্যান্সার অপারেশন না করলে যেভাবে আস্তে আস্তে পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। তেমনি গুনাহ পরিত্যাগ না করলে তা আস্তে আস্তে সব অঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে। একসময় সব ধরনের গুনাহে লিপ্ত হয়। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য গুনাহ পরিত্যাগ করো।’ (সুরা : আনআম, আয়াত : ১২০)
যে সময় বান্দা গুনাহে লিপ্ত হয় :
(১) মানুষ যখন মনে করে, আমাকে কেউ দেখছে না তখন সে গুনাহে লিপ্ত হয়। অথচ মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই আপনার পালনকর্তা সতর্ক দৃষ্টি রাখেন।’ (সুরা : ফাজর, আয়াত : ১৪)
(২) মানুষ যখন মনে করে, আমার গুনাহ সম্পর্কে কেউ জানতে পারবে না, তখন সে গুনাহে লিপ্ত হয়। অথচ মহান আল্লাহ বলেন, ‘চোখের চুরি ও অন্তরের গোপন বিষয় তিনি জানেন।’ (সুরা : মুমিন, আয়াত : ১৯)
(৩) যখন মনে করে, আমার কাছে কেউ নেই, আমি একাই আছি, তখন সে গুনাহে লিপ্ত হয়। অথচ মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তিনি তোমাদের সঙ্গে আছেন তোমরা যেখানেই থাক।’ (সুরা : হাদিদ, আয়াত : ৪)
(৪) মানুষ যখন নির্লজ্জ হয়ে যায়, লাগামহীন হয়ে যায় এবং বলে আমি অমুক কাজ করব, পারলে কিছু করো; কেউ আমার কিছুই করতে পারবে না। এমন চিন্তা থেকে সে গুনাহে লিপ্ত হয়। অথচ মহান আল্লাহ বলেন, ‘নিশ্চয়ই তাঁর (আল্লাহর) পাকড়াও খুবই মারাত্মক, বড়ই কঠোর।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ১০২)
গুনাহর চার সাক্ষী : গুনাহর ওপর কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলা চার সাক্ষী পেশ করবেন।
প্রথম সাক্ষী : প্রত্যেক মানুষের কাঁধে ‘কিরামান কাতিবিন’ ফেরেশতা আছেন, তাঁরা সাক্ষী হবেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘অবশ্যই তোমাদের ওপর তত্ত্বাবধায়ক নিযুক্ত আছে। সম্মানিত আমল লেখকবৃন্দ। তারা জানে, যা তোমরা করো।’ (সুরা : ইনফিতার, আয়াত : ১০-১২)
দ্বিতীয় সাক্ষী : আমলনামা সাক্ষী হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর আমলনামা সামনে রাখা হবে। তাতে যা আছে, তার কারণে আপনি অপরাধীদের ভীত-সন্ত্রস্ত দেখবেন। তারা বলবে : হায় আফসোস! এ কেমন আমলনামা? এ যে ছোট বড় কোনো কিছুই বাদ দেয়নি; সবই এতে রয়েছে। তারা তাদের কৃতকর্মকে সামনে উপস্থিত পাবে। আপনার পালনকর্তা কারো প্রতি জুলুম করবেন না।’ (সুরা : কাহফ, আয়াত : ৪৯)
তৃতীয় সাক্ষী : জমিন বা গুনাহ করার স্থান সাক্ষী হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘সেদিন সে (জমিন) তার বৃত্তান্ত বর্ণনা করবে। কারণ আপনার পালনকর্তা তাকে আদেশ করবেন।’ (সুরা : জিলজাল, আয়াত : ৪-৫)
চতুর্থ সাক্ষী : মানুষের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ সাক্ষী হবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা যখন জাহান্নামের কাছে পৌঁছাবে তখন তাদের কান, চোখ ও ত্বক তাদের কর্ম সম্পর্কে সাক্ষ্য দেবে।’ (সুরা : সাজদা, আয়াত : ২০)
আরো ইরশাদ হয়েছে, ‘আজ আমি তাদের মুখে মোহর এঁটে দেব, তাদের হাত আমার সঙ্গে কথা বলবে এবং তাদের পা তাদের কৃতকর্মের সাক্ষ্য দেবে।’ (সুরা : ইয়াসিন, আয়াত : ৬৫)
পাপ আগুনসদৃশ : পাপ মূলত আগুন। পাপীরা অবশ্যই ইহকাল ও পরকালে পাপের আগুনে জ্বলবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘যারা এতিমদের অর্থ-সম্পদ অন্যায়ভাবে ভোগ করে তারা নিজেদের পেটে আগুনই ভর্তি করে এবং শিগগিরই তারা অগ্নিতে প্রবেশ করবে।’ (সুরা : নিসা, আয়াত : ১০)
নেক আমলে আনন্দময় জীবন : নারী পুরুষের যে কেউ পাপমুক্ত থাকবে এবং নেক আমল করবে, সে-ই আনন্দময় জীবন লাভ করবে। ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিন পুরুষ ও নারীর মধ্যে যে সৎকাজ করবে, তাকে আমি নিশ্চয়ই আনন্দময় জীবন দান করব এবং তাদেরকে তাদের কর্মের শেষ্ঠ পুরস্কার প্রদান করব।’ (সুরা : নাহল, আয়াত : ৯৭)
লেখক : মুফতি মুহাম্মাদ ইসমাঈল