গত ১৫ বছরে অনেক রাজনীতিবিদ যাদের অধিকাংশ পুরুষ তাদের সম্ভবত একটা চরম শিক্ষা হয়ে গেছে যে আঙ্গেলা মের্কেলকে অবমূল্যায়ন করার কোনো সুযোগ নেই।
জার্মান চ্যান্সেলর চলতি বছরের শেষ নাগাদ পদত্যাগের আয়োজন করছেন। অবশ্য অনেক আগেই তিনি বিশ্বের অন্যতম সফল রাজনীতিক হিসেবে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করে ফেলেছেন। ফলে এক দারুণ তৃপ্ত অবসর জীবন তিনি অতিবাহিত করবেন বলেই ধরে নেয়া যায়।
দায়িত্বে থাকাকালে মের্কেল যুক্তরাজ্যের পাঁচজন প্রধানমন্ত্রী, চারজন ফরাসি প্রেসিডেন্ট এবং সাতজন ইতালীয় প্রধানমন্ত্রীকে পেয়েছেন। আগামী ২০ জানুয়ারি প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেবেন জো বাইডেন, ফলে চতুর্থ আমেরিকান কমান্ডার-ইন-চিফকেও পাবেন মের্কেল।
দুর্দান্ত ট্র্যাক রেকর্ড সত্ত্বেও, বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতির নেতা মের্কেলকে কিন্তু তার রাজনৈতিক জীবনের অধিকাংশ সময় ব্যয় করতে হয়েছে নিজেকে প্রমাণ করার প্রয়াসে।
এমনকি তার সহযোগীরাও তাকে তাচ্ছিল্য ও ছোট করার চেষ্টা করেছেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তার সঙ্গে এক বৈঠকে ইচ্ছে করে ল্যাব্রাডর কুকুর নিয়ে এসেছিলেন। অথচ কে না জানে মের্কেলের কুকুরভীতি রয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প তাকে বলেছিলেন, বেকুব (স্টুপিড)! ইতালির তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বের্লুসকোনি একবার ব্যক্তিগত ফোনে ব্যস্ত থেকে তাকে সাক্ষাতের জন্য ১৫ মিনিট অপেক্ষা করিয়েছিলেন।
২০০৫ সালে যখন তিনি জার্মানির শীর্ষ পদে আসীন প্রথম নারী, তখন অনেকে তাকে অত্যন্ত অনভিজ্ঞ এবং টিকে যাওয়ার মতো যথেষ্ট ক্যারিশম্যাটিক নয় বলে ভেবেছিল।
জার্মানির সর্বাধিক পঠিত পত্রিকা বিল্ড তার অভিষেক অনুষ্ঠানের কাভারেজ করেছিল প্রথম পাতায় ছবি ও বড় শিরোনামে ’মিস জার্মানি!’ লিখে। এমনকি নিজ দলের মধ্যেই তাকে ‘ডাস ম্যাডচেন’ বা অল্পবয়সী মেয়ে বলে উল্লেখ করা হয়েছিল।
কিন্তু পরের বছরগুলোতে অনেক নেতা এসেছেন আবার চলেও গেছেন। অতুলনীয় জনপ্রিয়তা নিয়ে টিকে গেছেন মের্কেল। ‘ডাস ম্যাডচেন’ থেকে হয়ে উঠেছেন ‘ডাই মুট্টি’, এই পরিভাষায় একজন মায়ের মূর্তিকে বোঝানো হয় যিনি স্থায়িত্বের প্রতীক।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী জয়েস মুশাবেন বলেন, মের্কেল যখন খ্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) দলের নেতৃত্বে, তখন বলা হয়েছিল তিনি আসলে ‘অস্থায়ী’ নেতা।
মুশাবেন বলেন, দলের অনেক পুরুষ প্রতিদ্বন্দ্বীই নানা কেলেঙ্কারিতে জড়িয়ে পড়েছিলেন। ওই পরিস্থিতিতে মের্কেলের নেতৃত্বে আসার বিষয়টিকে ভাবা হচ্ছিল, কোনো যোগ্য পুরুষ নেতৃত্ব খুঁজে পেলেই মের্কেলকে সরিয়ে দেয়া হবে। তিনি আসলে ঠেকা কাজ চালাচ্ছেন। এই রাজনীতিকরা যে তার শেখার দক্ষতাকে পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেননি পরে তা প্রমাণ করেছেন মের্কেল।
মের্কেল ১৮ বছর দলের নেতৃত্ব দিয়েছেন। ২০১৮ সালের শেষ নাগাদ যখন তার পদত্যাগ চূড়ান্ত তখন সবাই বুঝতে পারেন যে তার বিকল্প পাওয়া কতো কঠিন হবে। মের্কেলের নিজে হাতে বাছাই করা উত্তরসূরি আনেগ্রেট ক্র্যাম্প-ক্যারেনবাউয়ার মাত্র এক বছরের কিছু বেশি সময় টিকতে পেরেছিলেন। তিনি দলের আঞ্চলিক বিরোধ সামলাতে ব্যর্থ হন।
সম্প্রতি দল মের্কেলের উত্তরসূরি হিসেবে আর্মিন লাশেটকে বেছে নিয়েছে। মের্কেলের দীর্ঘ সময়ের এ মিত্র বর্তমানে ফেডারেল রাজ্য উত্তর-রাইন ওয়েস্টফালিয়ায় মিনিস্টার-প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি ৫২ দশমিক ৭৯ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী হয়ে কর্পোরেট আইনজীবী ফ্রেডরিক মের্জকে পরাজিত করেন, যিনি পেয়েছিলে ৪৭ দশমিক ২১ শতাংশ ভোট।
সেপ্টেম্বরের ফেডারেল নির্বাচনে দলকে নেতৃত্ব দেবেন লাশেট। তার নির্বাচনী বিজয়টি মের্কেলের মধ্যপন্থী রাজনীতির ধারাবাহিকতার পক্ষে একটি সুস্পষ্ট রায় বলা যেতে পারে।
মের্কেলের জীবনী লেখক এবং মিসৌরি-সেন্ট লুইস বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক রাজনীতি এবং জেন্টার স্টাডিজের অধ্যাপক মুশাবেন। তিনি বলেন, মের্কেলের সাফল্যের মূল চাবিকাঠি তার পটভূমি এবং দক্ষতার এক অনন্য মিশেল।
কম্যুনিস্ট পূর্ব-জার্মানিতে এক যাজকের ঘরে জন্ম মের্কেলের। সেখানে বেড়ে ওঠার অভিজ্ঞতা তার রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত গ্রহণকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে এবং কোয়ান্টাম রসায়নে ডক্টরেটসহ একজন সাবেক বিজ্ঞানী হিসেবে তিনি প্রায়শই জটিল হিসাব নিকাশগুলো অনায়াসে করতে পারার অনন্য দক্ষতাসম্পন্ন।
১৯৯৯ সালে যখন তার রাজনৈতিক মন্ত্রণাদাতা হেলমুট কোল দুর্নীতির মামলায় জড়িয়ে পড়েছিলেন। তখন মের্কেলই প্রকাশ্যে তার সমালোচনা করেন এবং দীর্ঘকালীন প্রভাব সত্ত্বেও রাজনৈতিক গুরুকে সরে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান।
মুশাবেন বলেন, লোকেরা তাকে সংহতির প্রতিভূ হিসেবে দেখেছিল। তিনি এমন কোনো নেতা নন যিনি কারণে অকারণে মাইক ধরেই কথার তুবড়ি ছোটাবেন। তিনি তখনই কথা বলার জন্য মাইক নেন যখন সত্যিই কিছু বলা দরকার বলে মনে করেন।
প্রথম নারী চ্যান্সেলর হওয়ার পাশাপাশি, বার্লিন প্রাচীর পতনের পরে পূর্ব জার্মানির প্রথম কোনো রাজনীতিবিদ হিসেবে এই পদে আসীন হওয়ার রেকর্ডটিও মের্কেলের।
সম্প্রতি করোনা মহামারীতে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ নিয়ে উদারপন্থীরা বরাবরই ইতস্তত করছিলেন। সাধারণ নাগরিকদেরও বিষয়টি মানাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে মের্কেল নিজের অতীত ইতিহাস তুলে জনগণকে বলেন, স্বাধীনভাবে ঘুরতে ফিরতে পারার অধিকার পেতে অনেক কাঠখড়ি পোড়াতে হয়েছে ঠিকই। তিনি নিজেও এই নতুন বিধিবিধান নিয়ে অস্বস্তিতে ছিলাম। কিন্তু এটি কেন প্রয়োজন তার বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেন মের্কেল। জার্মানরা তার কথায় অনেকখানিই বুঝেছে বলেই মনে হয়।
ব্রাসেলসে জার্মান মার্শাল তহবিলের সিনিয়র ফেলো এবং উপ-পরিচালক করিনা হোয়ার্স্ট বলেন, মের্কেল এক নতুন ধরনের নেতা। তিনি সহানুভূতি, স্থিতিশীলতা এবং নির্ভরযোগ্যতার প্রতীক। এটি অনন্য। জনগণ একজন নেতার মধ্যে কী গুণ বৈশিষ্ট্য দেখতে চায় সেটিও মনে হয় নতুন করে সংজ্ঞায়িত করতে হবে। কারণ আমরা যেমনটি গতানুগতিক পুরুষ নেতৃত্বের মধ্যে এতোদিন দেখে এসেছি তিনি তার বিপরীত।
বিশ্ব সঙ্কটে কাণ্ডারি
এমনকি তার কট্টর সমালোচকরাও স্বীকার করেন যে সঙ্কট মোকাবেলায় মের্কেলের যেন বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। বিশ্বব্যাপী আর্থিক সংকট, ইউরোজোনে ঋণ সঙ্কট এবং অভিবাসন সঙ্কট মোকাবেলার পথ জার্মানির চোখ দিয়েই দেখতে বাধ্য হয়েছে সবাই। পদত্যাগের কয়েক মাস আর বাকি। এরপরও তিনি করোনাভাইরাস মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেতৃত্বে দিয়ে যাচ্ছেন।
তিনি প্রায়শই সময়ের কণ্ঠস্বর হয়ে উঠেছেন। তাকে বলা যায়, ডিল মেকার। রাজনীতি বিজ্ঞানীরা তাকে শান্ত, স্থিতধী, বাস্তববাদী এবং দারুণ কূটনীতিক হিসেবে বর্ণনা করেন। সবকিছুর মিশ্রনে তিনি কিছুটা ‘একঘেঁয়েও’ বটে!
জার্মানির টবিনজেন বিশ্ববিদ্যালয়ের তুলনামূলক রাজনীতির অধ্যাপক গ্যাব্রিয়েল আবেলস বলেন, তাকে নিয়ে চটকদার কিছু নেই। তিনি খুব… সত্যই, খুব যৌক্তিক মানুষ এবং লোকেরা কখনও ভাবতেই পারেন না যে তিনি দুর্নীতি করতে পারেন।
আবেলস বলেন, মের্কেলের মধ্যে এমন কিছুর সম্ভার রয়েছে যা বেশিরভাগ জার্মান একজন আদর্শ নেতৃত্বের মধ্যে দেখতে চায়। যদিও আমরা মাঝে মধ্যে অন্য দেশগুলোতে দেখি ক্যারিশম্যাটিক নেতা। কিন্তু আমরা নিজেরা এমন কাউকে চাই না, ইতিহাসে আমরা এমন বহু ক্যারিশম্যাটিক নেতা দেখেছি।
হোয়ার্স্ট বলেন, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মের্কেলের বিশেষ যে ক্ষমতাটি প্রকাশ পেয়েছে সেটি হলো ঐকমত্য তৈরি করতে পারা এবং যে কোনো বিষয়ে মধ্যমণি হয়ে নেতৃত্ব দেয়া।
তিনি বলেন, মজার বিষয় হলো নারীদের ব্যাপারে সাধারণ ধারণা হলো: ওহ, তিনি তো খুব আবেগপ্রবণ! কিন্তু বাস্তবে, পুরুষরাই দেখা যাচ্ছে বেশি আবেগপ্রবণ, যেমন দেখুন বরিস জনসন বা প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সেদিক থেকে চ্যান্সেলর মের্কেলের দৃষ্টিভঙ্গি কূটনৈতিক এবং তিনি দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। তিনি শুধু নিজের মত প্রতিষ্ঠার জন্য মরিয়া হয়ে ছোটেন না, চারপাশের সবাইকে সঙ্গে নিয়ে এগোতে চান।
মুশাবেন বলেন, একজন সাবেক বিজ্ঞানী এবং পরিবেশমন্ত্রী হিসেবে, তিনি নেতৃত্বের শুরু থেকেই জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলাকে তার নীতির কেন্দ্রে স্থাপন করেছেন। তিনি বার্লিনে প্রথম জাতিসংঘ জলবায়ু সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন এবং জি-৮-এর নেতাদের গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমানোর প্রয়োজনীয়তা মেনে নিতে রাজি করেন। এমনকি জর্জ বুশকে জলবায়ু পরিবর্তনের সমস্যার সত্যতা স্বীকার করাতে পেরেছিলেন মের্কেল। তিনি আসলেই একজন দুর্দান্ত মধ্যস্থতাকারী।
তবে সব সময়ই যে তার কৌশল ও প্রচেষ্টা সফল হয়েছে এমন নয়। গত বছরের শেষ নাগাদ করোনাভাইরাস সংক্রমণের মাত্রা বাড়তে শুরু করলে জার্মানির ফেডারেল রাজ্যগুলোর নেতাদের দেশব্যাপী কঠোর স্বাস্থ্যবিধি বাস্তবায়নে রাজি করতে ঘাম ছুটে যাচ্ছে তার। গত ছয় মাস ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের কাউন্সিলের রোটেটিং প্রেসিডেন্ট হিসেবে তিনি ইইউ-এর আইনের শাসন মেনে চলার বিষয়ে হাঙ্গেরি ও পোল্যান্ডের সঙ্গে ঐক্যমতে পৌঁছানোর চেষ্টা করছেন।
আত্মবিশ্বাস
এমনও কিছু সময় গেছে যখন মের্কেল কোনো সমঝোতার সন্ধান করেননি। বিশেষত ২০১৫ সালে যখন তিনি সিরিয়া এবং অন্যান্য দেশে গৃহযুদ্ধের কবল থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থীদের জার্মানিতে স্বাগত জানিয়েছেন।
গত গ্রীষ্মে মের্কেল জার্মানদের উদ্দেশে বলেন, রাজনৈতিকভাবে নির্যাতিত জনগণের আশ্রয় পাওয়ার অধিকার রয়েছে। আমরা আমাদের মৌলিক মানবিকতা নিয়ে গর্ব করতে পারি …যারা যুদ্ধ থেকে বাঁচতে পালিয়ে আসে তাদের সবাইকে আমরা সুরক্ষাও দিতে পারি।
মের্কেল আরো বলেন, আমি ব্যাপারটা খুব সহজভাবে নিয়েছি: জার্মানি একটি শক্তিশালী দেশ। আমরা যে বিষয়গুলো নিয়ে এগিয়ে চলছি তা অব্যাহত থাকবে: আমাদের অর্জন প্রচুর- আমরা এটিও করতে পারবো!
মুশাবেন বলেন, আমার মতে এটি তার সবচেয়ে স্মরণীয় মুহূর্ত, ২০১৫ সালে তিন সপ্তাহের মধ্যে সমর্থন আদায়ের জন্য তিনি তার মন্ত্রিসভার সমস্ত লোক এবং ফেডারেল পুলিশ এবং সীমান্তরক্ষী বাহিনী প্রধানের সঙ্গে রীতিমতো লড়াই করেছিলেন। তারা সবাই বলেছিল, এটা করবেন না। জবাবে মের্কেল বলেছিলেন, আমরা যদি ব্যাংক বাঁচাতে পারি, তাহলে মানুষকেও বাঁচাতে পারবো।
হোয়ার্স্ট বলেন, এই সিদ্ধান্তটি মের্কেলের লিগ্যাসির একটি বড় অংশ হয়ে থাকবে। এটি মানবতাবাদী ব্যাপার ছিল এবং কাজটাও ছিল বেশ কঠিন। তিনি সেইসব জার্মান নাগরিকদের ক্ষমতায়িত করেছিলেন যারা শরণার্থীদের প্রতি সহানুভূতি অনুভব করতেন কিন্তু সেভাবে সক্রিয় ছিলেন না। সেই লোকগুলো মের্কেলকে ব্যাপকভাবে সমর্থন দিয়েছেন।
অনেকেই এই পদক্ষেপের সমালোচনা করেছেন, বিশেষত পরের দেড় বছরের মধ্যে আনুমানিক ১২ লাখ লোক জার্মানিতে ঢুকে পড়ে। বাইরে থেকে হঠাৎ ব্যাপক লোক আসায় শুরুতে কিছু সমস্যা তৈরি হয়েছিল। অলটারনেটিভ ফার ডাচল্যান্ড (এএফডি)-এর মতো কট্টর ডানপন্থী অভিবাসনবিরোধী দলগুলো মওকা পেয়ে যায়। কিন্তু তারা বেশিদিন উত্তেজনা ধরে রাখতে পারেনি। বিশেষ করে নির্বাচনের পরপরই এএফডি ঝিমিয়ে পড়ে। শরণার্থী এবং অভিবাসীদের স্বাগত জানানোর এই নীতি শেষ পর্যন্ত অর্থনীতির জন্য আশীর্বাদ হয়ে এসেছে।
অন্য অনেক ইউরোপীয় দেশগুলোর মতো, জার্মানিতেও বয়স্ক লোকের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে এবং পর্যাপ্ত কর্মী না থাকায় একটি জনমিতিক টাইম বোমার প্রহর গুণছে।
জার্মানির শ্রমবাজার ও ব্যবসায়িক গবেষণা ইনস্টিটিউটের তথ্য অনুসারে, ২০১৩ সাল থেকে দেশটিতে আসা সক্ষম শরণার্থীদের মধ্যে ৪৯ শতাংশ গত বছরের ফেব্রুয়ারি মাস থেকে কোনো না কোনো কর্মে নিয়োজিত ছিলেন। এর অর্ধেকেরও বেশি দক্ষ চাকরিতে ছিলেন এবং দুই-তৃতীয়াংশেরও বেশি স্থায়ী কাজ পেয়ে গিয়েছিলেন।
মের্কেলের পরে কী
পঞ্চম মেয়াদে চ্যান্সেলর পদে নির্বাচনে অংশ নেয়ার প্রস্তাব বারবার প্রত্যাখ্যান করেছেন মের্কেল। রাজনীতি বিশ্লেষকরা বলেন, তিনি তার আগের প্রতিশ্রুতি থেকে সরবেন না। মুশাবেন বলেন, মের্কেল তো চতুর্থ মেয়াদে প্রার্থী হওয়ার সিদ্ধান্তেও খুব দ্বিধাগ্রস্ত ছিলেন। তবে তিনি পুতিন এবং ট্রাম্পের নির্বাচন দেখে বলেছিলেন, ঠিক আছে, এই মঞ্চে তাহলে আমিই একমাত্র অভিজ্ঞ লোক রয়ে গেলাম।
কিন্তু এবার মের্কেল আর তার প্রতিজ্ঞা থেকে সরবেন বলে মনে হয় না। মুশাবেন বলেন, আমি মনে করি না তিনি অন্য কোনও পদ গ্রহণ করবেন। আমি মনে করি যে তিনি সত্যিকার অবসর নেবেন। গত ২০, ৩০ বছরে নিজের প্রিয় যে কাজগুলো করতে পারেননি এবার তিনি সেসবেই মনোযোগ দেবেন।
মুশাবেনের মতে, বিদায়ী চ্যান্সেলর আগেই বলেছিলেন তার প্রিয় প্লাম কেক এবং তার বিখ্যাত আলুর স্যুপ তৈরিতে মনোযোগ দিতে চান। তার মানে ধরে নেয়া যায, তিনি বক্তৃতা দেয়ার জন্য দেশ বিদেশ ঘোরা বা এমন কোনো দীর্ঘ ভ্রমণের পরিকল্পনা রাখেননি।
যাইহোক মের্কেল পুরোপুরি অবসরে গেলেও তার রাজনৈতিক প্রজ্ঞার প্রভাব বিশ্বকে আরো বহুদিন তাকে মনে করিয়ে দেবে। কোনো নারী সফল নেতা হতে পারেন না এই ধারণাটি যে মিথ্যা সেটেই মের্কেলের ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় বার্তা বলে মনে করেন রাজনীতি বিশ্লেষক আবেলস।