যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের এখন আনন্দের দিন। গত দুই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী যা পারেননি, তিনি ব্রেক্সিট চুক্তি কার্যকর করতে পেরেছেন। জনসনের এই হাসি বেশিদিন টিকবে না। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর এবার যুক্তরাজ্যের ইউনিয়ন রক্ষার লড়াইয়ে নামতে হবে জনসনকে।
শনিবার (২ জানুয়ারি )জনসন তার টুইটবার্তায় জানিয়েছেন,‘ব্রিটেনের জন্য দুর্দান্ত বছর। করোনা মহামারী ও ব্রেক্সিট সংক্রান্ত বাণিজ্যিক জটিলতা সত্ত্বেও ২০২১ সালকে যুক্তরাজ্যের জন্য ভালো বছর বলে অভিহিত করেছেন তিনি। কিন্তু বিশ্লেষক ও পর্যবেক্ষকরা বলছেন ভিন্ন কথা।
চার জাতির সাংবিধানিক চুক্তির মাধ্যমেই যুক্তরাজ্যের সৃষ্টি। ব্রিটেন ছাড়া ইউনিয়নের অন্য তিন সদস্যদের মধ্যে স্কটল্যান্ড একবার স্বাধীনতার পক্ষে গণভোটও দিয়েছে। প্রথম গণভোটে স্বাধীনতার পক্ষে কাঙ্খিত ভোট না পড়লেও দ্বিতীয় গণভোটে স্বাধীনতার পক্ষে রায় আসার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি বলে মনে করছেন স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টারজেন।
ইউরোপের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের আনুষ্ঠানিক বাণিজ্য চুক্তি হওয়ার পর নিকোলা বলেছেন,‘আমরা স্কটল্যান্ডবাসী আবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে মিলব।’ স্কটল্যান্ডের ফার্স্ট মিনিস্টারের এমন বক্তব্যই বলে দিচ্ছে যে, তারা যুক্তরাজ্য ছাড়ার প্রস্তুতির মধ্যেই আছেন।
এডিনবার্গ, কার্ডিফ, বেলফাস্টের সঙ্গে লন্ডনের দূরত্ব শুধু স্থানিক নয়, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দূরত্বও অনেক বেশি। দীর্ঘদিন ধরেই লন্ডনকে সবচেয়ে বেশি সুবিধাভোগী বলে আছে বাকিরা। সম্প্রতি স্টসম্যান পত্রিকার এক জরিপে বলা হচ্ছে, স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতার দাবিতে করা প্রথম গণভোটে যুক্তরাজ্যের সঙ্গে থাকতে চাওয়া মানুষের সংখ্যা আগের তুলনায় ১৬ পয়েন্ট কমেছে।
নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের জাতীয়তাবাদী রাজনীতিকরা সিএনএনকে বলেছেন, তারা স্বাধীনতার প্রশ্নে আগের চেয়ে অনেক সংগঠিত। গণভোটের মাধ্যমে রিপাবলিক অব আয়ারল্যান্ড গঠনের দাবি সামনে আসতে পারে। ওয়েলসে স্বাধীনতার দাবি এখনও জোরালো হয়নি। কিন্তু সেখানেও কনজারভেটিভ পার্টি জাতীয়তাবাদী রাজনীতির চাপে রয়েছে।
অবশ্য লন্ডন এখনও (কনজারভেটিভদের ঘাঁটি) তার চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বজায় রেখে চলার পথেই রয়েছে। অর্থ দানের মাধ্যমে লন্ডন এখনও আধিপত্য ধরে রাখতে চাইছে বাকি ৩ জাতির ওপর। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই জনসন নিজেকে জোট টিকিয়ে রাখার সৈনিক হিসেবে দেখানোর চেষ্টা করে আসছেন। চার জাতির মধ্যে বারবার সমন্বয়ের কথাও তাকে বলতে শোনা গেছে একাধিক বার।
এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের টেরিটোরিয়াল পলিটিকস বিভাগের অধ্যাপক নিকোলা ম্যাকউয়েন সিএনএনকে বলেন, ‘ব্রেক্সিটের কারণে স্বাধীনতার দাবি আরও বেড়েছে। কনজারভেটিভরা যদি নতুন ব্রেক্সিট নীতির অধীনে ইউনিয়নভুক্ত তিন জাতির ওপর অন্যায্য আচরণ করে, তাহলে অর্থনৈতিক ধস থেকে ইউনিয়ন ভেঙে যাওয়া ঠেকানো মুশকিল হয়ে যাবে।’