৪৭ বছরের দীর্ঘ অপেক্ষার প্রহর গুনছে বাংলাদেশ। ২০২৭ এশিয়ান কাপের মূল পর্বে জায়গা করে নেওয়ার স্বপ্নে বিভোর লাল-সবুজের প্রতিনিধিরা। এই স্বপ্ন এখন আর কেবল কল্পনা নয়—বিশ্বের নানা প্রান্তে খেলা হামজা চৌধুরী, শমিত সোম ও ফাহামিদুলদের মতো উদীয়মান তারকাদের নিয়ে গড়া সম্ভাবনাময় দলই জ্বালাচ্ছে আশার আলো। তবে এই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দিতে হলে পেরোতে হবে বড় এক চ্যালেঞ্জ—তৃতীয় রাউন্ডের বাছাইপর্বে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়াই হতে যাচ্ছে প্রথম শর্ত।
এবার যদি লক্ষ্য পূরণ হয়, তাহলে ১৯৮০ সালের পর প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপের মূল পর্বে খেলবে বাংলাদেশ। অবশ্য এটাও সত্য, তৃতীয় রাউন্ডের এই পর্বে বাংলাদেশের সামনে থাকা প্রতিপক্ষরা এশিয়ার শীর্ষ দল নয়—কারণ পরাশক্তিরা এরই মধ্যে মূল পর্বে জায়গা নিশ্চিত করেছে। এখন লড়াই বাকি থাকা ছয়টি টিকিটের জন্য, যেখানে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষরাও খুব একটা এগিয়ে নেই—বিশেষ করে সাম্প্রতিক মাঠের পারফরম্যান্সের বিচারে।
তবে ফিফা র্যাঙ্কিং বলছে ভিন্ন কথা। বাংলাদেশের (১৮৩তম) তুলনায় গ্রুপের তিন প্রতিপক্ষই এগিয়ে—ভারত ১২৭তম, হংকং ১৫৩তম এবং সিঙ্গাপুর ১৬১তম অবস্থানে। তবে র্যাঙ্কিংই যে শেষ কথা নয়, তার প্রমাণ র্যাঙ্কিংয়ে ৫৯ ধাপ এগিয়ে থাকা ভারতের বিপক্ষে মার্চে দুর্দান্ত খেলে ড্র করেছিল বাংলাদেশ। ২০২৭ এশিয়ান কাপ হবে সৌদি আরবে, ফলে স্বাগতিক হিসেবে তারা সরাসরি জায়গা দখল করে নিয়েছে টুর্নামেন্টে।
কীভাবে কাজ করছে বাছাইপর্ব
স্বাগতিক সৌদি আরব তো খেলবেই। অন্য ২৩টি দল বেছে নেওয়া হবে বাছাইপর্ব থেকে। এরই মধ্যে সৌদি আরবসহ ১৮টি দলের নাম চূড়ান্ত হয়ে গেছে।
২০২৬ বিশ্বকাপের এশিয়ান অঞ্চলের বাছাইপর্বের প্রথম দুই রাউন্ড কাজ করেছিল ২০২৭ এশিয়ান কাপের বাছাইপর্ব হিসেবেও। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে এশিয়ার শীর্ষ ২৬টি দল সরাসরি সুযোগ পায় দ্বিতীয় রাউন্ডে। বাংলাদেশসহ ১০টি দল দুই ম্যাচের প্লে–অফ পর্ব পেরিয়ে যোগ দেয় ওই ২৬ দলের সঙ্গে। ৩৬টি দলকে ভাগ করা হয় ৯টি গ্রুপে। ৯ গ্রুপের চ্যাম্পিয়ন ও রানার্সআপ, এই ১৮ দল ওঠে বিশ্বকাপ বাছাইয়ের তৃতীয় রাউন্ডে। স্বাগতিক সৌদি আরবসহ ওই ১৮ দল এশিয়ান কাপেরও টিকিট পেয়ে যায়।
বিশ্বকাপ বাছাইপর্ব থেকে বাদ পড়া দলগুলো আরেকটি সুযোগ পায় এশিয়ান কাপের টিকিট কাটার। দ্বিতীয় রাউন্ডে প্রতিটি গ্রুপে তৃতীয় ও চতুর্থ হওয়া ১৮টি দলের সঙ্গে যোগ হয় একদম প্রথম রাউন্ডে বাদ পড়া ৬টি দল। এই ছয় দলের মধ্যে র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকায় তিনটি দল সরাসরি সুযোগ পেয়েছে তৃতীয় রাউন্ডে। অন্য তিনটি দল বাছাই করা হয়েছে প্লে–অফের মাধ্যমে। বাংলাদেশসহ ২৪টি দলকে ভাগ করা হয় ৬টি গ্রুপে। ৬ গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন যাবে চূড়ান্ত পর্বে।
‘সি’-গ্রুপে বাংলাদেশের সঙ্গে রয়েছে ভারত, হংকং ও সিঙ্গাপুর। র্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকলেও মাঠের লড়াইয়ে বাংলাদেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সামর্থ্য দেখিয়েছে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে খেলা হামজা চৌধুরী ও অন্যান্য প্রবাসী খেলোয়াড়দের আগমনে দলের শক্তি যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে প্রত্যাশাও।
গ্রুপে সবাই একটি করে ম্যাচ খেলে ফেলেছে চার দলই। এর মধ্যে দুটি ম্যাচই ড্র হওয়ায় সবার পয়েন্ট ও গোল ব্যাবধান সমান। তাই মূল পর্বের টিকেট পেতে বাকি সবগুলো ম্যাচে দর্শক প্রত্যাশা পূরণ করে সেরা হয়ে দেখাতে হবে জামাল-হামজাদের।
গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার লক্ষ্যে আজ মঙ্গলবার (১০ জুন) স্থানীয় সময় সন্ধ্যা ৭ টায় নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে সিঙ্গাপুর মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ।
ফুটবলপ্রেমীরা এখন তাকিয়ে আছেন—এই প্রজন্ম কি পারবে সেই ৪৭ বছরের অপেক্ষার অবসান ঘটাতে?