মানুষের মন সদা পরিবর্তনশীল। এই ভালো তো এই মন খারপ। ফুরফুরে মেজাজ থেকে হঠাৎ মুখ গোমরা। দুশ্চিন্তা, হতাশা ঘিরে ধরে, মন অস্থির হয়ে উঠে।
হাদিস শরিফে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘জেনে রাখো, শরীরের মধ্যে একটি গোশতের টুকরা (মুদগা) আছে, তা যখন ঠিক হয়ে যায়, গোটা শরীর তখন ঠিক হয়ে যায়। আর তা যখন খারাপ হয়ে যায়, গোটা শরীর তখন খারাপ হয়ে যায়। জেনে রাখো, সে গোশতের টুকরাটি হলো কলব।’ -(বুখারি, প্রথম খণ্ড, পৃষ্ঠা: ৩৯-৪০)
অর্থাৎ মানুষের মন ঠিক থাকলে পুরো দেহ ঠিক হয়ে যায়। কারণ অন্তর হচ্ছে অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের চালিকা শক্তি। অন্তর ঠিক না থাকলে গোটা দেহ অকেজো হয়ে যায়। তখন সে ভালো জিনিস উপলব্ধি করার বোধ শক্তি হারিয়ে ফেলে। সব কিছু ছেড়ে চলে যেতে চায়।
রাসুল (স.) বলেন, আমি এমন একটি দোয়া সম্পর্কে অবগত আছি— কোনো বিপদগ্রস্ত লোক তা পাঠ করলে, আল্লাহ তাআলা তার সেই বিপদ দূর করে দেন। সেটি হচ্ছে আমার ভাই ইউনুস (আ.)-এর দোয়া।
দোয়াটির বাংলা উচ্চরণ হলো— ‘লা ইলাহা ইল্লা আনতা সুবহানাকা ইন্নি কুনতু মিনাজ জ্বালিমিন।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমি ছাড়া কোনো সত্য উপাস্য নেই; আমি তোমার পবিত্রতা বর্ণনা করছি। নিঃসন্দেহে আমি নিজের প্রতি অবিচার করেছি।’ (তিরমিজি: ৩৫০৫)
চিন্তা ও পেরেশানির সময় একটি বিশেষ দোয়া পড়তেন নবীজি (স.)।
দোয়াটির বাংলা উচ্চারণ হলো— ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজু বিকা মিনাল হাম্মি ওয়াল হুযনি, ওয়া আউজু বিকা মিনাল আজযি ওয়াল-কাসালি, ওয়া আউজু বিকা মিনাল বুখলি ওয়াল জুবনি, ওয়া আউজু বিকা মিন গালাবাতিদ দাইনি ওয়া কাহরির রিজাল।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! নিশ্চয়ই আমি আপনার আশ্রয় নিচ্ছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ থেকে, অপারগতা ও অলসতা থেকে, কৃপণতা ও ভীরুতা থেকে, ঋণের ভার ও মানুষদের দমন-পীড়ন থেকে। আনাস (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুল (স.) চিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় এই দোয়া পড়তেন।’ (বুখারি: ২৮৯৩)
ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবী কারিম (স.) দুশ্চিন্তা, পেরেশানির সময় এই দোয়াটি পড়তেন— ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আযীমুল হালীম,লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রব্বুল আরশিল আযীম, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু রব্বুস সামাওয়াতি ওয়া রব্বুল আরদ্বি ওয়া রব্বুল আরশিল কারীম।’
অর্থ: ‘ওই আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই যিনি মহান এবং সহনশীল, ওই আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই যিনি আরশে আলীমের মালিক, ওই আল্লাহ ছাড়া কোন উপাস্য নেই যিনি আসমান, জমিন এবং মহা আরশের মালিক।’ (মুসলিম: ২০৯২)
অন্য হাদিসে আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রা.) বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যদি কেউ কখনো দুশ্চিন্তা বা বেদনায় আক্রান্ত হয়ে নিচের দোয়াটি পড়ে, তাহলে আল্লাহ তার দুশ্চিন্তা দূর করে দিবেন, বেদনা অপসারণ করে দিবেন। এর বদলে প্রশান্তি আনয়ন করে দিবেন। জিজ্ঞেস করা হলো, ইয়া রাসুলুল্লাহ! আমরা কি দোয়াটি শিখে নিব না? তিনি বললেন: অবশ্যই। যে ব্যক্তি দোয়াটি শুনেছে তার উচিত এটি শিখে নেয়া। ( মুসনাদে আহমদ: ৩৫২৮; সহিহ তারগিব: ১৮২২)
দোয়াটির বাংলা উচ্চারণ হলো— ‘আল্লাহুম্মা ইন্নী আব্দুকা অবনু আব্দিকা অবনু আমাতিকা, না-সিয়াতী বিয়য়াদিকা, মা-দ্বিন ফিইয়্যা হুকমুকা, আদলুন ফিইয়্যা ক্বাদ্বা-উকা, আসআলুকা বিকুল্লিস্মিন হুয়া লাকা সাম্মাইতা বিহী নাফসাকা আউ আনযালতাহূ ফী কিতাবিকা, আউ আল্লামতাহূ আহাদাম মিন খালক্বিকা, আও ইস্তা’সারতা বিহী ফী ইলমিল গাইবি ইন্দাক; আন তাজআলাল ক্বুরআনা রাবীআ ক্বালবী অনূরা সাদরী অজিলাআ হুযনী অযাহাবা হাম্মী।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার বান্দা। আপনার বান্দা ও বান্দীর সন্তান। আমার নসীব আপনার হাতে। আমার উপর আপনার নির্দেশ কার্যকর, আমার প্রতি আপনার ফয়সালা ইনসাফের ওপর প্রতিষ্ঠিত। আমি সেই সমস্ত নামের প্রত্যেকটির বদৌলতে আপনার কাছে কাতর প্রার্থনা জানাই— যে নামগুলো আপনি নিজের জন্য নির্ধারণ করেছেন অথবা নিজ কিতাবে নাজিল করেছেন অথবা আপনার সৃষ্টিজীবের মধ্যে কাউকে শিখিয়ে দিয়েছেন অথবা স্বীয় ইলমের ভাণ্ডারে নিজের জন্য সংরক্ষণ করে রেখেছেন— কোরআনকে আমার হৃদয়ের প্রশান্তি বানিয়ে দিন, আমার বক্ষের জ্যোতি বানিয়ে দিন, আমার দুশ্চিন্তাগুলোর অপসারণকারী বানিয়ে দিন এবং উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার বিদূরণকারী বানিয়ে দিন।’