বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে করোনা সংকট মোকাবিলা যতই জরুরি হোক না কেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কুপ্রভাব রুখতে উদ্যোগে ঢিলেমির পরিণতি মারাত্মক হতে পারে৷ ওয়াশিংটনে পালাবদলের পর অ্যামেরিকা আবার বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে৷ প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের জলবায়ু সংক্রান্ত বিশেষ দূত ও প্রাক্তন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সঙ্গে সমন্বয়ের চেষ্টা চালাচ্ছেন৷ মঙ্গলবার বার্লিনে তিনি জার্মানির নেতাদের সঙ্গে চলমান ও প্রস্তাবিত উদ্যোগ সম্পর্কে আলোচনা করেন৷ প্রেসিডেন্ট ফ্রাংক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার, পররাষ্ট্রমন্ত্রী হাইকো মাস এবং তিন দলের চ্যান্সেলর পদপ্রার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি৷
জলবায়ু পরিবর্তনের কুপ্রভাব মোকাবিলায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রচেষ্টাকে কেন্দ্র করে কিছু বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে৷ বিশেষ করে ‘কার্বন বর্ডার অ্যাডজাস্টমেন্ট মেকলানিজম’ নামের উদ্যোগের আওতায় ইইউ নিজস্ব প্রভাব কাজে লাগিয়ে বাকি বিশ্বের উপর পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি কাজে লাগানোর জন্য চাপ সৃষ্টি করতে চায়৷ অর্থাৎ বিশ্বের সবচেয়ে বড় একক বাজারে নিজস্ব পণ্য বিক্রি করতে হলে অন্যান্য দেশকে কার্বন নির্গমন কমাতে হবে৷ আগামী মাসেই সেই পরিকল্পনা জনসমক্ষে পেশ করা হবে৷ চীন, ব্রাজিল, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকার মতো দেশ এমন চাপের আশঙ্কায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে৷
ওয়াশিংটনেও এমন প্রচেষ্টা নিয়ে কিছু সংশয় দেখা যাচ্ছে৷ যে সব দেশ বড় দূষণকারী সংস্থাগুলির উপর কর চাপায় না, সে সব দেশ থেকে আমদানির উপর আর্থিক জরিমানা চাপানোর সুবিধা-অসুবিধা খতিয়ে দেখছে৷ ইইউ-র সঙ্গে তাল মিলিয়ে এমন শাস্তিমূলক পদক্ষেপ চালু করার ঝুঁকি সম্পর্কে ভালোভাবে ভাবনাচিন্তা করার পক্ষে সওয়াল করেছেন জন কেরি৷ এ ক্ষেত্রে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে সমন্বয়ের প্রয়োজন রয়েছে বলে দুই পক্ষই মনে করে৷ নভেম্বর মাসে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনের আগে গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে আন্তর্জাতিক স্তরে আরও উদ্যোগ নিতে ওয়াশিংটন ও ব্রাসেলসের মধ্যে সমন্বয় দেখা যাবে বলে মনে করেন কেরি৷
জন কেরির মতে, কোনও দেশই ব্যবসা-বাণিজ্য প্রতিষ্ঠানের অসুবিধা চায় না৷ শুধু নিজের দেশের কোম্পানিগুলির উপর কার্বন কর চাপালে আখেরে লাভ হয় না৷ বরং সব দেশ সম্মিলিতভাবে এমন উদ্যোগ নিলে কার্বন নির্গমন কমানো সহজ হবে বলে তিনি মনে করেন৷ সেই লক্ষ্যে তিনি অনেক দেশ সফর করে ঐকমত্য অর্জনের চেষ্টা চালাচ্ছেন৷ কার্বন নির্গমন আরও কমাতে বিশেষ করে চীনের মতো দেশে কয়লার ব্যাপক ব্যবহার কমানো জরুরি বলে তিনি মনে করেন৷ অপেক্ষাকৃত দরিদ্র দেশগুলিকে এই উদ্যোগে সামিল করতে ১০ হাজার কোটি ডলার অংকের বাৎসরিক তহবিলের পক্ষেও সমর্থন প্রকাশ করেছে বাইডেন প্রশাসন৷ উল্লেখ্য, পূর্বসূরি ডনাল্ড ট্রাম্প অ্যামেরিকার চাঁদা আটকে রাখায় ২০২০ সালে সেই লক্ষ্য পূরণ করা সম্ভব হয় নি৷
বিভিন্ন দেশে জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানির ব্যবহার কমাতে সহায়তা হিসেবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন মঙ্গলবার একটি তহবিল গঠনের সিদ্ধান্ত অনুমোদন করেছে৷ ১,৭৫০ কোটি ইউরো অংকের সেই ‘জাস্ট ট্রানজিশন ফান্ড’ কয়লাসহ অন্যান্য ক্ষতিকর জ্বালানির ব্যবহার কমাতে সাহায্য করবে৷ ইইউ ২০৫০ সালের মধ্যেই জীবাশ্মভিত্তিক জ্বালানি ব্যবহার পুরোপুরি বন্ধ করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছে৷
সূত্র: ডয়েচে ভেলে।