করোনাকালে স্বাস্থ্যবিধি মেনেই ‘ফ্রেমে ফ্রেমে আগামী স্বপ্ন’ স্লোগানে প্রতিবছরের ধারাবাহিকতায় এবারও শুরু হলো ‘আন্তর্জাতিক শিশু চলচ্চিত্র উৎসব ২০২১’। চিলড্রেন’স্ ফিল্ম সোসাইটি বাংলাদেশের আয়োজনে শিশুদের এ চলচ্চিত্র উৎসবের এটি উৎসবের ১৪তম আসর।
শনিবার (৩০ জানুয়ারি) বিকেলে কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের উন্মুক্ত চত্বরে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের ১ম পর্বে জাতীয় সংগীতের সঙ্গে পতাকা উত্তোলন এবং উদ্বোধনী সংগীতের সঙ্গে পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে উৎসবের উদ্বোধন হয়। উৎসবের উদ্বোধন করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ ও বিশেষ অতিথি সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ।
উৎসবের উদ্বোধন করে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘শিশুদের সুপ্ত প্রতিভা, শিশুদের স্বপ্ন, দেশ ও মাতৃকাকে এগিয়ে নিতে চলচ্চিত্র গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম আগামী প্রজন্ম আমাদের দেশের চলচ্চিত্রকে এগিয়ে নিবে আমি আশাবাদী, । আমি আশাবাদী এই উৎসব থেকে অনেক প্রতিভা বেরিয়ে আসবে।’
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ বলেন, ‘শিশুদের এই অসাধারন আয়োজন করেছে শিশুরাই, শিশুদের এই আয়োজন দেখে আমি বিস্মিত হয়েছি।’
এরপর কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের পর শুরু হয় উৎসবের উদ্বোধনী আয়োজনের ২য় পর্ব। এতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন চিলড্রেন’স ফিল্ম সোসাইটি বাংলাদেশের অনুষ্ঠান সম্পাদক রায়ীদ মোরশেদ মনন এবং উৎসব সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরেন উৎসব পরিচালক ফারিহা জান্নাত মিম।
উদ্বোধনী আয়োজন শেষে প্রদর্শিত হয় মার্তা কারভোসকা পরিচালিত পোলিশ চলচ্চিত্র ‘ট্রিপল ট্রাবল’।
উৎসব বিষয়ে উৎসবের পরিচালক ফারিহা জান্নাত মিম জানান, এবারের উৎসবে ঢাকার মোট ৩টি ভেন্যুতে ৩৭টি দেশের ১৭৯টি শিশুতোষ চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পরদিন থেকে শাহবাগের কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান মিলনায়তনে ৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এবং জাতীয় জাদুঘরের সুফিয়া কামাল মিলনায়তন ও বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় চিত্রশালা মিলনায়তনে ৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ১১টা, দুপুর ২টা, বিকেল ৪টা ও সন্ধ্যা ৬টায়; মোট ৪ বার চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে।
উৎসবের সকল প্রদর্শনী শিশু-কিশোরদের পাশাপাশি অভিভাবকদের জন্য উন্মুক্ত। সিনেমা দেখার জন্য কোনো ধরনের প্রবেশমূল্য না থাকলেও এ বছর করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) এর কারণে মাস্ক পরিধানকে চলচ্চিত্র উৎসবের টিকেট হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। পুরো উৎসবটি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রদত্ত স্বাস্থ্য বিধি মেনে পরিচালনা করা হচ্ছে।
উৎসবের অন্যতম আকর্ষণীয় বিভাগ হিসেবে থাকছে বাংলাদেশি শিশুদের নির্মিত প্রতিযোগিতা বিভাগ। এই বিভাগে ৬১টি চলচ্চিত্রের মধ্যে নির্বাচিত ১৯টি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হবে। এই ১৯টি চলচ্চিত্রের মধ্যে ৫টি চলচ্চিত্র পুরস্কার পাবে। পুরস্কারের জন্য গঠিত ৫ সদস্যের জুরি বোর্ডের সবাই শিশু-কিশোর। ‘ইয়ং বাংলাদেশি ট্যালেন্ট’ শীর্ষক বিভাগে ১৯ থেকে ২৫ বছর বয়সী তরুণ নির্মাতারা অংশ নিবেন। স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষ্যে রয়েছে ‘মুক্তির চলচ্চিত্র’ শিরোনামে বিশেষ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী বিভাগ। একইসঙ্গে রয়েছে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা বিভাগ। এ বিভাগে জমা পড়েছিলো ৮১টি দেশের ১১১৬টি চলচ্চিত্র, যার মধ্যে উৎসব কমিটির দ্বারা প্রদর্শনী ও প্রতিযোগিতার জন্য নির্বাচিত হয়েছে বাংলাদেশসহ অন্যান্য ৩৭টি দেশের মোট ১১৬টি চলচ্চিত্র।
প্রতিবছরের মতো এবারও এ উৎসবে বিভিন্ন দেশের শিশুদের বানানো চলচ্চিত্র নিয়ে থাকছে প্রতিযোগিতা বিভাগ। যেখান থেকে একটি চলচ্চিত্রকে পুরস্কার দেয়া হবে। বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে নতুন একটি সামাজিক চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতা বিভাগ রাখা হয়েছে ‘নিউনরমাল’ শিরোনামে। এছাড়াও উৎসবে প্রতিনিধিদের জন্য বিভিন্ন কর্মশালা ও সেমিনারের আয়োজন করা হয়েছে। এবার মোট ৪টি কর্মশালা অনুষ্ঠিত হবে, পরিচালনা ও সিনেমাটোগ্রাফির উপর কর্মশালা নিবেন অমিতাভ রেজা চৌধুরী ও তাহসিন রহমান, স্ক্রিপ্ট রাইটিং এর উপর কর্মশালা নিবেন সাদিয়া খালিদ রীতি, প্রোডাকশন ডিজাইনের উপর কর্মশালা নিবেন রঞ্জন রাব্বানী, ফেস্টিভ্যাল সার্কিট সম্পর্কে কর্মশালা নিবেন আবু শাহেদ ইমন। এছাড়া শিশু-তরুণ প্রতিনিধিদের সঙ্গে অন্তরঙ্গ আড্ডায় উপস্থিত থাকবেন মুক্তিযোদ্ধা লেফটেনেন্ট র্কনেল (অব.) কাজী সাজ্জাদ আলী জহির বীরপ্রতীক, মো. মাশরুকুল হক এবং মারুফা মাশরুক। সেলিব্রেটি আড্ডায় থাকছেন প্রথম বাংলাদেশি নারী এভারেস্টজয়ী পর্বতারোহী নিশাত মজুমদার। এছাড়া থাকছেন সংগীত শিল্পী সায়ান চৌধুরী অর্ণব ও সুনিধি নায়েক।