চার বছর আগে নিউইয়র্ক থেকে পরিবারসহ ওয়াশিংটনে এসেছিলেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মেয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্প ও জামাতা জ্যারেড কুশনার। দুজনই ভেবেছিলেন- ট্রাম্পের হোয়াইট হাউসে থাকার বছরগুলো তাদের ভবিষ্যতের প্রত্যাশা পূরণে সহায়ক হবে। কুশনারের স্বপ্ন- বিশ্ব রাজনীতিতে একজন শক্তিশালী খেলোয়াড় হয়ে ওঠা। অপরদিকে, ইভাঙ্কা নিজেই একদিন প্রেসিডেন্ট হয়ে হোয়াইট হাউসে আসতে চান।
গতকাল শুক্রবার সিএনএনে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, নির্বাচনে ট্রাম্পের পরাজয়, ক্যাপিটল হাউজে হামলা ও দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসনের পর নিজেদের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে অনেকটাই চিন্তিত এই দম্পতি। প্রকাশ্যেই ক্ষমতার প্রতি তাদের ভালোবাসার কথা বলে থাকেন ইভাঙ্কা ও কুশনার। তাদের বিয়ে ঠিক হওয়ার পর ইভাঙ্কা এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘তিনি জানতেন যে, কুশনারই সেই ব্যক্তি যার সঙ্গে তার স্বপ্ন মিলে যায়।’
২০০৯ সালে নিউইয়র্ক ম্যাগাজিনকে ইভাঙ্কা বলেন, ‘জ্যারেড ও আমার মধ্যে অনেক মিল। আমরা দুজনই উচ্চাকাঙ্ক্ষী। সে সবসময়ই আমার পাশে ছিল আর এটাই আমাদের সম্পর্ককে দুর্দান্ত করে তুলেছে।’ উচ্চাকাঙ্ক্ষী এই দম্পতি এখন ট্রাম্পের প্রেসিডেন্সির লজ্জাজনক সমাপ্তি দেখছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল হিলে এখনও খুঁজে পাওয়া যায় নাশকতার ছাপ। হাজার হাজার ন্যাশনাল গার্ড সদস্য শহরটিকে ঘিরে রেখেছেন। হামলায় উস্কানি দেওয়ার অভিযোগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো অভিশংসিত হয়েছেন। টুইটারসহ জনপ্রিয় সব সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো তার অ্যাকাউন্ট বন্ধ করেছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, রাজনীতিতে স্বপ্ন পূরণের জন্য ইভাঙ্কা ট্রাম্প ও জ্যারেড কুশনারকে এই লজ্জাজনক পরিণতিকে ঘুরিয়ে দিতে হবে।
হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তার কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, ‘ইভাঙ্কা ওয়াশিংটনে এসেছিলেন দেশকে কিছু দিতে। কারণ, দেশ তাকে অনেক কিছু দিয়েছে। তিনি কর্মঠ আমেরিকান পরিবারগুলোকে সাহায্য করতে নীতিমালা নিয়ে লড়েছেন। চার বছরেরও বেশি সময় ধরে তিনি এমন কিছু নীতিমালার নেতৃত্ব দিয়েছেন, যা চাকরির সুযোগ তৈরি করেছে, আমেরিকান শ্রমিকদের ক্ষমতায়ন করেছে, অভাবে থাকা পরিবারগুলোর কাছে খাবার পৌঁছে দিয়েছে, এমনকি মহামারির সময় ছোট ছোট ব্যবসাগুলোকে সহায়তা দিয়েছে। ইভাঙ্কা তার সেবার জন্য গর্বিত এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে উচ্ছ্বসিত।’
হোয়াইট হাউসের শেষ দিনগুলোতে এই দম্পতি প্রেসিডেন্টকে বিভিন্ন উপদেশ দিয়েছেন। হোয়াইট হাউসের এক কর্মকর্তা জানান, অন্য অনেকের পাশাপাশি ইভাঙ্কাও তার বাবাকে টুইটারে ভিডিও পোস্ট করতে চাপ দিয়েছিলেন।
এরপরই ডোনাল্ড ট্রাম্পের অ্যাকাউন্ট স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ হয়। ভিডিওতে তিনি সমর্থকদের ‘বাড়ি ফিরে যেতে’ বলেন। ভিডিওর শেষে তিনি বলেন, ‘আমরা আপনাদের ভালোবাসি’।
গত সপ্তাহে ক্যাপিটল হিলে হামলার দিন ওয়েস্ট উইংয়ের কার্যালয়ে ইভাঙ্কা ট্রাম্পকে অনেকেই ফোন করেন। ক্যাপিটল হিলে অস্ত্র নিয়ে ঢোকা হামলাকারীর কাছ থেকে বাঁচতে লুকিয়ে থাকা রাজনীতিবিদরা তাকে ফোন করেন।
রিপাবলিকান সিনেটর লিন্ডসি গ্রাহাম হামলাকারীদের থামানোর জন্য ইভাঙ্কাকে ফোন করে অনুরোধ করেন। ওই কথোপকথন সম্পর্কে জানেন এমন একজন সিএনএনকে জানান, গ্রাহাম সেদিন ইভাঙ্কাকে ফোন করে তার বাবার সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলার জন্য অনুরোধ করেছিলেন। প্রথম ভিডিওর পর ব্যাপক সমালোচনা ও অভিশংসনের প্রেক্ষিতে ইভাঙ্কা ট্রাম্পই প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে আরেকটি ভিডিও প্রকাশের জন্য চাপ দিয়েছিলেন।
ওই ভিডিও বার্তায় সমর্থকদের শান্ত থাকার আহ্বান জানান ট্রাম্প। তিনি বলেন, ‘আমরা গত সপ্তাহে যে সহিংসতা দেখেছি, আমি স্পষ্টভাবে তার নিন্দা জানাই। আমাদের দেশে সহিংসতা ও ভাঙচুরের কোনো জায়গা নেই এবং আমাদের আন্দোলনেও এর কোনো জায়গা নেই।’
ওই ভিডিওটি প্রেসিডেন্টকে সম্ভাব্য আইনি লড়াই থেকে বাঁচাতে সাহায্য করতে পারে বলে মনে করছেন অনেক বিশেষজ্ঞ। বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর অন্যান্য কর্মকর্তারা যখন চরমপন্থীদের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে পরিচিত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে (যেমন: গ্যাব) প্রেসিডেন্টের অ্যাকাউন্ট উদ্ধারের চেষ্টা করছিলেন, তখন জ্যারেড কুশনার তাদের বাধা দেন।
ইভাঙ্কা ট্রাম্প ও জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে কাজ করেছেন এমন একটি সূত্র জানায়, সম্ভবত তাদের প্রিয় অর্থোপার্জনের মাধ্যম ‘ট্রাম্প ব্র্যান্ড’ এর পরিণতি নিয়ে ভয় থেকেই শেষ সময়ে প্রেসিডেন্টকে উপদেশ দেওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন।
পরিচয় প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, ‘তারা (ইভাঙ্কা ও জ্যারেড) ট্রাম্প ব্র্যান্ডের সামান্য যা অবশিষ্ট আছে, তা বাঁচানোর চেষ্টা করছেন। এ কারণেই “বিদ্রোহের আগে” ট্রাম্পের যে সুর ছিল, তা এখন পাল্টেছে।’
ইভাঙ্কা ট্রাম্প, তার ভাই ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র ও এরিক ট্রাম্পের কথা উল্লেখ করে এক সূত্র জানায়, ‘পরিবারটি এখন ভীষণ চিন্তিত। এর প্রমাণ- তাদের চুপ থাকা।’
ট্রাম্প কন্যা ইভাঙ্কার প্রেসিডেন্ট হওয়া এবং কুশনারের বিশ্ব রাজনীতিতে প্রভাবশালী হয়ে উঠতে চাওয়ার স্বপ্ন পূরণ হওয়া এখন অসম্ভব হয়ে উঠেছে কি না, জানতে চাইলে এক রিপাবলিকান রাজনৈতিক কর্মী বলেন, ‘তার বাবা যে ক্যাপিটলে হামলায় প্ররোচনা দিয়েছে, এটা মানুষের মন থেকে মুছে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। যদি ইভাঙ্কা ভবিষ্যতের ভোটারদের মন থেকে এই ধ্বংসাত্মক পরিণতি ভোলাতে চান, তাহলে তাকে আরও অনেক উঁচুতে নিজেকে নিয়ে যেতে হবে।’
জো বাইডেন ক্ষমতায় আসার পর ইভাঙ্কা-জ্যারেড দম্পতির ফ্লোরিডায় চলে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। গুঞ্জন আছে, ২০২২ সালে ফ্লোরিডার রিপাবলিকান সিনেটর মারকো রুবিওকে চ্যালেঞ্জ জানাতে পারেন ইভাঙ্কা ট্রাম্প। ক্যাপিটলে হামলার আগে সেখানে তার ব্যাপক জনপ্রিয়তাও ছিল।
এ প্রসঙ্গে টাম্পা বে টাইমসের সাবেক সম্পাদক জানান, এখনও ফ্লোরিডায় জেতার সম্ভাবনা আছে ইভাঙ্কা ট্রাম্পের। সেখানকার মানুষ বেশ ক্ষমাশীল। তবে ইভাঙ্কা হয়তো আগামী বছর নির্বাচন না করে সাত বছর পরে করতে পারেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি নিজের ভাবমূর্তি তুলে ধরতে পারবেন, আরও ক্ষমতাবান হয়ে উঠতে পারবেন। ইভাঙ্কা ট্রাম্প তার কাজ নিয়ে ভীষণ আত্মবিশ্বাসী।