spot_img

বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন, তবে আশাহীন নই: অমর্ত্য সেন

অবশ্যই পরুন

বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ভারতের নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। তিনি বলেছেন, “বাংলাদেশের পরিস্থিতি আমাকে ব্যথিত করেছে। আমি উদ্বিগ্ন, তবে আশাহীন নই।” একইসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে হবে।

সম্প্রতি শান্তি নিকেতনে নিজ পৈতৃক বাড়িতে ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন অমর্ত্য সেন।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের পরিস্থিতি আমাকে গভীরভাবে প্রভাবিত করেছে, কারণ আমার মধ্যে শক্তিশালী বাঙালি পরিচয় রয়েছে। আমি ঢাকায় দীর্ঘ সময় কাটিয়েছি, সেখানেই আমার শিক্ষাজীবন শুরু হয়। ঢাকা ছাড়াও আমার পূর্ব পুরুষের ভিটা মানিকগঞ্জে প্রায়ই যেতাম। মায়ের দিক দিয়ে বিক্রমপুরের সোনারঙেও গিয়েছি। এই জায়গাগুলো আমার কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।’

শৈশবে তিনি ঢাকার সেন্ট গ্রেগরি স্কুলে পড়াশোনা শুরু করেন, পরে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শান্তিনিকেতন স্কুলে ভর্তি হন এবং সেখানেই শিক্ষাজীবন চালিয়ে যান।

বাংলাদেশের রাজনীতি ও ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে অমর্ত্য সেন জানান, বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতা বজায় রাখা জরুরি এবং অতীতে ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল জামায়াতে ইসলামীকে নজরদারিতে রাখা হয়েছিল। তিনি বলেন, ‘আমি চাই বাংলাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা অব্যাহত থাকুক।’

গত বছরের ৫ আগস্ট বাংলাদেশে ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন। দেশব্যাপী সংঘর্ষ ও গুলিবর্ষণের ঘটনার কারণে অনেকেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি তুলেছেন। তবে অমর্ত্য সেন এই দৃষ্টিভঙ্গির বিরোধী।

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে দলীয়ভাবে একসঙ্গে কাজ করার যে ধারা আছে, সেটি বজায় রাখা উচিত। কোনো নির্দিষ্ট দলকে একপাশে ঠেলে দেওয়া উচিত নয়। আমি আশা করি, বাঙালির স্বাধীনতা ও বহুত্ববাদ বজায় থাকবে এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচন অতীতের চেয়ে আরও নিরপেক্ষ হবে।’

প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সম্পর্কে জানতে চাইলে অমর্ত্য সেন বলেন, ‘তিনি আমার পুরোনো বন্ধু এবং অত্যন্ত দক্ষ ব্যক্তি। তিনি বাংলাদেশের গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা নিয়ে শক্তিশালী বার্তা দিয়েছেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘যখন কেউ হঠাৎ করে রাষ্ট্রক্ষমতায় আসে, তখন তাকে নানা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়। ড. ইউনূসও একই পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছেন। আপনাকে অবশ্যই বিভিন্ন দল বিবেচনা করতে হবে। কারণ সেখানে ইসলামিক দল রয়েছে, হিন্দু দলও আছে। তবে আমি বিশ্বাস করি, ড. ইউনূস তার দক্ষতা দিয়ে এই চ্যালেঞ্জগুলো সফলভাবে মোকাবেলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।’

সংখ্যালঘুদের পরিস্থিতি নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে প্রচারণার বিষয়ে মন্তব্য করতে গিয়ে অমর্ত্য সেন বলেন, ‘সংখ্যালঘু ইস্যুটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ বরাবরই সংখ্যালঘুদের ন্যায্য অধিকারের ব্যাপারে সচেতন এবং জামায়াতের মতো দলগুলোকে নজরদারিতে রাখে। তবে দুঃখজনকভাবে, ভারতেও মসজিদে হামলার ঘটনা ঘটে। এ ধরনের হামলা, হোক বাংলাদেশ বা ভারত, বন্ধ হওয়া উচিত।’

অমর্ত্য সেন বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর ভূমিকার প্রশংসা করে বলেন, ‘অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে সেনাবাহিনী রাষ্ট্রক্ষমতা দখলের চেষ্টা করেনি, যা অত্যন্ত ইতিবাচক।’

অমর্ত্য সেন মনে করেন, বাংলাদেশ কঠিন সময় পার করলেও এখনো আশার আলো রয়েছে। তিনি বলেন, ‘আমি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন, তবে আশাহত হইনি।’

সর্বশেষ সংবাদ

শেখ হাসিনা স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন

রাজধানীর পূর্বাচলে নির্মানাধীন শেখ হাসিনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। ভেন্যুটির নতুন নাম রাখা হয়েছে ন্যাশনাল ক্রিকেট...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ