মুমিন তার আর্থিক ভবিষ্যতরে ব্যাপারে উদাসীন হবে না, বরং সে মিতব্যয় ও মধ্যপন্থার সঙ্গে এমনভাবে জীবনযাপন করবে যেন ভবিষ্যতে তাকে সংকটে পড়তে না হয়। মহান আল্লাহ বলেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় কোরো; প্রত্যেকেই ভেবে দেখুক আগামীকালের জন্য সে কী অগ্রিম পাঠিয়েছে। আর তোমরা আল্লাহকে ভয় কোরো। তোমরা যা কোরো আল্লাহ সে সম্পর্কে অবহিত।’ (সুরা হাশর,আয়াত : ১৮)
সাদ (রা.)-কে অসুস্থ অবস্থায় দেখতে যান মহানবী (সা.)। তখন তিনি তাঁকে বলেন, ‘তোমার পরিবার-পরিজনকে যদি তুমি সম্পদশালী রেখে যাও অথবা বলেছেন স্বাচ্ছন্দ্যে রেখে যাও, তাহলে তা তাদের মানুষের কাছে হাতপাতা অবস্থায় রেখে যাওয়ার তুলনায় উত্তম। আর এ কথা বলতে বলতে তিনি নিজ হাত দিয়ে ইশারা করেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৪১০৭)
আর্থিক অনটনের ব্যাপারে সতর্কতা কাম্য
মহানবী (সা.) ভবিষ্যত দারিদ্র্যের ব্যাপারে সতর্ক করে বলেছেন, ‘দারিদ্র্য মানুষকে কুফরি নিকটবর্তী করে দেয়।’ ইমাম গাজালি (রহ.) উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেছেন, ‘অভাবের কারণে মানুষ কুফরিতে লিপ্ত হওয়ার উপক্রম হয়। কেননা অভাব তাকে ধনীদের প্রতি হিংসায় লিপ্ত করবে। আর হিংসা পুণ্যকে ধ্বংস করে। দীন-হীন অবস্থায় পড়লে মানুষ মন-মানসিকতা নষ্ট হয়। ফলে তার দ্বিন পালনের আগ্রহ হারিয়ে যায়। এছাড়া দারিদ্র্যের কারণে মানুষের মনে আল্লাহ কর্তৃক বণ্টিত জীবন-জীবিকা ও ভাগ্যের প্রতি অসন্তোষ সৃষ্টি হতে পারে। এজন্য সুফিয়ান সাওরি (রহ.) বলতেন, ‘মৃত্যুর সময় আমার সঞ্চয়ে ৪০ হাজার দিনার থাকা অধিক পছন্দনীয় একদিনের দারিদ্র্য ও মানুষের কাছে হাতপাতার চেয়ে।’ (ফয়জুল কাদির : ৪/৬৮৬)
আর্থিক সংকট থেকে বাঁচতে করণীয়
১. অর্থ ব্যয়ে ভারসাম্য অপরিহার্য : ইসলাম সম্পদ ব্যয়ে ভারসাম্য রক্ষার নির্দেশ দিয়েছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি তোমার হাত তোমার গ্রীবায় আবদ্ধ করে রেখো না এবং তা সম্পূর্ণ প্রসারিতও কোরো না, তা হলে তুমি তিরস্কৃত ও নিঃস্ব হয়ে পড়বে।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৯)
২. অপচয় ও অপব্যয় নিষিদ্ধ : ইসলাম অপচয় ও অপব্যয়কে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা খাও ও পান কোরো; অপচয় কোরো না, নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীকে ভালোবাসেন না।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৩১)
৩. ধনীদের রয়েছে মানবিক দায় : নিজ প্রচেষ্টায় সব মানুষ বিপর্যয় থেকে বাঁচতে পারে না। তাই সামাজিক সুরক্ষায় ধনীদের দায়িত্ব রয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘আত্মীয়-স্বজনকে দেবে তার প্রাপ্য এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও এবং কিছুতেই অপব্যয় কোরো না।’ (সুরা বনি ইসরাইল, আয়াত : ২৬)
৪. জীবিকার অনুসন্ধান করা : কর্মতত্পর মানুষ সাধারণ জীবন-জীবিকার সংকট থেকে বেঁচে থাকে। পবিত্র কোরআনে তাদের প্রশংসায় ইরশাদ হয়েছে, ‘অপর লোকেরা পৃথিবীতে বিচরণ করে আল্লাহর অনুগ্রহ (জীবিকা) অনুসন্ধান করে।’ (সুরা মুজ্জাম্মিল, আয়াত : ২০)
৫. সম্পদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা : সম্পদ ধ্বংস হয় এমন সব কাজ থেকে আল্লাহ বিরত থাকার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমাদের সম্পদ, যা আল্লাহ তোমাদের জন্য উপজীবিকা করেছেন তা নির্বোধ মালিকদের হাতে অর্পণ কোরো না।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৫)
৬. আল্লাহর কাছে দোয়া করা : রাসুলুল্লাহ (সা.) প্রত্যেক নামাজের পর দোয়া করতেন, ‘হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে কুফরি, দারিদ্র ও কবরের শাস্তি থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ১৩৪৭)
ভবিষ্যত রক্ষার জন্য অন্যায় নয়
ইসলাম আর্থিক সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সতর্ক থাকতে বললেও মানুষকে অন্যায়ভাবে উপার্জনের অনুমতি দেয় না। বিশেষ করে হারাম উপার্জনের মাধ্যমে সম্পদ গড়তে নিষেধ করে। কেননা হারাম উপার্জনের কারণে আল্লাহ মানুষের ওপর ক্রোধান্বিত হন। ফলে মানুষের ভবিষ্যত নষ্ট হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘এমন কিছু মানুষ রয়েছে যারা অন্যায়ভাবে আল্লাহ প্রদত্ত সম্পদে ডুবে থাকে। কিয়ামতের দিন তাদের জন্য জাহান্নামের আগুন।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৩১১৮)
আল্লাহ সবাইকে প্রশস্তির জীবন দান করুন। আমিন।