বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র ও পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর (৩৮) জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। এসময় তার পক্ষ হয়ে জেরা করেছেন ৫১ জন আইনজীবী।
মঙ্গলবার বেলা পৌনে ১২টার দিকে চট্টগ্রাম ৬ষ্ঠ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক কাজী শরীফুল ইসলাম চিন্ময়কে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে সকাল ১১টার দিকে তাকে আদালতে হাজির করা হয়।
আইনজীবী স্বরূপ কান্তি নাথ বলেন, অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর জামিন আবেদন করা হয়েছিল। আদালত শুনানি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন।
তিনি আরো বলেন, চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীর পক্ষের আইনজীবীরা ধর্মীয় রীতিনীতি পালন ও খাদ্য অভ্যাস অনুযায়ী খাবার, কারাগারে চিকিৎসা ও কারাগারে ডিভিশনের আবেদন করেন। আদালত শুনানি শেষে তিনটি আবেদন মঞ্জুর করেন।
গতকাল সোমবার বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ও চট্টগ্রামের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে রাজধানীর বিমানবন্দর এলাকা থেকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ।
গত ৩১ অক্টোবর বিএনপি নেতা ফিরোজ খান (পরে বহিষ্কৃত) চট্টগ্রামের কোতোয়ালি থানায় মামলাটি দায়ের করেন।
এ মামলায় চিন্ময় দাসসহ ১৯ জনকে আসামি করা হয়। মামলার আসামিরা হলেন পুণ্ডরীক ধাম মন্দিরের অধ্যক্ষ চন্দন কুমার ধর প্রকাশ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী, চট্টগ্রামের হিন্দু জাগরণ মঞ্চের সমন্বয়ক অজয় দত্ত (৩৪), নগরীর প্রবর্তক ইসকন মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলা রাজ দাশ ব্রহ্মচারী (৪৮), গোপাল দাশ টিপু (৩৮), ডা. কথক দাশ (৪০), প্রকৌশলী অমিত ধর (৩৮), রনি দাশ (৩৮), রাজীব দাশ (৩২), কৃষ্ণ কুমার দত্ত (৫২), জিকু চৌধুরী (৪০), নিউটন দে ববি (৩৮), তুষার চক্রবর্তী রাজীব (২৮), মিথুন দে (৩৫), রুপন ধর (৩৫), রিমন দত্ত (২৮), সুকান্ত দাশ (২৮), বিশ্বজিৎ গুপ্ত (৪২), রাজেশ চৌধুরী (২৮) এবং হৃদয় দাস (২৫)।
একই মামলায় অজ্ঞাতনামা আরো ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। মামলার পরই দু’জনকে গ্রেফতার করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। তারা হলেন রাজেশ চৌধুরী ও হৃদয় দাশ।
মামলায় অভিযোগ করা হয়, গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হওয়ার পর নগরের নিউমার্কেট মোড়ের জিরো পয়েন্টে স্তম্ভের ওপর বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতা একটি জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে, যা এখনো সেখানে রয়েছে।
গত ২৫ অক্টোবর বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চের উদ্যোগে লালদীঘির মাঠে একটি মহাসমাবেশ হয়। চট্টগ্রাম বিভাগের বিভিন্ন এলাকা থেকে হাজারো মানুষ ওই সমাবেশে যোগ দেন।
ওইদিন চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীসহ নয়জন আসামির ইন্ধনে বাকি আসামিরা নিউমার্কেট মোড়ের জিরো পয়েন্ট স্তম্ভ ও আশপাশে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ওপর ধর্মীয় গোষ্ঠী ইসকনের গেরুয়া রঙের ধর্মীয় পতাকা উত্তোলন করে সেখানে স্থাপন করে দেয়। এ নিয়ে সাধারণ নাগরিকদের ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়।
সম্প্রতি বাংলাদেশ সনাতন জাগরণ মঞ্চ ও বাংলাদেশ সম্মিলিত সংখ্যালঘু জোট নামে দু’টি সংগঠন ‘বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের’ ব্যানারে কর্মসূচি পালন শুরু করে। নতুন এই জোটের মুখপাত্র করা হয় চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে। কয়েক দিন এই জোট আট দফা দাবিতে রংপুরে সমাবেশ করেছে।
সংগঠনের শৃঙ্খলাবিরোধী কার্যকলাপের কারণে চিন্ময় কৃষ্ণ দাসসহ আরো কয়েকজনকে গত জুলাই মাসে ইসকন থেকে বহিষ্কার করা হয়।
চট্টগ্রামের হাজারি গলির ঘটনা প্রসঙ্গে গত ৯ নভেম্বর রাজধানীর স্বামীবাগ ইসকন আশ্রমে ‘ইসকন বাংলাদেশ’ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের বক্তব্যে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক চারু চন্দ্র দাস ব্রহ্মচারী এ কথা জানান।
সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে ইসকনের যাবতীয় কার্যক্রম থেকে চট্টগ্রামের পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস, প্রবর্তক শ্রীকৃষ্ণ মন্দিরের অধ্যক্ষ লীলারাজ গৌরদাস ও সদস্য স্বতন্ত্র গৌরাঙ্গ দাসকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছিলেন তিনি।
বহিষ্কৃতদের মাধ্যমে সংঘটিত কোনো কার্যক্রম ইসকন জড়িত নয় বলে উল্লেখ করে সেদিন তিনি বলেছিলেন, রাষ্ট্রদ্রোহিতা বা সহিংসতার মতো বেআইনি কাজের সাথে ইসকনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।
সূত্র : বাসস