ভারতের পশ্চিমবঙ্গের নন্দীগ্রামের নির্বাচনে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এখনও হারেননি বলে মন্তব্য করেছেন বিজেপি নেত্রী অধ্যাপক বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। নন্দীগ্রামে মমতার পরাজয় প্রসঙ্গে বৈশাখী বলেন, ‘মমতার হারকে হার হিসেবে দেখছি না। উনি ২৯৪ আসনেই প্রার্থী। একটা সিটে লড়েছেন। নন্দীগ্রামে গণনায় বিভ্রান্তি হয়েছে, ম্যানিপুলেশনের অভিযোগ উঠেছে। নন্দীগ্রামের সংগ্রামের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে যুক্ত তিনি। ওরা আদালতে যাবে বলেছে, সুতরাং আদালত যতক্ষণ না কোনও রায় দিচ্ছে, ততক্ষণ সংখ্যাতত্ত্বের নিরিখে এটাকে হার হিসেবে মানছি না। কিন্তু, নন্দীগ্রামে দাঁড়িয়ে লড়েছেন, এই সিদ্ধান্তই ওঁকে জয়ী করেছেন। হয়তো আবেগের সিদ্ধান্ত। আবেগের অপর নাম মমতা।’ ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়ান টাইমসের এইসময়কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন।
এবারের নির্বাচনের আগে তিনি তৃণমূল কংগ্রেস থেকে বিজেপিতে যোগ দিয়েছিলেন। কিন্তু দলের মনোনয়ন তিনি পাননি। এ নিয়ে বিজেপির প্রতি তার অভিমান রয়েছে। এ নিয়ে মিডিয়ার সামনে প্রকাশ্যে কথাও বলেছেন।
নির্বাচনের ফলের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের প্রতি সুর বদল করলেন বৈশাখী। ফল ঘোষণার পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দরাজ প্রশংসা করলেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়। বৈশাখী বললেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমার ও শোভনবাবুর পক্ষ থেকে অনেক অভিনন্দন। উনি সুশাসক। ওঁর কাছে আমি কৃতজ্ঞ।’
তৃণমূলে ফেরা প্রসঙ্গে বৈশাখী বলেন, ‘রাজনীতিতে সম্ভাবনার শিল্প। আগামী দিনে কী করতে চলেছি,তা সকলেই জানতে পারবেন। শোভনবাবু একমাত্র নেতা, যিনি তৃণমূল ছড়ার পর দিনই বিজেপিতে যোগদান করেননি। তৃণমূল ছেড়েছিলেন আদর্শ-নীতির ভিত্তিতে। বিজেপিকে বেছে নিয়েছিলেন। কিন্তু, সুষ্ঠু কাজ করার পরিবেশ পাননি, তাই সরে এসেছেন। শোভনবাবু সিদ্ধান্ত নেন নীতি আদর্শের ভিত্তিতে। শোভনবাবু আবেগের মানুষ। তাই তিনি যা সিদ্ধান্ত নেবেন, তাতে সমর্থন করব। মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন হচ্ছি না।’
বৈশাখী বলেন, ‘মানুষ যাদের ভোট দিয়ে ক্ষমতায় এনেছেন, তাদের অভিনন্দন। মানুষের রায় শিরোধার্য। যে মার্জিনে উনি জিতেছেন, অসুস্থ অবস্থায় জিতেছেন, সেটার জন্য ওঁকে অভিবাদন।’
মমতার প্রশংসা করে বৈশাখী আরও বলেন, ‘মমতার কাছে আমরা ব্যক্তিগতভাবে কৃতজ্ঞ, শোভনবাবু মন্ত্রী ছাড়ার পরও তিনি কিন্তু, একবারও মনে করেননি শোভন বিজেপিতে গিয়েছেন বলে নিরাপত্তা তুলে নেবেন। মমতা সুশাসক।’
বৈশাখী বলেন, ‘দলনেত্রী তো গড়েন, ভাঙেন তো না। গড়ার লক্ষ্যে যা যা করণীয় করেছেন। শোভনবাবু ফিরে যাওয়ার ভাবনাচিন্তা করছেন বলে খবর নেই। ফিরে যায়ার জায়গা সংকুচিত হয়েছে।’
যে কারণে বিজেপির হার
সাক্ষাৎকারে বৈশাখী পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির ভরাডুবির কারণও ব্যাখ্যা করেছেন। বৈশাখী বলেন, ‘বিজেপি কর্মীদের সততা নিয়ে সন্দেহ নেই। কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ভূমিকা নিয়েও সন্দেহ নেই। বাংলায যারা মাথা ছিলেন, তারা গ্রাউন্ড রিয়েলিটির থেকে অনেকটা দূরে ছিলেন। কর্মীদের কোন পথে পরিচালনা করলে জয় আসবে, সেদিকে বিজেপি নেতারা ওভারলুক করায় অঘটন করেছেন। ভুল প্রার্থী বাছাই করা হয়েছে। তৃণমূলের নেতাদের বিজেপিতে এনেছেন। গ্যাসবেলুনকে হাওয়া দিলেই রকেট হয়ে যাবে সেটা তো হতে পারে না। বেড়ালকে বাঘ বানানোর কারণেই বিজেপির খারাপ ফল।
তিনি বলেন, দুর্নীতিগ্রস্ত মুখদেরই প্রার্থী করা হয়েছে।হোমওয়ার্ক করেনি। তারকা প্রার্থীদের ব্যাপক ব্যর্থতা। শোভনবাবু বারবার বলেছিলেন, কলকাতা কিন্তু, তারকা প্রার্থীদের স্বীকৃতি দেয় না…এখানে শ্রাবন্তীকে ভোট দেব মোদীজিকে দেখে! বেহালার সমস্যা হলে তো মোদীজি আসবেন না। যেতে হবে শ্রাবন্তীর কাছে, যে দোলের দিন মদন মিত্রের সঙ্গে নাচ করেছেন…দলের আত্মসমীক্ষার প্রয়োজন।’