নারায়ণগঞ্জের শীতলক্ষ্যায় মালবাহী জাহাজের ধাক্কায় লঞ্চ ‘সাবিত আল হাসান’ ডুবে গেছে। সেখানে নদীর উপর থাকা ‘ত্রুটিপূর্ণ সেতু’র কারণে আরো লঞ্চ দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী।
বুধবার (৭ এপ্রিল) সচিবালয়ে ‘নৌ নিরাপত্তা সপ্তাহ-২০২১’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে লঞ্চ মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার সভাপতি মাহবুব উদ্দিন বলেন, ‘আমরা দেখেছি, নদী সেখানে (সাবিত আল হাসান যেখানে ডুবেছে) সরু। যে ব্রিজটি সেখানে রয়েছে, সেটি বিজ্ঞানসম্মতভাবে স্থাপন করা হয়নি বলে আমি মনে করি। সেতুর পিলারগুলো চলাচলে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। সে কারণে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। এ দুর্ঘটনাটি এড়ানো যেত যদি মাস্টার সরু চ্যানেলের কথা চিন্তা করে আগে থেকেই জাহাজের গতি নিয়ন্ত্রণ করতেন। তদন্তকারীরা এ বিষয়টি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা করে সত্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা করলে ভবিষ্যতে নিরাপদে চলাচলের সম্ভাবনা বাড়বে।’
নৌ-দুর্ঘটনা ঘটার পর তদন্ত কমিটি হয়, আর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয় না। তদন্ত প্রতিবেদনও প্রকাশ করা হয় না। এর মধ্যেই আবার লঞ্চ ‘সাবিত আল হাসান’ ডুবির ঘটনা ঘটলো- এ বিষয়ে জানতে চাইলে নৌ-প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। আমাদের কাছে অনাকাঙ্ক্ষিত। প্রথম যখন সংবাদ পেলাম তখন মনে হয়েছে, কালবৈশাখী ঝড়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে। পরবর্তীতে জানতে পারলাম… আজকে দুর্ঘটনার বিষয়ে মাহবুব উদ্দীন কিছুটা আভাস দিয়েছেন। তবে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সে তদন্ত রিপোর্টের ভিত্তিতে আমাদের বক্তব্য পেশ করবো।’
তিনি বলেন, ‘মাহবুব উদ্দিন সাহেব বলেছেন, আমার কাছেও মনে হয়েছে, গতকাল আমি ছবিটি দেখেছি। এর আগে ভিডিও ক্লিপ দেখেছি। কালকে যে সেতুর ছবিটি দেখেছি, আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও ব্যস্ত নৌরুট এটা। নদী এমনিই ছোট হয়ে আসছে বিভিন্ন কারণে। সেখানে আরো বেশি ছোট করে দেয়ার ক্ষেত্রে সেতুর পিলার দুটি স্থাপন করা হয়েছে। আমরা সার্বক্ষণিক বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। মাহবুব সাহেব বলেছেন, পিলারটা দৃষ্টিসীমানার একটা বাধা হয়ে থাকতে পারে, এটা আমি জানি না। তদন্তে বেরিয়ে আসবে।’
‘সেখানে পাশাপাশি পিলার দুটো থাকার কারণে যে দুর্ঘটনা ঘটেছে, মহান রাব্বুল আলামিনের কাছে প্রার্থনা করবো, আর যেন না হয়। কিন্তু আমার আশঙ্কা ভবিষ্যতে এখানে আরো দুর্ঘটনার মুখোমুখি হওয়া লাগতে পারে শুধু এই নকশার কারণে। আমরা এ বিষয়ে সেতু বিভাগের সঙ্গে কথা বলবো এটার বিকল্প কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায় কি-না’ বলেন খালিদ মাহমুদ।
‘বিআইডব্লিউটিএ একটি হত্যা (সাবিত আল হাসান ডুবির ঘটনায়) মামলা করেছে। কার্গো ভেসেলের মালিক সম্পর্কে যেটা বলা হচ্ছে, এটার অনুমোদন নেই বলে বলা হচ্ছে। সেই ভাসমান কথার সঙ্গে আমি যুক্ত হতে পারি না। আমরা আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে জানিয়েছি, সেটার নিবন্ধন থাক আর না থাক যেহেতু সেটা ধাক্কা মেরেছে সেটা যেন আইনের আওতায় আনা হয়। আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও কথা বলেছি, এটা যেন দ্রুত আইনের আওতায় আসে। কোনো উদ্দেশ্যে হয়েছে না দুর্ঘটনা না উদ্দেশ্যমূলকভাবে হয়েছে।’
প্রতিমন্ত্রী আরো বলেন, ‘এ ধরনের দুর্ঘটনা কাঙ্ক্ষিত নয়। আগে যে দুর্ঘটনা হতো কালবৈশাখী ঝড় বা স্রোত বা নকশা বিভিন্ন কারণে- আমরা এগুলোর ব্যাপক উন্নতি সাধন করেছি। এ ধরনের দুর্ঘটনা আমরা সড়কে দেখি, একটির সঙ্গে আরেকটির মুখোমুখি সংঘর্ষ। নৌপথে আমাদের পরপর দুটি দেখতে হলো। এটাও একই ধরনের ঘটনা। যেখানে ৫০ জনের মতো যাত্রী ছিল, ৩৫ জনের সলিল সমাধি হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করবো, অপরাধীদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা এবং তদন্ত রিপোর্ট আপনাদের সামনে নিয়ে আসবো। তদন্ত রিপোর্টের যেন যথাযথ প্রয়োগ ও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয় সে ব্যাপারে আমরা সদা প্রস্তুত আছি।’
ঢাকার চারপাশে বৃত্তাকার নৌপথে নৌযান চলাচলে বাধা সৃষ্টিকারী কতগুলো সেতু রয়েছে- এ বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এগুলোর ব্যাপারে দীর্ঘদিন কাজ হচ্ছে। এখানে প্রায় ১৬-১৭টি ব্রিজ চিহ্নিত করা হয়েছে। শুধু এটা নয়, আমরা যখন গোমতি দিয়ে সোনামুড়া নিয়ে গেলাম সেখানে আমাদের অনেক চ্যালেঞ্জ। সেগুলো নিয়ে আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছি। তিনি আমাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, নৌপথে যেখানে সেতুগুলো বাধা হিসেবে আছে সেগুলো ভবিষ্যতে সরিয়ে নৌপথের যেন বাধা না হয়ে দাঁড়ায় সে ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য তিনি বলেছেন। এটা তো রাতারাতি সম্ভব নয়। আমরা ধীরে ধীরে এগুলো করবো।’
সচিবালয়ে নৌপরিবহন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক এ জেড এম জালাল উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এছাড়া অনুষ্ঠানে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলাম (বীর উত্তম) ও নৌপরিবহন সচিব মোহাম্মদ মেসবাহ উদ্দিন চৌধুরীসহ নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থার শীর্ষ কর্মকর্তারা অনলাইনে যুক্ত থেকে বক্তব্য দেন।