একটা সময় সৌদি আরবের নারীদের বাইরে কাজ করার ওপর নিষেধাজ্ঞা ছিল। সীমিত পর্যায়ে কিছু নারী ঘরের বাইরে কাজ করতেন। তবে এখন পরিস্থিতি পাল্টে গেছে। গাড়ির চালক থেকে শুরু করে বিচারক পর্যন্ত প্রতিটি ক্ষেত্রে দেশটির নারীরা কাজ করছেন। শ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে মধ্যপ্রাচ্যের দেশটি দীর্ঘমেয়াদি লক্ষ্য নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশটির শ্রমশক্তিতে ক্রমবর্ধমান নারীর এ অংশগ্রহণ জ্বালানি তেলবহির্ভূত খাতে প্রবৃদ্ধি এবং দেশের গড় আয়ের উন্নতিতে অবদান রাখতে পারে বলে জানিয়েছে রেটিং এজেন্সি মুডি’স। খবর আরব নিউজ।
ফেব্রুয়ারিতে সৌদি আরবের সর্বশেষ শ্রমবাজার জরিপে দেখা গেছে, ২০২০ সালের তৃতীয় প্রান্তিকে নারীদের অংশগ্রহণ বেড়ে ৩১ দশমিক ৩ শতাংশে পৌঁছেছে। যেখানে ২০১৯ সালের শেষ নাগাদ নারীদের অংশগ্রহণ ছিল ২৬ শতাংশ। যদিও এটি এখনো বিশ্বের সর্বনিম্ন হারের একটি। তবে সৌদি আরবের ক্ষেত্রে এ পরিসংখ্যান অনেক বেশি তাত্পর্যপূর্ণ। কারণ দেশটির শ্রমশক্তিতে নারীদের এ হার পাঁচ বছর আগেও অর্ধেকেরও কম ছিল।
এছাড়া কভিড-১৯ মহামারীর কারণে বিশ্বজুড়ে লাখ লাখ মানুষ চাকরি হারিয়েছে। বেশির ভাগ দেশেই এ চাকরি হারানোদের তালিকায় বেশি ছিলেন নারীরা। ফলে বৈশ্বিক শ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ কমে গেছে। পাশাপাশি মহামারীজনিত লকডাউন ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় বিপুলসংখ্যক নারীকে শিশুদের দেখভালের দায়বদ্ধতার মুখোমুখি হতে হয়েছিল। এক্ষেত্রে সৌদি আরবের এ পরিসংখ্যান দেশটির শ্রমশক্তিতে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি অব্যাহত থাকার বিষয়টি তুলে ধরেছে।
ভিশন ২০৩০ অনুযায়ী সৌদি শ্রমশক্তিতে ২০৩০ সালের মধ্যে নারীদের অংশগ্রহণ ৩০ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য ছিল। যদিও এক দশক আগেই সেই লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে দেশটি। সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের উদ্যোগে গাড়ি চালানোর ওপর কয়েক দশক ধরে চলা নিষেধাজ্ঞার অবসান ছিল প্রথম বড় কোনো পদক্ষেপ। ২০১৮ সালে সৌদি নারীরা গাড়ি চালানোর অনুমতি পান। পাশাপাশি সরকার কাজের সঙ্গে সম্পর্কিত যাতায়াত এবং শিশুদের দেখভালের ব্যয়ে নারীদের সহায়তা করার একটি ভর্তুকি কর্মসূচিও হাতে নিয়েছিল।
একই সময়ে বিশ্বজুড়ে পরামর্শ সংস্থা কেপিএমজির ‘ফিমেল লিডার্স আউটলুক ২০২০’ প্রথমবারের মতো সৌদি আরবে প্রকাশিত হয়। ২০২০ সালে পরিচালিত এ সমীক্ষায় সৌদি আরবসহ ৫২টি দেশের ৬৭৫ জন নারী নেতৃত্ব উঠে এসেছিলেন।
সৌদির কেপিএমজির অংশীদার এবং অন্তর্ভুক্তি ও বৈচিত্র্য বিভাগের প্রধান খোলুদ মুসা বলেন, কভিড-১৯ ডিজিটালাইজেশনকে ত্বরান্বিত এবং বহু ক্ষেত্রে পরিবর্তন প্রজ্বলিত করেছে। সুতরাং এটিকে বিশেষত মধ্য থেকে দীর্ঘমেয়াদে লিঙ্গ বৈচিত্র্যের জন্য অনুঘটক হিসেবে দেখা যেতে পারে।
সমীক্ষায় নেতৃত্ব পর্যায়ে থাকা ৪৭ শতাংশ সৌদি নারী জানিয়েছেন, তারা মহামারীর পর লিঙ্গ বৈচিত্র্য ও অন্তর্ভুক্তির ক্ষেত্রে ধীর অগ্রগতি প্রত্যাশা করেন না। ২৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব বলেছেন, কর্মক্ষেত্রে নারীদের জন্য কোটা চালু করা একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ ছিল। দেশটির কর্মক্ষেত্রে বিশ্বজুড়ে গড়ের দ্বিগুণেরও বেশি নারীদের জন্য কোটা সংরক্ষণ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ নিয়ে ৬৬ শতাংশ সৌদি নারী নেতৃত্ব বলেছিলেন, তারা আগামী তিন বছরে তাদের প্রতিষ্ঠানের প্রবৃদ্ধি নিয়ে আত্মবিশ্বাসী।
এছাড়া সৌদি আরবের যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে ‘নারীর ক্ষমতায়ন’ কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, যোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি খাতে নারীর ক্ষমতায়নকে অন্যতম প্রধান কৌশল হিসেবে বিবেচনা করা হয়। আমরা এমন একটি ডিজিটাল সিস্টেম প্রতিষ্ঠা করতে চাই, যা নারীর দক্ষতাকে স্পর্শ ও উন্নত করবে।