চলমান করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে দেশের ব্যাংকিং ব্যবসা সচল রাখতে নানা উদ্যোগ নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এরমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একটি উদ্যোগ অ্যাপ ভিত্তিক ব্যাংকিং সেবা। গ্রাহক যেন বাড়িতে বসেই অ্যাপের মাধ্যমে তার হিসাব পরিচালনা করতে পারে তার জন্যই ব্যাংকগুলো এই উদ্যোগ নেয়।
জানা গেছে, চলমান এই পরিস্থিতিতে গ্রাহকরা এই সেবাটি গ্রহণ করেছে। অন্যান্য যেকোনও সময়ের চেয়ে অ্যাপ ভিত্তিক ব্যাংকিং সেবা বেড়েছে বহুগুণ। কারণ হিসেবে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রাহকরা খুব সহজেই শারীরিক যোগাযোগ এড়িয়ে লেনদেন করতে পারেন।
গ্রাহকরা স্মার্টফোনে এসব অ্যাপসের মাধ্যমে দিনের যে কোনও সময় ব্যাংকের শাখায় না গিয়ে ফান্ড ট্রান্সফার এবং অনলাইন পেমেন্টের মতো বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সেবা পাচ্ছেন।
জানা গেছে, গত বছরের মার্চে দেশে করোনা মহামারি শুরু হলে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে প্রতিটি মানুষের মধ্যে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখার প্রতি বিশেষভাবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। সংক্রমণ ঠেকাতে জনসমাগম এড়িয়ে চলতেও বিশেষভাবে বলা হয়। শুরুর দিকে এটা নিশ্চিত করতে লকডাউনের মতো সিদ্ধান্তও নেয় সরকার। কিন্তু এতে দেশের অর্থনীতিতে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। বিশেষ করে ব্যাংকিং ব্যবসা টিকিয়ে রাখাই দুরুহ হয়ে পড়ে। এমন পরিস্থিতিতে ব্যাংকগুলো প্রযুক্তি নির্ভর এই সেবাটির প্রতি বিশেষ নজর দেয়।
শুরুর দিকে গ্রাহকরা অভ্যস্ত না হলেও সময়ের সাথে সাথে তারা এটি বেশ উপভোগ করছেন। তবে কিছু অভিযোগও রয়েছে গ্রাহকদের।
বিষয়টি নিয়ে একজন ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ গ্রাহক অ্যাপ-ভিত্তিক ব্যাংকিংয়ে অভ্যস্ত নন। তবে এ মহামারীর সময়ে, বেশ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক গ্রাহক ব্যাংকের শাখায় না গিয়েই ব্যাংকের নানা সেবা নেয়ার চেষ্টা করেছেন। তারা অ্যাপ-ভিত্তিক এ ব্যাংকিং সেবাকে বেশ সুবিধাজনকই মনে করছেন।
অ্যাসোসিয়েশন অফ ব্যাংকার্স, বাংলাদেশের (এবিবি) তথ্যানুসারে, মহামারির এ সময়ে অ্যাপ্লিকেশন ভিত্তিক ব্যাংকিং সেবা সংক্রান্ত দৈনিক আসা প্রশ্ন বা অনুরোধের সংখ্যা বেড়েছে ২০০ শতাংশেরও বেশি।
বিষয়টি নিয়ে এবিবির চেয়ারম্যান আলী রেজা ইফতেখার বলেন, এটি অত্যন্ত বড় ধরনের পরিবর্তন। মহামারী শুরুর আগে একদিনে ব্যাংকিং অ্যাপের মাধ্যমে প্রায় ১০০ টি অনুরোধ আসতো। তবে প্রতিদিনের এ সংখ্যা এখন প্রায় ৩৫০ ছাড়িয়ে গেছে।
তিনি বলেন, এ বিষয়টি ব্যবহারকারীদের মধ্যে আরও স্বচ্ছতা বয়ে আনবে। এটি গ্রাহকদের জন্যও সুবিধাজনক বলে উল্লেখ করেন ইফতেখার।
বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংকের অভিযোগ অ্যাপ্লিকেশনসহ মোট ৩৭ টি ব্যাংকের অ্যাপ রয়েছে।
কিছু গ্রাহক অবশ্য বলছেন, দেশের ব্যাংকিং অ্যাপগুলোর সেবা এবং কার্যকারিতা আরও উন্নত করা দরকার।
বেসরকারি একটি ব্যাংকের গ্রাহক বলেন, অ্যাপ ভিত্তিক সেবা মোটামুটি ভালোই। এটা গ্রহণযোগ্যও। তবে প্রতি তিন মাসে পাসওয়ার্ড আপডেট করার বিষয়টি বিরক্তিকর। এ জায়গাটিতে কর্তৃপক্ষের নজর দেয়া উচিত।
আহাদ ইসলাম নামের একজন অ্যাপ ব্যবহারকারী বলেন, তিনি লক্ষ্য করেছেন যে, অ্যাপে ফিঙ্গারপ্রিন্ট মোড সবসময় কাজ করে না।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, দেশের বেশিরভাগ ব্যাংকিং অ্যাপ্লিকেশন স্থানীয় এবং বিদেশী সংস্থার সহযোগিতায় ব্যাংকের আইটি বিভাগের মাধ্যমে তৈরি করা হয়েছে। এটা কীভাবে আরও উন্নত এ সহজবোধ্য করা যায় তা নিয়েও গবেষণা চলছে।
এ প্রসঙ্গে এবিবি চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের প্রতিনিয়তই আপগ্রেড করতে হচ্ছে। সব ব্যাংকই অ্যাপের এ প্ল্যাটফর্মটিকে অগ্রাধিকার হিসাবে গ্রহণ করেছে। প্রযুক্তি প্রতিদিন বিকশিত হচ্ছে এবং ব্যাংকিংয়ের মতো স্পর্শকাতর সেবারও এর সঙ্গে মানিয়ে নেয়া দরকার।