অনিবার্য কারণে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফায়সাল বিন ফারহানের প্রস্তাবিত বাংলাদেশ সফর স্থগিত করা হয়েছে। আগামী ২৪-২৬ শে জানুয়ারি দ্বিপক্ষীয় সফরে তার ঢাকায় আসার কথা ছিল।
রোববার রাজধানীতে এক অনুষ্ঠান শেষে উপস্থিত সংবাদিকদের সঙ্গে আলাপে ঢাকাস্থ সৌদি রাষ্ট্রদূত ইসা বিন ইউসুফ আল-দুহাইলান বলেন, সৌদি আরবের নতুন পরিস্থিতি আর পররাষ্ট্রমন্ত্রীর নিজস্ব ব্যস্ততার কারণে তাঁর ঢাকা সফরটি স্থগিত হয়ে গেছে। তবে নতুন শিডিউলে সফরটি শিগগিরই হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে ৫৫ হাজার রোহিঙ্গা সৌদি আরবে গেছেন। তাদের অনেকের পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। অনেকের পাসপোর্ট হারিয়ে গেছে। তাদের একটি তালিকা রিয়াদ ঢাকাকে দিয়েছে জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে যাওয়ায় ব্যক্তিদের সৌদি আরব বাংলাদেশী নাগরিক হিসেবেই বিবেচনা করছে।
কক্সবাজারে বাংলাদেশ সরকারের মানবিক আশ্রয়ে থাকা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠি এবং স্থানীয় ৩০ হাজার বাংলাদেশির জন্য সৌদি আরবের পাঠানো ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের আনুষ্ঠানিকতা শেষে দেশটির রাষ্ট্রদূত ইসা বিন ইউসুফ আরও বলেন, বাংলাদেশের যে সব নাগরিকের কাগজপত্র (পাসপোর্ট) হারিয়ে গেছে বা মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে, এমন ৫৫ হাজারের তালিকা আমরা বাংলাদেশ সরকারকে দিয়েছি। তাদের নতুন পাসপোর্ট কিংবা নবায়ন করা পাসপোর্টের প্রয়োজন। বিষয়টির সুরাহার জন্য বাংলাদেশ সরকার এরইমধ্যে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি করেছে, তারা কাজ করছেন। বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে গেলে রোহিঙ্গারা কেন বাংলাদেশি হিসেবে বিবেচিত হবে?
এমন প্রশ্নে রাষ্ট্রদূত বলেন, তারা তো বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে ঢাকা থেকে রিয়াদ কিংবা দাম্মাম হয়ে সৌদি আরবে গেছে। কাজেই তাদের আমরা বাংলাদেশী হিসেবেই বিবেচনা করছি। ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল অবশ্য সৌদি দূতের বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন। তিনি বলেন, পাসপোর্ট নিয়ে গেলেও রোহিঙ্গারা বাংলাদেশী নয়, এরা মিয়ানমারের অধিবাসী।
রোহিঙ্গা সমস্যা নতুন নয় উল্লেখ করে মন্ত্রী বলেন, ৫০-৬০ বছর আগেও রোহিঙ্গারা এদেশে এসেছে। সৌদি আরবের উদারতায় তারা দেশটিতে যাওয়ার সূযোগ পেয়েছে। সৌদি সরকারই তাদের এ সূযোগ করে দিয়েছিল। তারা তাদের আশ্রয় দিয়েছে। সৌদি আরবের নির্দিষ্ট একটি এলাকায় আশ্রিত রোহিঙ্গাদের বাস। বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে যাওয়া ব্যক্তিদের ডকুমেন্ট প্রদর্শন সাপেক্ষে পাসপোর্ট নবায়ন করা হবে জানিয়ে
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশী নাগরিক যদি ওইখানে (সৌদি আরব) রোহিঙ্গা হিসেবে যায় তবে অবশ্যই আমরা তাদের ডকুমেন্ট দেখে পাসপোর্ট দিবো। আর রোহিঙ্গাদের মধ্যেও যারা বাংলাদেশী পাসপোর্ট নিয়ে গেছে তাদেরও আমরা ডকুমেন্ট দেখে নবায়ন করবো। তবে ডকুমেন্ট দেখাতে না পারলে (বাংলাদেশি কিংবা রোহিঙ্গা) প্রত্যেকের বিচার-বিশ্লেষণ করে আমরা পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেবো।
উল্লেখ্য, বৈধ ডকুমেন্টবিহীন কাউকে রাখবে না সৌদি আরব। এমন কাঠোর অবস্থান জানিয়ে সৌদি আরবে থাকা ৫৫ হাজার রোহিঙ্গাকে পাসপোর্ট প্রদানে বাংলাদেশের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে রিয়াদ।
পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. মোমেনসহ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা বারবার বলছেন, পাসপোর্ট নবায়নের অনুরোধ মানে ওই ৫৫ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশি নন। তাদের ডকুমেন্টেশনের জন্য পাসপোর্ট দিয়ে অনুরোধ করেছে সৌদি সরকার। তাদের বাংলাদেশে ফেরতেরও কোন আলাপ নেই। তবে রোববার সৌদি দূতের নতুন ওই বক্তব্যের বিষয়ে তাৎক্ষণিক পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোন প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।