সাবেক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফের বিপরীতে, ইমরান খানের সাথে সউদীর সরাসরি ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা তেল সমৃদ্ধ রাজ্যে ব্যক্তিগত ব্যবসায়ে অংশীদারিত্ব নেই। বরং তুর্কিদের সাথেই তার সম্পর্ক বেশি ভালো।
সূত্র মতে, তুর্কি ইতিহাস ও সাহিত্য নিয়ে ইমরান খানের আগ্রহ রয়েছে এবং তিনি প্রকাশ্যে পাকিস্তানি যুবকদের ইতিহাস ও আদর্শ তুলে ধরা তুর্কি টিভি সিরিয়ালগুলো দেখতে উৎসাহিত করেছেন। তিনি বিভিন্ন সময়ে আধুনিক তুর্কি রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা মোস্তফা কামালের প্রশংসাও করেছেন, যিনি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ধ্বংসাবশেষ থেকে জাতিকে পুনর্র্নিমাণ করেছিলেন। ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে তুরস্ক সফরের সময়, ইমরান খান কামাল আতাতুর্কের কবর জিয়ারত করেছিলেন এবং তাকে ‘বিংশ শতাব্দীর অন্যতম সেরা প্রেসিডেন্ট ও দূরদর্শী নেতা’ বলে অভিহিত করেছেন। ২০২১ সালে ইস্তাম্বুল, তেহরান ও ইসলামাবাদকে যুক্ত করতে সংযুক্ত ট্রান্সন্যাশনাল রেল পরিষেবা পুণরায় চালুর বিষয়ে সমর্থনসহ তুরস্কের প্রতি ঝোঁক থেকে তার সাম্প্রতিক বৈদেশিক নীতি নির্বাচনের বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে।
আইটিআই ট্রান্সন্যাশনাল রেলপথটি চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিশিয়েটিভের (বিআরআই) মাধ্যমে ইরানের ভেতর দিয়ে চীন ও তুরস্কের মধ্যে সরাসরি রেল সংযোগ স্থাপণের মাধ্যমে সংযোগ বাড়ানোর প্রত্যাশা করা হচ্ছে। এতে চীনের উপস্থিতি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। চীন ইতিমধ্যে ইরানে কয়েক বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগে প্রতিশ্রæতিবদ্ধ হয়েছে। এদিকে, চীন-পাকিস্তান অর্থনৈতিক করিডোর (সিপিসি), যার লক্ষ্য পাকিস্তানকে ইরান ও তুরস্ক হয়ে ইউরোপে পৌঁছানোর জন্য চীনের একটি ট্রানজিট রুটে পরিণত করা, সম্ভবত পাকিস্তানের একমাত্র চলমান বহু-বিলিয়ন ডলার প্রকল্প। চীন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্প্রতি একটি নতুন বিনিয়োগ চুক্তিতে সম্মত হওয়ার সাথে সাথে সিপিইসি পূর্ব-পশ্চিম বাণিজ্য রুটের সাথে সংযোগ স্থাপনে নতুন গুরুত্ব পেয়েছে। চীনের ইউরোপের নতুন সিল্ক রোডের ধারণাগত প্রথম সংযোগ পাকিস্তানের সাথে হওয়ায় ইসলামাবাদের পক্ষে অন্যান্য মূল সংযোগকারী রাষ্ট্রসমূহ, যেমন ইরান এবং তুরস্কের সাথে দৃঢ় সম্পর্ক গড়ে তোলা যৌক্তিক। তথাকথিত ‘ইমরান খান ফ্যাক্টর’ উপসাগরীয় দেশগুলো থেকে দূরে সরে এসে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রনীতির পরিবর্তনকেই প্রতিফলিত করেছে।
ডিসেম্বরে, পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের সুবিধার্থে ইরানের সাথে একটি নতুন সীমান্ত পারাপার চালু করেছে। যদিও এই সংযোগটি আঞ্চলিক দেশগুলোর সাথে আরও বাণিজ্য সম্পর্কের জন্য পাকিস্তানের নিজস্ব অনুসন্ধানের অংশ, তবুও এই সিদ্ধান্ত এমন একটি উল্লেখযোগ্য সময়ে এসেছে যখন ভারত-ইরান সম্পর্কের দ্রুত অবনতি হয়েছে এবং তেহরান ফরহাদ-বিসহ গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো থেকে নয়াদিল্লিকে বের করে দিয়েছে। ইরানের সাথে ভারতের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা ইতোমধ্যে চীনের দ্বারা উন্নয়নকৃত পাকিস্তানের গোয়েদার বন্দরের সাথে চাবাহার বন্দর সরাসরি সংযুক্ত করতে ইরানকে উদ্বুদ্ধ করেছে। বন্দরটি এতদিন ভারত পরিচালনা করে আসছিল। নতুন পাকিস্তান-ইরান সীমান্ত চাবাহার থেকে মাত্র ১৩০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
পাকিস্তান স্থায়ীভাবে ইরান ও তুরস্কের সাথে তার সম্পর্ক প্রসারিত করার সময়, সউদী আরব এবং সংযুক্ত আরব আমিরাত তাদের নাজুক অর্থনৈতিক সময়ে তাদের দুটি বৃহত্তম বিদেশী রেমিটেন্সের উপর স্পষ্ট চাপ প্রয়োগ করছে। যা অন্তত আপাতত পক্ষে ইসলামাবাদের সত্যিকারের স্বাধীনতা এবং বৈদেশিক নীতি পরিবর্তনের পথে বাধা সৃষ্টি করছে।
সূত্র : এশিয়া টাইমস।