spot_img

অ্যাঞ্জেলিনা জোলির জীবনের সবচেয়ে বেদনাদায়ক অধ্যায় যখন সিনেমার গল্প

অবশ্যই পরুন

হলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী অ্যাঞ্জেলিনা জোলির জীবন কেবল গ্ল্যামার আর খ্যাতির গল্প নয়, বরং এক অনন্য মানবিক ও সাহসী সংগ্রামের ইতিহাস। সাম্প্রতিক সময়ে মুক্তিপ্রাপ্ত তার নতুন ছবি ‘কাউচার’ যেন জীবনের সবচেয়ে বেদনাদায়ক অধ্যায়গুলোকেই বড় পর্দায় নতুনভাবে জীবন্ত করে তুলেছে।

জোলির ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই শুরু হয় বহু আগেই—শৈশবে। তার মা মার্চেলিন বার্ট্রান্ড দীর্ঘদিন ব্রেস্ট ক্যান্সারের সঙ্গে লড়েছিলেন এবং ২০০৭ সালে মাত্র ৫৬ বছর বয়সে এ রোগেই মারা যান। দাদির মৃত্যুও ঘটেছিল একই রোগে। এই পারিবারিক ইতিহাসই জোলিকে বাধ্য করেছিল জেনেটিক পরীক্ষা করাতে, যেখানে প্রকাশ পায় তিনি BRCA1 জিন মিউটেশন বহন করছেন। এই জিনের কারণে তার ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ছিল ৮৭ শতাংশ এবং ওভারিয়ান ক্যান্সারের ঝুঁকি ৫০ শতাংশ।

এই ভয়াবহ সম্ভাবনার মুখোমুখি হয়েও জোলি ভয় পাননি। ২০১৩ সালে মাত্র ৩৭ বছর বয়সে তিনি বিশ্বজুড়ে আলোচিত এক সিদ্ধান্ত নেন—প্রিভেন্টিভ ডাবল মাস্টেক্টমি। নয় ঘণ্টার জটিল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তার ব্রেস্ট টিস্যু অপসারণ করে ইমপ্লান্টের মাধ্যমে পুনর্গঠন করা হয়। নিজের এই কঠিন সিদ্ধান্তের বিষয়ে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস-এ প্রকাশিত এক নিবন্ধে জোলি লিখেছিলেন, আমি মনে করি, ডাবল মাস্টেক্টমির সিদ্ধান্তটি আমাকে আরও শক্তিশালী ও আত্মবিশ্বাসী করেছে।

এর দুই বছর পর, ২০১৫ সালে, চিকিৎসকেরা ডিম্বাশয়ে ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণ শনাক্ত করলে তিনি নেন আরেক কঠিন পদক্ষেপ—প্রিভেন্টিভ ওভারিয়েক্টমি। সেই সময়ের অনুভূতি প্রকাশ করে জোলি বলেছিলেন, খবরটি শুনে মনে হয়েছিল, যেন দুনিয়া আমার মাথার ওপর ভেঙে পড়ল।

জোলির এ সাহসী সিদ্ধান্ত শুধু তার ব্যক্তিগত জীবনই রক্ষা করেনি, এটি বিশ্বজুড়ে নারী স্বাস্থ্য সচেতনতার এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনেছে। ‘অ্যাঞ্জেলিনা জোলি ইফেক্ট’ নামে পরিচিতি পাওয়া এ ঘটনার পর বিশ্বজুড়ে জিনেটিক টেস্টিং এবং ব্রেস্ট ক্যান্সার স্ক্রিনিংয়ের হার বেড়ে যায় কয়েকগুণ।

ফরাসি নির্মাতা অ্যালিস উইনোকুরের ‘কাউচার’ সিনেমাটি জোলির এ ব্যক্তিগত সংগ্রামেরই শিল্পরূপ। সিনেমায় তার চরিত্রটি যখন ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার কথা শোনে, তখন সেই মুহূর্তের অভিনয়ে জোলি যেন তার নিজের জীবন থেকে সেই অনুভূতি পর্দায় ফুটিয়ে তুলেছেন। তাই তো জোলি বলেন, ‘এই চরিত্রে অভিনয় আমার জন্য খুবই আবেগী ছিল। প্রতিটি মহিলা যিনি ক্যান্সারের সঙ্গে লড়াই করেছেন, তার জন্যই আমার এ সিনেমা।’ বলা যায় জোলির জন্য ‘কাউচার’ শুধু একটি সিনেমা নয়, এটি এক ধরনের থেরাপি। তিনি স্বীকার করেন, এই সিনেমা করতে গিয়ে তিনি তার মায়ের স্মৃতি, নিজের শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা। সবকিছুই পুনরায় অনুভব করেছেন। কিন্তু এবার সেই বেদনাকে তিনি শিল্পের মাধ্যমে রূপান্তরিত করেছেন, যা বিশ্বের লক্ষ্য নারীকে শক্তি জুগিয়েছে।

‘কাউচার’ ছবির মূল আকর্ষণ কেবল ক্যান্সারের গল্প নয়; বরং এক নারীর আত্মবিশ্বাস, শিল্পের প্রতি ভালোবাসা আর মৃত্যুভয়ের মধ্যেও জীবনের প্রতি টান। তাই তো সিনেমাটির প্রদর্শনী শেষে দর্শকরা দাঁড়িয়ে অভিবাদন জানিয়েছেন। সমালোচকরা বলছেন, ‘এটি জোলির ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা অভিনয়। যেখানে বাস্তবজীবনের লড়াকু অ্যাঞ্জেলিনার প্রতিচ্ছবি স্পষ্ট।’

গত শনিবার ইতালির রোম চলচ্চিত্র উৎসবে ‘কাউচার’ সিনেমার প্রিমিয়ারে অ্যাঞ্জেলিনা জোলির উপস্থিতিতে সবাইকে মুগ্ধ করেছে। উৎসবের লাল গালিচায় কালো ওপেন-ব্যাক গাউনে তিনি যখন উপস্থিত হন, ক্যামেরার আলো থমকে যায় তাঁর পিঠজুড়ে আঁকা নতুন ট্যাটুতে। এই ট্যাটুটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা আর সমালোচনা। কেউ বলেন এটি তার জীবনের ‘পুনর্জন্ম’-এর প্রতীক, কেউবা একে দেখছেন তার স্বাধীনসত্তার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে।

ফ্যাশন বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন, ‘অ্যাঞ্জেলিনা আবারও প্রমাণ করলেন। ফ্যাশন তার কাছে শুধু পোশাক নয়, বরং প্রকাশের এক নির্ভীক ভাষা।’

উৎসবে তিনি নারীর স্বাস্থ্য ও সহনশীলতার বিষয়গুলোর সঙ্গে নিজের ব্যক্তিগত সম্পর্কের কথাও শেয়ার করেছেন। জোলির সঙ্গে প্রিমিয়ারে ছিলেন তার সহ-অভিনেতা লুই গ্যারেল ও আনিয়ার আনে এবং সিনেমাটির নির্মাতা অ্যালিস উইনোকুর। কিন্তু সেসব কিছুর মধ্যেও সবচেয়ে আলোচনার বিষয় ছিল জোলি। ৫১ বছর বয়সী জোলি এখন তার জীবনের নতুন অধ্যায় লিখছেন। তিনি শুধু একজন অভিনেত্রীই নন, ইউএনএইচসিআরের বিশেষ দূত, পরিচালক এবং ছয় সন্তানের মা। তাঁর প্রতিটি ভূমিকায় ফুটে উঠেছে সেই একই দৃঢ়তা; যা তাঁকে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে শক্তি জুগিয়েছিল।

সর্বশেষ সংবাদ

সরকারি কর্মচারীদের নতুন বেতন নির্ধারণের খসড়া প্রস্তাব চূড়ান্ত

সরকারি কর্মচারীদের নতুন বেতন নির্ধারণের খসড়া প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে গঠিত জাতীয় বেতন কমিশন। প্রস্তাবে গত ১০ বছরের ব্যবধানে বেতন...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ