মুসলিম সমাজের অনেককে দেখা যায় সকালে উঠে দুয়েকটা গিবত বা পরনিন্দা করে সারা রাতের নফল নামাজ, যাবতীয় ইবাদত ও পরিশ্রম বরবাদ করে ফেলেন। সব ইবাদত ও পরিশ্রমের ফল এই দুয়েকটি গিবতেই নিষ্ফল হয়ে যায়। গিবত কবিরা গুনাহ।
পরকালে শাস্তি পাওয়ার জন্য একটি গিবতই যথেষ্ট। এতে মুমিনের নেক আমল ধূলিসাৎ হয়ে যায়। মুমিন ইবাদত ও মুজাহাদা করার পর গিবত করে তবে সে আগের জায়গাতেই ফিরে আসে। যেমন কোনো লোক দুষ্টু ঘোড়ার ওপর আরোহণ করল এবং ঘোড়া তাকে পূর্বের মঞ্জিলের ফিরিয়ে আনল।
পরনিন্দার ক্ষতি ও ভয়াবহতা সম্পর্কে প্রায় সবাই জানে। তারপরও মানুষ গিবত ত্যাগ করতে পারে না কয়েকটি কারণ। প্রথম কারণ হলো অসতর্কতা। বহু মানুষ গিবত ও পরনিন্দার ব্যাপারে বাছ-বিচারহীন। তাদের কথাবার্তায় সেই সতর্কতা নেই যা একজন মুমিনের থাকা আবশ্যক।
তারা গিবতকে সাধারণ কথার মতোই নির্দোষ মনে করে। অথবা তারা বিষয়কে গুরুতর কোনো পাপ মনে করে না। ফলে গিবত থেকে বেঁচে থাকার প্রয়োজনও বোধ করে না।
অথচ এই অনুভূতি থাকা ছিল একান্ত প্রয়োজনীয়। কেউ যখন নিজেকে মুসাফির মনে করে তখন সে পথ অতিক্রম করার সময় অন্যের অবস্থা নিয়ে চিন্তা করার সুযোগ পায় না, বরং তার চিন্তা থাকে আমি কখন নিরাপদে ঘরে পৌঁছাব। মুসাফির যদি গন্তব্যের কথা ভুলে যায় তবে তার সফরে নানা ধরনের বিঘ্ন ঘটে। সে সময় মতো ও নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না।
রাস্তায় বিলম্ব করায় সে পাথেয় হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে যায়। গিবতকারী অন্যের পেছনে পড়ে সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পরকালে উপস্থিত হবে।
মানুষ গিবতে লিপ্ত হওয়ার আরেকটি কারণ হলো সগিরা গুনাহের প্রতি বেপরোয়া হওয়া। যারা সগিরা গুনাহের প্রতি বেপরোয়া হয়ে যায় তাদের কাছে কবিরা গুনাহও এক সময় গুনাহ বলে মনে হয় না। তখন সে গিবতের মতো বহু পাপে লিপ্ত হয়ে যায়, কিন্তু তার ভেতর কোনো ভাবান্তর ঘটে না।
গিবতে লিপ্ত হওয়ার আরেক মাধ্যম অর্থহীন গল্প ও আড্ডা। পূর্বসূরি বুজুর্গ আলেমরা সালিকিনদেরকে প্রথম পর্যায়ে যেসব আমল দিতেন তার একটি হলো অর্থহীন গল্প ও আড্ডা ত্যাগ করা।
কেননা এই ধরনের গল্প ও আড্ডা কেবল মানুষের মূল্যবান সময়ই নষ্ট করে না, বরং তা মানুষের অন্তরকে আল্লাহর জিকির বা স্মরণ থেকে বিমুখ রাখে, তা গিবত-শেকায়েতের মতো পাপে লিপ্ত করে। এককথায় মানুষের পরকাল ধ্বংস করে। তাই এমন নিষ্ফল ও অপ্রয়োজনীয় গল্প ও আড্ডা পরিহার করা আবশ্যক।
আল্লাহ সবাইকে গিবত পরিহারের তাওফিক দিন। আমিন।
তামিরে হায়াত থেকে মো. আবদুল মজিদ মোল্লার ভাষান্তর