রুদ্ধশ্বাস অভিযান আর প্রযুক্তিনির্ভর গুপ্তচরবৃত্তির নিখুঁত মিশেলে গড়া ‘মিশন: ইমপসিবল’ সিরিজ বরাবরই ছিল ভক্তদের প্রত্যাশার কেন্দ্রে। এবার সেই উত্তেজনা যেন আরও কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। গত ২৩ মে মুক্তি পাওয়া ফ্র্যাঞ্চাইজির অষ্টম কিস্তি ‘দ্য ফাইনাল রেকনিং’ বিশ্বব্যাপী এক সপ্তাহের মধ্যেই আয় করে ফেলেছে ২০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি।
বড় পর্দায় ঝড় তুলে টম ক্রুজ প্রমাণ করেছেন, বয়স শুধুই সংখ্যা। কারণ, তিন দশক ধরে চলা এই সিরিজের প্রতি কিস্তিতেই তিনি নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন। ১৯৯৬ সালে ৩৩ বছর বয়সে যাত্রা শুরু করা এই সুপারস্টার এখন ৬৩–এর দ্বারপ্রান্তে, তবু অ্যাকশন কিংবা সাহসিকতায় এতটুকু ভাটা নেই।
এবারের ছবিটিতে নিয়ে দর্শকের আগ্রহ, বক্স অফিস সাফল্য ও পর্দার পেছনের বিস্ময়কর কাহিনি মিলিয়ে ‘দ্য ফাইনাল রেকনিং’ হয়ে উঠেছে এই গ্রীষ্মের অন্যতম আলোচিত ছবি।
নিচে সিনেমাটি ঘিরে রয়েছে ১০টি চমকপ্রদ তথ্য, যা না জানলেই নয়—
১৯৯৬ সালে প্রথমবারের মতো বড় পর্দায় আসে ‘মিশন: ইমপসিবল’। তখন টম ক্রুজের বয়স ছিল ৩৩ বছর। আর এবারের নতুন কিস্তি যখন মুক্তি পেল, তখন তিনি প্রায় ৬৩—অর্থাৎ এই অ্যাকশন সিরিজ পা রেখেছে তিন দশকের ক্লাবে।
২. সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ স্টান্ট—সাবমেরিন ড্রাইভ
ছবিটিতে টম ক্রুজের ক্যারিয়ারের অন্যতম বিপজ্জনক দৃশ্য হিসেবে ধরা হচ্ছে ‘সাবমেরিন ড্রাইভ’-কে। এখানে তাকে দেখা যাবে ৮৫ লাখ লিটার পানির একটি বিশাল ট্যাংকে, যা একডুবে যাওয়া সাবমেরিনের পরিবেশ তৈরি করেছে। শুটিংয়ের সময় পানির নিচে থেকে উঠে আসতে গিয়ে প্রায় শ্বাসরোধে আক্রান্ত হন ক্রুজ।
আরেকটি স্টান্টে তাকে দেখা গেছে ঘণ্টায় ১২০-১৩০ মাইল বেগে উড়তে থাকা একটি বাইপ্লেনের ওপরে দাঁড়িয়ে। এতে তীব্র বাতাসে শ্বাস নেওয়া কঠিন হয়ে পড়ায় একাধিকবার অজ্ঞানও হয়ে পড়েন তিনি।
৪. সবচেয়ে ব্যয়বহুল কিস্তি
এই কিস্তির বাজেট প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার, যা একে বানিয়েছে ‘মিশন: ইমপসিবল’ সিরিজ ও প্যারামাউন্ট স্টুডিওর ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল ছবি।
ছবির প্রচারে গিয়ে দক্ষিণ কোরিয়ার সিওলে এক সংবাদ সম্মেলনে টম ক্রুজকে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবিত বিদেশি ছবিতে শুল্ক আরোপ নিয়ে প্রশ্ন করা হয়। উত্তরে কৌশলী ভঙ্গিতে তিনি বলেন, ‘আমরা ছবি নিয়ে প্রশ্নের উত্তর দিতে বেশি আগ্রহী। ধন্যবাদ।’
৬. কান উৎসবে ঝলক
চলতি বছর কান চলচ্চিত্র উৎসবে ছবিটির প্রিমিয়ার হয়। সেখানে টম ক্রুজ হাজির হয়ে হাসিমুখে নানা ভঙ্গিতে পোজ দিয়ে দর্শকদের মুগ্ধ করেন।
৭. সমালোচকদের ভূয়সী প্রশংসা
ছবিটির মুক্তির পর ভ্যারাইটি-সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম টম ক্রুজের পারফরম্যান্সের প্রশংসা করেছে। ভ্যারাইটি লেখে, ‘৩০ বছর ধরে এই সিরিজে দেখা গেছে বেপরোয়া টমকে, এবার তিনি নিজেকেই ছাড়িয়ে গেছেন। শুধু স্টান্ট নয়, চরিত্রের মানসিক দ্বন্দ্বও নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।’
৮. ধারাবাহিক দুই মুখ
এই সিরিজের সব কিস্তিতেই অভিনয় করেছেন টম ক্রুজ এবং ভিং রেমস এই দুজন অভিনেতা।
৯. সহকর্মীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা
ছবির সাফল্যে উচ্ছ্বসিত টম ক্রুজ সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রকাশ করেন এক কৃতজ্ঞতাসূচক বিবৃতি, যেখানে তিনি সহকর্মী, কলাকুশলী ও প্রযোজকদের ধন্যবাদ জানান।
১০. দর্শকদের উদ্দেশ্যে বার্তা
বিবৃতির শেষাংশে তিনি লেখেন, ‘সবচেয়ে বড় ধন্যবাদ দুনিয়ার নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা দর্শকদের, যাঁদের জন্যই আমরা কাজ করি, যাঁদের বিনোদন দিতে পারাই আমাদের ভালোবাসা।’
৩০ বছরের পথচলার পরও ‘মিশন: ইমপসিবল’ সিরিজ যেন থেমে নেই। বরং ‘দ্য ফাইনাল রেকনিং’ দিয়ে নতুন করে প্রমাণ করল—টম ক্রুজ এখনো অ্যাকশনের রাজা, যাঁর মিশন কখনোই অসম্ভব নয়!