বিশ্বজুড়ে হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ রঙের বৈচিত্র্য দেখেছে। লাল, নীল, সবুজ, বেগুনি—সবই চেনা। কিন্তু এবার বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, তারা এমন একটি রঙ দেখেছেন যা আগে কোনো মানুষ কখনো দেখেনি। রঙটির নাম দিয়েছেন –ওলো (Olo)।
এই গবেষণাটি চালিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয় বার্কলির একদল বিজ্ঞানী। অত্যাধুনিক লেজার প্রযুক্তি ব্যবহার করে তারা প্রত্যক্ষভাবে চোখের রেটিনার নির্দিষ্ট কোষে আলো প্রক্ষেপণ করেছেন। এই পদ্ধতিতে চোখের এম-কোন (M-cones) নামক রঙ সংবেদনশীল কোষগুলিকে আলাদাভাবে উদ্দীপ্ত করা সম্ভব হয়েছে–যেটা প্রাকৃতিক আলো দিয়ে সম্ভব নয়। এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে গার্ডিয়ান।
গবেষণায় অংশ নেওয়া বিজ্ঞানীরা জানান, এই রঙ দেখতে অনেকটা নীল-সবুজের মতো, কিন্তু সাধারণ টারকোয়েজ বা সায়ান রঙের তুলনায় অনেক বেশি প্রাণবন্ত ও গভীর। তবে তারা স্বীকার করেছেন, মনিটরে বা প্রিন্টে এই রঙ প্রকাশ করা সম্ভব নয়। এটি শুধুমাত্র লেজার পদ্ধতিতে চোখের কোষকে উদ্দীপ্ত করার মাধ্যমেই দেখা যায়।
গবেষক অস্টিন রুরদা জানান, এই রঙ বর্ণনা করার চেষ্টা করাটা ঠিক যেন স্বপ্নের কথা বলার মতো–আপনি জানেন আপনি দেখেছেন, কিন্তু ভাষায় বলা সম্ভব নয়। সাধারণ যে নীল-সবুজ রঙ আমরা দেখি, ‘ওলো’ তার তুলনায় অনেক বেশি উজ্জ্বল ও বাস্তবতাকে চ্যালেঞ্জ করে।
এই রঙের নামকরণ করা হয়েছে ‘Olo’ – যার মানে হলো শুধুমাত্র **M-কোন** সক্রিয় (0 – L বন্ধ, 1 – M চালু, 0 – S বন্ধ)। সাধারণ আলো তিনটি কোনকে একসাথে উদ্দীপ্ত করে, তাই শুধুমাত্র M-কোন উদ্দীপ্ত করার এই অভিজ্ঞতা মানব চোখে একেবারেই নতুন।
তবে যুক্তরাজ্যের সেন্ট জর্জ’স ইউনিভার্সিটির ভিশন বিজ্ঞানী জন বারবার বলেন, এটা আসলে নতুন রঙ নয়। বরং এমন এক সবুজ, যা আমরা সাধারণভাবে দেখতে পাই না। এটি কেবলমাত্র নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে চোখের এম-কোনগুলো একা উদ্দীপ্ত করলে দেখা যায়।
এই ‘ওজ ভিশন’ (Oz Vision) নামে পরিচিত প্রযুক্তি ভবিষ্যতে চোখের রোগ যেমন রেটিনাইটিস পিগমেন্টোসা, রঙ অন্ধত্ব ইত্যাদি গবেষণায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলেও মত দিয়েছেন গবেষকরা।
তবে আপনি আমি এখনই এই রঙ দেখতে পাবো না। এটি কোনো টিভি স্ক্রিন বা মোবাইলে দেখা সম্ভব নয়– কারণ আমাদের প্রচলিত প্রযুক্তি এই রঙ উপস্থাপন করতে সক্ষম নয়।