মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেছেন, মানবাধিকার রক্ষায় কাজ করা অধিকাংশ সংগঠনই শ্রমিকদের অধিকার নিয়ে কথা বলে না। শ্রমিকদের অধিকার লঙ্ঘিত হলে তা হবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের শামিল। তিনি বলেন, সংবিধানে শ্রমিকদের অধিকার থাকতে হবে সর্বাগ্রে। শ্রমিকদের কল্যাণে কাজ করে যাব। গার্মেন্টসশ্রমিকসহ অনেক শ্রমিকের শোষণ আমরা চোখে দেখলেও কৃষিশ্রমিকের শোষণ আমরা চোখে দেখি না।
সোমবার (৩০ ডিসেম্বর) সিরডাপ অডিটোরিয়ামে বাংলাদেশ কৃষি ফার্ম শ্রমিক ফেডারেশন আয়োজিত ‘বৈশ্বিক মানদণ্ডের সমমান সম্পন্ন অন্তর্ভুক্তিমূলক শ্রম আইন এবং কৃষি ও অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির শ্রমিকদের আইনি স্বীকৃতি’ বিষয়ক জাতীয় সংলাপে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
উপদেষ্টা ফরিদা আখতার বলেন, ‘ক্যান্সারে আক্রান্তদের ৬০ শতাংশই সরাসরি কৃষিকাজের সাথে জড়িত। এর কারণ হিসেবে দেখা যায় নারীরা কীটনাশক মেশাচ্ছে আর কৃষকরা তা স্প্রে করছে। এক্ষেত্রে কোনো ধরনের প্রতিকারের ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না, তাই প্রতিরোধ ও প্রতিকারের ওপর গুরুত্বারোপ করা উচিত।’
তিনি বলেন, ‘কৃষি আইনে কৃষক বলে কোনো শব্দ নেই, আছে কন্টাক্ট ফার্মার।’
কৃষি ফার্ম শ্রমিক নিয়োগ ও নিয়ন্ত্রণ নীতিমালা, ২০১৭ পরিবর্তনের ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘শ্রমিকদের নিয়ন্ত্রণ নয়, বরং শ্রমিকদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘গত সরকার কৃষিতে আধুনিকায়নের ব্যাপারে জোরেশোরে বললেও কৃষকের মজুরি বেশি বলে তারা হারভেস্টার মেশিন এনেছে, এর ফলে কৃষকরা বেকার হয়ে যাচ্ছে। এমনকি আগাছা পরিষ্কারের জন্য আগাছানাশক ব্যবহার করা হচ্ছে এটা যে কী ভয়াবহ সে বিষয়ে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।’
এ সময় দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত কৃষিফার্ম শ্রমিক ফেডারেশন ও ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা তাদের ১৩ দফা দাবিসহ একটি প্রস্তাবনা উপদেষ্টা ও শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধানের কাছে হস্তান্তর করেন।
বাংলাদেশ কৃষিফার্ম শ্রমিক ফেডারেশনের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মো: আজিজুল হকের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ।
সংলাপে আরো বক্তব্য রাখেন সমাজতান্ত্রিক শ্রমিক ফ্রন্টের সভাপতি ও শ্রম সংস্কার কমিশনের সদস্য রাজেকুজ্জামান রতন, জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক শামীম ইমাম, শ্রমিক নেতা আবুল হোসাইন, মোহাম্মদ আলী, বাকী বিল্লাহ, হাসিবুল ইসলাম, আলাউদ্দিন প্রমুখ।
শ্রম সংস্কার কমিশনের কমিশন প্রধান সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘শ্রম কমিশনে কাজ করতে এসে অনেক কুৎসিত বিষয় সম্পর্কে অবহিত হয়েছি। দেশের একটি বিশেষ মহল শ্রমিকদের মজুরি নানা কৌশলে হাতিয়ে নিচ্ছে। শ্রম কমিশন কিছু সুপারিশ সরকারের কাছে জমা দিবে।’
শ্রমিক নেতারা তথ্য প্রযুক্তির যুগে শ্রমিকদের তথ্য ডাটাবেজে অন্তর্ভুক্ত করার মাধ্যমে তাদের সামাজিক নিরাপত্তার আওতায় আনার দাবি জানান।
সূত্র : বাসস