দুনিয়ার সব জাতিরই পরস্পরকে অভিবাদন জানানোর নিজস্ব বিধান আছে। ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের পারস্পরিক অভিবাদন জানানোর বিধান সালাম। সালামের মাধ্যমে যাকে অভিবাদন জানানো হয় তার শান্তি, কল্যাণ ও শুভকামনা করা হয়। আল্লাহতায়ালা প্রথমে আদিমানব হজরত আদম (আ.)-কে সালাম শিক্ষা দেন। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা হজরত আদম (আ.)-কে সৃষ্টি করে বলেন, যাও, ফেরেশতাদের সালাম দাও এবং তারা তোমার সালামের কী উত্তর দেয়, মন দিয়ে শোনো। এটিই হবে তোমার এবং তোমার সন্তানদের সালাম। সে অনুযায়ী হজরত আদম (আ.) গিয়ে ফেরেশতাদের বলেন, ‘আসসালামু আলাইকুম’, অর্থ ‘আপনাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক।’ ফেরেশতারা উত্তরে বলে, ‘আসসালামু আলাইকা ওয়া রহমাতুল্লাহ’, অর্থ ‘আপনার ওপর শান্তি এবং আল্লাহর রহমত বর্ষিত হোক।’ (মিশকাত)
সালাম এভাবে দেওয়া মুস্তাহাব- ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রহমাতুল্লাহ’। উত্তরদাতা বলবেন, ‘ওয়া আলাইকুমুস সালাম ওয়া রহমাতুল্লাহি ওয়া বারকাতুহ’। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তোমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ না তোমরা ইমান গ্রহণ করবে। আর তোমরা ইমানদার হতে পারবে না যতক্ষণ না তোমরা পরস্পরকে ভালোবাসবে। আমি কি তোমাদের এমন কথা বলে দেব না, যা করলে তোমাদের পারস্পরিক ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে? (অবশ্যই বলব, তা হলো) তোমরা পরস্পরের মধ্যে সালামের প্রচলন করবে (মুসলিম, মিশকাত)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আরোহী ব্যক্তি পদব্রজে চলাচলকারীকে এবং পদব্রজে চলাচলকারী উপবিষ্ট ব্যক্তিকে এবং কমসংখ্যক লোক অধিকসংখ্যককে সালাম করবে। (বুখারি, মুসলিম)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, কম বয়সি বয়োজ্যেষ্ঠকে, পথ অতিক্রমকারী উপবিষ্টকে এবং কমসংখ্যক লোক অধিকসংখ্যককে সালাম প্রদান করবে। (বুখারি, মিশকাত)
হজরত আনাস (রা.) বলেন, একদা রসুল (সা.) কতিপয় বালকের কাছ দিয়ে গমন করলেন এবং তাদের সালাম করলেন। (বুখারি, মুসলিম, মিশকাত)
হজরত আবু সাইদ খুদরি (রা.) রসুল (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, তোমরা রাস্তার ওপর বসা থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখ। তারা (সাহাবিরা) বললেন, হে আল্লাহর রসুল! আমাদের তো রাস্তার ওপর বসা ছাড়া গত্যন্তর নেই। কারণ ঠায় বসে আমরা প্রয়োজনীয় কথাবার্তা সমাধা করি। তিনি বললেন, যদি তোমরা তথায় বসতে একান্ত বাধ্যই হও, তবে রাস্তার হক আদায় করবে। তারা জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রসুলুল্লাহ! রাস্তার হক কী? তিনি বললেন, চক্ষু নিয়ন্ত্রণে রাখা, কাউকে কষ্ট না দেওয়া, সালামের জবাব দেওয়া, ভালো কাজের আদেশ করা এবং খারাপ হতে নিষেধ করা। (বুখারি, মুসলিম)
হজরত আবু উমামা (রা.) বলেন, রসুল (সা.) বললেন, সেই ব্যক্তি আল্লাহর কাছে অধিক প্রিয় যে প্রথমে সালাম করে। (আহমাদ, তিরমিজি, আবু দাউদ, মিশকাত)
হজরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রসুল (সা.) বললেন, যখন তোমাদের কোনো মুসলমান ভাইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়, তখন সে যেন তাকে সালাম করে। এরপর যদি তাদের উভয়ের মধ্যখানে কোনো বৃক্ষ, প্রাচীর কিংবা পাথরের আড়াল পড়ে যায়, পরে পুনরায় যখন সাক্ষাৎ হয় তখনো যেন আবার সালাম করে। (আবু দাউদ, মিশকাত)
হজরত আনাস (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি বলল, হে রসুলুল্লাহ! আমাদের কেউ যখন তার কোনো ভাইয়ের সঙ্গে কিংবা কোনো বন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তখন কি তার জন্য মাথা নত করবে? তিনি বললেন, না। সে আবার জিজ্ঞাসা করল, তাকে কি আলিঙ্গন করবে এবং চুম্বন করবে? তিনি বললেন, না। সে পুনরায় জিজ্ঞাস করল, সে কি তার হাত ধরে তার সঙ্গে মুসাফাহা করবে? তিনি বললেন, হ্যাঁ। (তিরমিজি, মিশকাত) বারা ইবনে আজিব (রা.) বলেন, রসুল (সা.) বলেছেন, তোমরা পরস্পরে সালামের প্রচলন কর, তাহলে নিরাপদ থাকবে। (তারগিব) হজরত আবু ইউসুফ আবদুল্লাহ ইবনে সালাম (রা.) বলেন, আমি রসুলুল্লাহকে বলতে শুনেছি, হে মানুষ! তোমরা পরস্পরে সালামের প্রচলন কর এবং দুস্থ-গরিবকে খাদ্য প্রদান কর। আর মানুষ যখন ঘুমিয়ে থাকে, তখন সালাত আদায় কর। তাহলে তোমরা নিরাপদে জান্নাতে প্রবেশ করবে (তারগিব)। হজরত আবু দারদা (রা.) বলেন, রসুল (সা.) বলেন, তোমরা পরস্পরে সালামের প্রচলন কর, তাহলে তোমরা সম্মান ও মর্যাদার অধিকারী হবে। (আত তারগিব)
হজরত আবু উমামা (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, আল্লাহর কাছে মানুষের মধ্যে সেই ব্যক্তি সবচেয়ে প্রিয় যে আগেই সালাম প্রদান করে। (আত তারগিব)
হজরত ইবনে ওমর (রা.) বলেন, রসুল (সা.) বললেন, জিজ্ঞাসা বা কথোপকথনের আগেই সালাম হতে হবে। অতএব যে ব্যক্তি সালামের আগেই জিজ্ঞাসা বা কথোপকথন শুরু করবে তোমরা তার কথার উত্তর দিও না। (সিলসিলা সহিহাহ)
আল্লাহ আমাদের সবাইকে পরস্পরের মধ্যে সালামের বিধান কায়েম করার তৌফিক দান করুন।