ভারতীয় সীমান্তবর্তী চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় রাজশাহী বিভাগের আট জেলায় করোনা শনাক্ত হয়েছে ২২১ জনের। এর মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জে সর্বোচ্চ ৮২ জনের করোনা ধরা পড়েছে। একই দিন রাজশাহীতে করোনা শনাক্ত হয় ৫৪ জনের।
সংক্রমণ এড়াতে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করার পরামর্শ দিচ্ছে সিভিল সার্জন দফতর। কিন্তু তাতেও শঙ্কা কাটছে না। কারণ-চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে প্রতিদিনই উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে আসছেন করোনা রোগীরা। সেখান থেকেও করোনা ছড়ানোর শঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
জানা গেছে, কয়েক দিন ধরে চাঁপাইনবাবগঞ্জে করোনা সংক্রমণ শনাক্তের হার ঊর্ধ্বমুখী। সেখানে একদিনে ৫৫ শতাংশ পর্যন্ত করোনা ধরা পড়ছে। গত তিন দিনে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এবং এর উপসর্গ নিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রাণ হারিয়েছেন ১১ জন। তারা সবাই রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।
অন্যদিকে, গত কয়েকদিনে রাজশাহী জেলায় করোনা সংক্রমণের হার ৩৩ শতাংশের কাছাকাছি। এই কয়েক দিনে মারা গেছেন অন্তত চারজন। তারাও মারা গেছেন রামেক হাসপাতালে। হাসপাতালের আইসিইউসহ করোনা ওয়ার্ডে ১৫৪ জন রোগী ভর্তি রয়েছেন। এদের মধ্যে ৮২ জন চাঁপাইনবাবগঞ্জের বাসিন্দা।
এই পরিস্থিতিতে পার্শ্ববর্তী এই জেলার সঙ্গে সব ধরনের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা জরুরি বলে জানিয়েছেন রাজশাহীর সিভিল সার্জন ডা. কাইয়ুম তালুকদার। তিনি বলেন, গত শনিবার (২২ মে) রাজশাহী জেলায় করোনা সংক্রমণ শনাক্তের হার ছিল ৪০ শতাংশের উপরে।
সিভিল সার্জন আরও বলেন, এক দিন পরে তা ৩৩ শতাংশে নেমে আসে। সোমবার পিসিআর ল্যাবে নমুনা পরীক্ষা হয়েছে ২৩৮টি। এর মধ্যে করোনা শনাক্ত হয়েছে ৫৪টিতে। যা শতকরা হিসেবে প্রায় ২২ শতাংশ। কিন্তু ঈদের আগে হার আরও অনেক বেশি ছিল। বিপদ আঁচ করে মানুষ সচেতন হলে পরিস্থিতির খুব বেশি অবনতি ঘটবে না।
তিনি বলেন, জেলার নয় উপজেলার চেয়ে বেশি করোনা শনাক্ত হয় রাজশাহী নগরীতেই। রামেক হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা চলছে। যার ৮০ শতাংশ রোগী বাইরের। সেই ক্ষেত্রে হাসপাতাল থেকে করোনা ছড়ানোর শঙ্কা বেশি। তাছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জে ব্যাপকহারে সংক্রমণ ছড়িয়েছে। সেখানে শুরু হয়েছে কঠোর লকডাউন। এই পরিস্থিতিতে সেই জেলার সঙ্গে বিচ্ছিন্ন থাকলেই সংক্রমণ এড়ানো সম্ভব।
জানা যায়, রাজশাহী জেলায় এ পর্যন্ত ৮ হাজার ৩৭৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে চিকিৎসায় সুস্থ হয়েছেন ৭ হাজার ৩০৩ জন। করোনায় জেলায় মারা গেছেন ৮১ জন। এর মধ্যে ৫২ জনই রাজশাহী নগরীর বাসিন্দা। বাকি ২৯ জনের মধ্যে ৯ জন নগরী-সংলগ্ন পবা উপজেলার বাসিন্দা।
চাঁপাইনবাবগঞ্জ-সংলগ্ন গোদাগাদী উপজেলায় ৬ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এছাড়া বাঘা, চারঘাট, পুঠিয়া ও দুর্গাপুরে মারা গেছেন তিনজন করে। একজন করে প্রাণ হারিয়েছেন জেলার মোহনপুর ও তানোর উপজেলায়। এ পর্যন্ত জেলার বাগমারায় করোনায় প্রাণহানির তথ্য নেই।
অন্যদিকে, চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলায় এই পর্যন্ত করোনা ধরা পড়েছে ১ হাজার ৩৩৭ জনের। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ১ হাজার ৬১ জন। করোনার কাছে হার মেনেছেন এই জেলার ২৮ জন।