নিখোঁজের আট দিন পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র হাফিজুর রহমানের মরদেহ শনাক্ত করা হয়েছে। রোববার (২৩ মে) রাজধানীর শাহবাগ থানায় ছবি দেখে মরদেহ শনাক্ত করেন তার ভাই।পুলিশ বলছে, ওই যুবক আত্মহত্যা করেছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যবিজ্ঞান ও গ্রন্থাগার ব্যবস্থাপনা বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের ছাত্র ছিলেন তিনি। হাফিজুর একজন মূকাভিনেতা ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রভিত্তিক (টিএসসি) সংগঠন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় মাইম অ্যাকশনের সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।
মাইম অ্যাকশনের সাবেক সভাপতি মীর লোকমান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘গত ঈদুল ফিতরের পরদিন (১৫ মে) গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা দেন হাফিজুর রহমান। ঢাকায় এসে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডাও দেয় সে। সর্বশেষ মায়ের সঙ্গে ফোনে কথা বলেছিল হাফিজুর। এরপর থেকে তার মোবাইলফোন বন্ধ। বন্ধুদের ভাষ্যমতে, সেদিন রাত আট-নয়টার দিকে হাফিজুর ব্রাহ্মণবাড়িয়া চলে যাওয়ার জন্য উদ্গ্রীব হয়ে ওঠে। ওই দিন থেকেই হাফিজুর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয় বলে জানান তার ভাই। এরপর হাফিজুরের পরিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
ওই জিডির সূত্র ধরেই হাফিজুরের পরিবারের সন্ধান পাওয়া যায় বলে জানান শাহবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মামুন অর রশিদ।
হাফিজুরের ‘আত্মহত্যার’ ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘১৫ মে রাতে ঢাকা মেডিকেল কলেজের বহির্বিভাগের সামনে ভ্রাম্যমাণ ডাবের দোকান থেকে দা নিয়ে তা দিয়ে নিজের গলায় কোপ দিচ্ছিলেন ২৩-২৪ বছরের এক যুবক৷ তাঁর গলা থেকে প্রচুর রক্ত ঝরছিল। কোপানোর সময় তিনি বারবার বলছিলেন, “আমাকে মাফ করে দাও, আমাকে মাফ করে দাও। সেখানে থাকা পথচারীরা তাঁকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। পরে সেখানে দায়িত্বরত শাহবাগ থানার দারোগা আল আমিনসহ কয়েকজন পুলিশ সদস্য তাঁকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে রিকশায় উঠিয়ে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়ার চেষ্টা করেন। তখন তিনি রিকশা থেকে লাফ দিয়ে নেমে পড়েন এবং বলতে থাকেন, “আমি চিকিৎসা করাবো না, আমাকে মাফ করে দাও। পরে অন্য লোকজনের সহযোগিতায় তাঁকে ঢাকা মেডিকেলে নেওয়া হয়।
ওসি বলেন, খবর পেয়ে ওই রাতেই তিনি ঢাকা মেডিকেলে যান। মেডিকেলে তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়। তাঁকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়, প্রয়োজনীয় রক্তের ব্যবস্থাও করা হয়। বাঁচানোর সর্বোচ্চ চেষ্টা করলেও রাত সাড়ে ১২টার দিকে তিনি মারা যান।