পর্তুগাল সরকারের জাতীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক ‘হেলদি নেইবারহুড’ কর্মসূচির জন্যে প্রবাসী বাংলাদেশি তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠান ‘পর্তুগাল মাল্টিকালচ্যারাল একাডেমি’কে নির্বাচিত করা হয়েছে।
উল্লেখ্য এটিই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশিদের কোনো প্রতিষ্ঠান যা জাতীয় স্বাস্থ্যবিষয়ক কর্মসূচির জন্য নির্বাচিত হলো।
এর ফলে আগামী এক বছর সরকারি অর্থায়নে বাংলাদেশ কমিউনিটিসহ পর্তুগালের রাজধানী লিসবনের অভিবাসীদের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিতে সহযোগিতা দিতে পারবে প্রতিষ্ঠানটি।
গত শুক্রবার স্থানীয় সময় বিকেলে লিসবনের অদূরে বারেইরো শহরে এক অনুষ্ঠানে নির্বাচিত প্রতিষ্ঠানগুলোর নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করে পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী আন্তোনিও কস্তা।
পুরো পর্তুগালের ৭৭৪টি প্রতিষ্ঠান এতে অংশ নিয়েছিল। তাদের মধ্যে ২৪৬টি প্রতিষ্ঠানকে আগামী এক বছরের জন্যে প্রস্তাবিত কর্মসূচি বাস্তবায়নে নির্বাচিত করা হয়।
লিসবনভিত্তিক বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠান ‘পর্তুগাল মাল্টিকালচ্যারাল একাডেমি’ ৬৭তম স্থান অর্জন করে প্রকল্পের জন্য নির্বাচিত হয়েছে। এই প্রকল্পের জন্য পর্তুগিজ সরকার ১০ মিলিয়ন ইউরো বরাদ্দ করেছে।
‘হেলদি নেইবারহুড’ কর্মসূচিতে নির্বাচিত প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশিদের প্রতিষ্ঠান মাল্টিকালচ্যারাল এখন থেকে সপ্তাহে তিন দিন একজন প্রবাসী বাংলাদেশি চিকিৎসক ও নার্স স্থানীয় স্বাস্থ্যকেন্দ্রের সহযোগিতায় কমিউনিটির স্বাস্থ্য সেবা ও পরামর্শ দেবে।
এ ছাড়া, অভিবাসীদের নানা সেবা নিশ্চিত ও সমস্যা সমাধানে সেসময়ে উপস্থিত থাকবেন স্থানীয় অভিবাসন কর্মী ও এনথ্রপলজিস্ট।
একাডেমি বছরব্যাপী সেমিনার, স্বাস্থ্য বিষয়ক কর্মশালা, সচেতনতা তৈরিসহ এই খাতের ওপর কয়েকটি জরিপ পরিচালনা করে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন দেবে।
২০১৮ সালে বাংলাদেশি তরুণদের উদ্যোগে, সুপরিসর ক্যাম্পাস নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে ‘পর্তুগাল মাল্টিকালচ্যারাল একাডেমি’। সেখানে দুই মাসের পর্তুগিজ কোর্সের পর দেওয়া হয় পর্তুগিজ ভাষা শিক্ষা সার্টিফিকেট, যা পর্তুগালের নাগরিকত্ব আবেদনের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য ও অপরিহার্য।
পর্তুগালে নানা দেশের অভিবাসীদের কাছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের এই প্রতিষ্ঠানের আলাদা সুনাম আছে। ২০১৯ সালে পর্তুগিজ ইমিগ্রেশন হাইকমিশনার প্রতিষ্ঠানটিতে পরিদর্শন করেছিলেন। তিনি সার্বিক পরিস্থিতি দেখে এর উদ্যোক্তাদের উৎসাহ দিয়েছিলেন।
করোনাকালে এসে প্রতিষ্ঠানটি জরুরি খাদ্য সহযোগিতা কর্মসূচি চালু করে। গত এক বছর স্থানীয় ফুড ব্যাংকের সহযোগিতায় সপ্তাহে নানা দেশের শতাধিক অভিবাসীকে সহযোগিতা দিচ্ছে।
পর্তুগাল ইমিগ্রেশন হাইকমিশন ও স্থানীয় একটি সংস্থার আর্থিক সহযোগিতায় এই কর্মসূচি করোনার জরুরি অবস্থা থাকা পর্যন্ত চলমান থাকবে।
বাংলাদেশি তরুণ উদ্যোক্তাদের প্রতিষ্ঠান ‘পর্তুগাল মাল্টিকালচ্যারাল একাডেমি’র এ সাফল্যে কমিউনিটির অন্যান্য সামাজিক সংগঠন, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গও অভিনন্দন জানিয়েছে।
তারা বলছেন, এর মাধ্যমে পর্তুগালে বাংলাদেশি কমিউনিটির সুনাম বেড়েছে এবং প্রত্যাশা করছেন প্রতিষ্ঠানটি এই প্রকল্পের আওতায় অভিবাসীবান্ধব কর্মসূচির মাধ্যমে কমিউনিটির ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল করবে।
তথ্য মতে, পর্তুগালে বর্তমানে বাংলাদেশসহ ১৩৭টিরও বেশি দেশের অভিবাসী বসবাস করছেন। পর্তুগালে বাংলাদেশি কমিউনিটি কয়েক দশক ধরে অত্যন্ত সুনামের সঙ্গে ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রসার ঘটাতে সক্ষম হয়েছে। বিশেষ করে, পর্তুগিজ সুভ্যেনিয়র ও হালাল মাংসের বাজার বহু বছর ধরে থেকেই বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা পরিচালনা করছেন।
সম্প্রতি, পর্তুগালে বাংলাদেশি কারি শিল্পের ব্যাপক উন্নতি ও চাহিদা তৈরি হয়েছে। বর্তমানে অনেকেই কৃষি ক্ষেত্রে নতুন নতুন উদ্যোগ নিয়ে প্রতিষ্ঠিত হচ্ছে।