মহান আল্লাহ কর্তৃক প্রেরিত গ্রন্থ পবিত্র আল-কোরআন। মানব কল্যাণের সুস্পষ্ট দিকনির্দেশনা রয়েছে এই গ্রন্থে। মানুষ অন্ধকার থেকে আলোর সন্ধান পেয়েছে এই গ্রন্থ পাঠ করে। শুধু তাই নয়, প্রতিদিন পবিত্র কোরআন পাঠ করলে দুনিয়া ও আখেরাতে অনেক কল্যাণ লাভ করা সম্ভব হয়।
প্রতিদিন কোরআন তেলাওয়াতকারীর জন্য যে সুসংবাদ রয়েছে, তাহলো-
কোরআন তেলাওয়াত জীবন চলার পথ সহজ করে
একটি জীবন চলার জন্য যা কিছু প্রয়োজন তার সবটাই রয়েছে কোরআনে। তাই কোরআন পাঠ ও আমল করে ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক এবং রাষ্ট্রীয় জীবন কীভাবে পরিচালিত করা যায় সে সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করা যায়। আর এই জ্ঞান জীবন চলার পথটিকে সহজ করে দেয়। এ বিষয়ে আল্লাহ ইরশাদ করেছেন : ‘আমি তোমার নিকট কিতাবটি নাজিল করেছি। এটি এমন যে তা সবকিছুর সুস্পষ্ট বর্ণনা, আর এটা হেদায়াত, রহমত ও মুসলিমদের জন্য সুসংবাদ স্বরূপ’। সূরা আননাহল : ৮৯
যে হৃদয়ে কোরআন আছে সে হৃদয় সেরা হৃদয়
মানব জাতিকে জাহিলিয়াতের অন্ধকার হতে উদ্ধার করে হেদায়েতের রাজপথ দেখিয়েছেন আল-কোরআন। এদিক দিয়ে কোরআন হচ্ছে উত্তম হেদায়েতকারী গ্রন্থ। কাজেই এ কোরআন যার অন্তরে নেই সে হৃদয় শূন্য ঘরের সমতুল্য তাতে কোন সন্দেহ নেই। রাসূল (সা) বলেছেন: যে হৃদয় আল-কোরআনের কোন জ্ঞান নেই সে হৃদয় শূন্য ঘরের সমতুল্য।(তিরমিযী)
কোরআন তেলাওয়াত ঈমান বৃদ্ধি করে
কোরআন তেলাওয়াতের মাধ্যমে বান্দার ঈমান বৃদ্ধি পায়। এ বিষয়ে আল্লাহ তায়ালা সূরা আনফালের ২নং আয়াতে এরশাদ করেন: ‘মুমিন তো তারা, যাদের অন্তরসমূহ কেঁপে উঠে যখন আল্লাহকে স্মরণ করা হয়। আর যখন তাদের উপর তাঁর আয়াতসমূহ পাঠ করা হয় তখন তা তাদের ঈমান বৃদ্ধি করে এবং যারা তাদের রবের উপরই ভরসা করে’।
অন্তরকে প্রশান্তি দেয় কোরআন
মানব জীবনে টাকা পয়সা বা অন্যান্য কারণে জাগতিক তৃপ্তি আসলেও প্রকৃত তৃপ্তি ও শান্তি কোরআন শিক্ষার মাধ্যমেই সম্ভব। এজন্য পবিত্র আল কোরআনে বলা হয়েছে: ‘যারা ঈমান আনে, বিশ্বাস স্থাপন করে এবং তাদের অন্তর আল্লাহর জিকির দ্বারা শান্তি লাভ করে। জেনে রাখ, আল্লাহর জিকির দ্বারাই অন্তরসমূহ শান্তি পায়’ (সূরা আর-রা‘দ:২৮)
কোরআন তেলাওয়াতকারী সুপারিশ করার অধিকার লাভ করেন
যে ব্যক্তি কোরআনের শিক্ষা লাভ করবে, নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত করবে এবং কোরআন অনুযায়ী নিজের জীবন গঠন করবে সে ব্যক্তি কিয়ামতের দিন তার পরিবারের সদস্যদের জন্য সুপারিশ করার অধিকার লাভ করবেন। এ সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেছেন: যে ব্যক্তি কোরআন পড়েছে এবং মুখস্থ করেছে; অতঃপর এর হালালকে হালাল এবং হারাম জেনে আমল করেছে, তাকে আল্লাহতায়ালা জান্নাতে প্রবেশ করাবেন এবং তার পরিবারের এমন দশ ব্যক্তি সম্পর্কে তার সুপারিশ গ্রহণ করবেন যাদের দোযখবাসী হওয়া অবধারিত ছিল। (ইবনে মাজাহ)
কোরআন তেলাওয়াত একটি লাভজনক ব্যবসা
বিভিন্ন ব্যবসায় লাভ এবং ক্ষতি দুটিরই সম্ভাবনা থাকে। কিন্তু এখানে লাভ ছাড়া কোন প্রকার ক্ষতির অংশ নেই। এ বিষয়ে আল্লাহ তা‘আলা সুরা ফাতিরে ২৯-৩০নং আয়াতে বলেন: ‘যারা আল্লাহর কিতাব পাঠ করে, সালাত কায়েম করে, আমার দেয়া রিজিক থেকে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে, তারাই আশা করতে পারে এমন ব্যবসার যা কখনো ক্ষতিগ্রস্ত হবে না। কারণ আল্লাহ তাদের কর্মের পূর্ণ প্রতিদান দেবেন এবং নিজ অনুগ্রহে আরও অধিক দান করবেন। তিনি ক্ষমাশীল ও দয়াবান।’
কোরআন পাঠকারীর পিতামাতাও সৌভাগ্যবান
নবী করীম (সা.) বলেন, যে ব্যক্তি কুরআন পাঠ করবে, শিক্ষা করবে ও তদানুযায়ী আমল করবে; তার পিতামাতাকে দু’টি পোশাক পরিধান করান হবে, যা দুনিয়ার সকল বস্তুর চেয়ে অধিক মূল্যবান। তারা বলবে, কোন আমলের কারণে আমাদেরকে এত মূল্যবান পোশাক পরানো হয়েছে? তখন বলা হবে, তোমাদের সন্তান কোরআন তেলাওয়াতের কারণে।(হাকেম)
জান্নাত পাওয়ার উত্তম মাধ্যম হলো কোরআন
যে ব্যক্তি কুরআন তেলাওয়াত ও মুখস্থ করেছে এবং যথাযথভাবে তার আমল করেছে তার জন্য রয়েছে বেহেশতের সুসংবাদ। এ প্রসঙ্গে রাসূল (সা.) বলেন: কিয়ামতের দিন কোরআন তেলাওয়াতকারীকে বলা হবে, কোরআন তিলাওয়াত করতে থাকো আর বেহেশতে প্রবেশ করতে থাকো। অন্য এক জায়গায় রাসূল (সা.) বলেছেন: কোরআনের সাথীকে বলা হবে, তুমি পড়তে থাক, আর উপরে আরোহন করতে থাক। তুমি দুনিয়ায় যেভাবে তিলাওয়াত করতে। তুমি সব শেষে যে আয়াত পড়বে সেখানেই তোমার বাসস্থান। (তিরমিযী)