রাজশাহীর বাজারে উঠেছে দেশি আগাম জাতের রসালো লিচু। অনেকে আবার লাভের আশায় আগেভাগেই বাজারে নিয়ে আসছেন অপরিপক্ক লিচু। কিন্তু মৌসুমের নতুন ফল হিসেবে তুলনামূলক একটু বেশি দামেই লিচু কিনতে হচ্ছে ক্রেতাদের।
ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, আরও কয়েকদিন পর বিভিন্ন উন্নত জাতের লিচু বাজারে পাওয়া যাবে। এখন প্রতি ১০০ লিচুর দাম সাড়ে ৩৫০-৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া শরীরে একটু কালো দাগ পড়া লিচু বিক্রি হচ্ছে ৩৫০-৩৮০ টাকা দরে। ফলে সাধ্যের বাইরে হওয়ায় আগাম লিচু কিনতে পারছে না নগরীর সাধারণ মানুষ। তবে বিভিন্ন জাতের লিচু উঠলে দাম কিছুটা কমতে পারে।
রবিবার (২ মে) নগরীর সাহেববাজার, বিন্দুরমোড়, লক্ষ্মীপুর, স্টেশন ও শালবাগান বাজার ছাড়াও শিরোইল বাস টার্মিনাল সংলগ্ন বিভিন্ন সড়কের দুই পাশে বাহারি এ ফলের পসরা সাজিয়ে বসেছেন মৌসুমী ব্যবসায়ীরা। ঝুড়ির মধ্যে চটের ভেজা বস্তা। তার ওপর সবুজ পাতায় মোড়ানো লাল আভার লিচুগুলো এখন থোকায়-থোকায় শোভা ছড়াচ্ছে। মৌসুমি ফল হিসেবে অনেকে বেশি দাম দিয়েই ক্রেতারা কিনছেন লিচু।
নগরীর সুলতানাবাদ এলাকার জামিল আহমেদ জানান, মেয়ের বায়নার কারণে সাহেব বাজারে লিচু কিনতে গিয়েছিলেন। কিন্তু দাম বেশি থাকায় ১০০টি লিচু কেনার ইচ্ছা থাকলেও শেষ পর্যন্ত ৫০টি কিনেছেন। তবে স্বাদ ও গুণে এখনও লিচু পরিপক্ক হয়নি। কেবলমাত্র বাড়তি মুনাফার আশায় ব্যবসায়ীরা গাছ থেকে লিচু ভাঙছেন। এগুলো দেশি জাতের লিচু। স্বাদেও টক-মিষ্টি। অনেকগুলো খুবই টক।
লিচুর জন্য বিখ্যাত না হলেও রাজশাহী অঞ্চলে উৎপাদিত হয় নানা জাতের লিচু। বৈচিত্র্যের কারণে সব ফল একই সময় পাকে না। ফলে পুরো জ্যৈষ্ঠ মাসজুড়ে বাজারে থাকে এর উপস্থিতি। এই দেশি জাতের লিচু গুলো একটু টক ও হালকা মিষ্টি। টসটসে মিষ্টি লিচু আসবে কিছু দিন পর। মাদ্রাজি, বোম্বাই, বেদানা, চায়না, কাঠালী বোম্বাই কোনোটাই এখন নেই বাজারে।
লিচু নিয়ে সাহেব বাজারে বড় মসজিদের সামনে ছিলেন ব্যবসায়ী মনির হোসেন। তিনি জানান, এখন পর্যন্ত তুলানামূলক ক্রেতার সংখ্যা কম। বাজারে বছরের প্রথমেই এই লিচু বাজারে উঠেছে। ৪০০ টাকা শ’ করে বিক্রি করছি।
কয়েকজন ক্রেতাদের সঙ্গে কথা হলে তারা বলেন, তবে মিষ্টি মধুর রসালো লিচুর দাম এবার বেজায় চড়া। প্রতি ১০০টি লিচুর দাম হাঁকা হচ্ছে ৪০০ টাকা পর্যন্ত। কয়েকদিন পরে আরও বিভিন্ন জাতের লিচু উঠবে। তখন অন্য লিচুও বিক্রি হবে, দামও কমবে। প্রথমবার বাজারে রসালো ফল দেখতে অনেক মানুষ বাজারে ভিড় করছেন।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, জেলায় এ বছর ৫৩০ হেক্টর জমিতে লিচুগাছ রয়েছে। প্রতি হেক্টরে ৭ মেট্রিক টন লিচু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা আছে। এরই মধ্যে রাজশাহীতে গাছে গাছে লিচু পাকতে শুরু করেছে।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আলীম উদ্দিন বলেন, কম সময় গাছে ও বাজারে থাকে বলে বিজ্ঞানীরা লিচুকে অতিথি ফল বলেন। গতবছর গাছে প্রচুর লিচু ধরেছিল। তাই এ বছর এমনিতেই লিচু কম ধরার কথা ছিল। এর ওপরে এবার ফুল থেকে গুটি আসা পর্যন্ত নানারকম বৈরী আবহাওয়ার মধ্যে পড়েছে লিচুগাছ। তাই ফলন হবে কম। রাজশাহী অঞ্চলে মূলত উন্নতমানের জাত হিসেবে পরিচিত বোম্বাই, মাদ্রাজি, কাদমি, মোজাফফরপুরী, বেদানা, কালীবাড়ি, মঙ্গলবাড়ি, চায়না-৩, বারি-১, বারি-২ ও বারি-৩ জাতের লিচু। রসালো এসব লিচুর উৎপাদনও বেশি, আকারও বড়।
মে মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে আগাম জাতের টক-মিষ্টি স্বাদের বারি-১ বাজারে আসতে শুরু করেছে। যা আকারে বোম্বাই বা মাদ্রাজি জাতের চেয়ে অনেক ছোট। এরপর বাজারে আসবে বারি-২ ও বারি-৩। বারি জাতের লিচু এক থেকে দেড় সপ্তাহের মধ্যে পেকে যায়। থাকবে জুনের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত। এরই মাঝে আসবে বোম্বাই, চায়না-৩, কাদমি, মোজাফফরপুরী, বেদানা, কালীবাড়ি, মঙ্গলবাড়িসহ অন্য জাতের লিচু। সবমিলিয়ে জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত টসটসে রসে ভরা লিচু থাকবে বাজারে।
নগরীর সাহেব বাজারের লিচু ব্যবসায়ী শামীম হোসেন জানান, বাজারে পুরোদমে লিচু আসা শুরু হয়নি। এ কারণে বর্তমানে লিচুর দাম বেশি। আগামী দুই সপ্তার মধ্যেই প্রচুর পরিমাণে লিচু বাজারে আসতে শুরু করবে। এছাড়া দিনাজপুর ও রাজশাহীর লিচু ভরপুর হলেই দাম সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে চলে আসবে। তখন সব ধরনের ক্রেতা লিচুর স্বাদ নিতে পারবে।