spot_img

ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধের দাবি বিএনপির

অবশ্যই পরুন

প্রতিবেশী দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাওয়ায় দেশের স্থল সীমান্ত বন্ধের পাশাপাশি বিমানপথে আসা যাত্রীদের দাবি জানিয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, ভারতের পশ্চিম বাংলায় এই সংক্রমণটা সবচেয়ে বেশি হয়েছে। সেজন্য আমরা মনে করি যে, ভারতের সাথে স্থল পথের যে সীমান্ত আছে, এই সীমান্তগুলো একেবারেই বন্ধ করা দরকার।

শনিবার (২৪ এপ্রিল) দুপুরে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি মহাসচিব এসব দাবি জানান। করোনাভাইরাস সংক্রমণের দ্বিতীয় টেউয়ে দেশের পরিস্থিতি ও করনীয় বিষয় তুলে ধরতেই এই ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে বিএনপি।

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ইতোমধ্যে আপনারা লক্ষ্য করেছেন- বলা হচ্ছে যে, বাইরে থেকে যারা আসবেন বিমানপথে, তাদেরকে মাত্র তিনদিন কোয়ারেন্টাইন করতে হবে। যেটা আমি বিশ্বের কোথাও শুনিনি। এই সব সিদ্ধান্তগুলো, এই সব সিদ্ধান্তগুলো আমাদের পরিস্থিতিকে ভয়ংকরভাবে নাজুক করে ফেলেছে।‌ এখন যে অবস্থাটা সৃষ্টি হয়েছে যে, লকডাউনের পরে একটা সপ্তাহ সবাই বাইরে চলে গেলো, এখন আবার বলা হচ্ছে যে, আগামী রোববার থেকে শপিংমল-দোকানপাট খুলে দেয়া হবে।

আজকের পত্রিকায় এসেছে যে, যারা এসব দোকানপাটে কাজ করছেন, ছোট ছোট দোকান যারা করেন তারা সবাই বাইরে চলে গিয়েছিলো তারা আবার ফিরতে শুরু করেছেন। আবার ঈদের আগে তারা আবার গ্রামের ফিরে যাবেন। ফলে কী হবে? সারা দেশেই করোনাভাইরাসের সংক্রামণ মারাত্মকভাবে বৃদ্ধি পাবে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশে যে ভেরিয়েন্ট এসেছে তা ভয়াবহভাবে বাংলাদেশে ছড়িয়েছে। এমন একটা পরিবার নেই যেখানে এই সংক্রামণ যায়নি। এমনকি শিশু পর্যন্ত এবার বাদ পড়ছে না। আমরা এ বিষয়ে আগেও বলেছি। এখনো আমরা সরকারকে বলতে চাই যে, এই বিষয়গুলো অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা দরকার এবং একটা পরিকল্পিত, সমন্বিত সিদ্ধান্ত গ্রহন করা প্রয়োজন। এতো লেজে গোবরে করে ফেলেছে যেন এখন কোনটাই সামাল দিতে পারছে না।

মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার লকডাউন কার্য্কর করতে ব্যর্থ হয়েছে। তার প্রধান কারণ লকডাউনের শর্তানুযায়ী খেটে খাওয়া মানুষের জন্য খাদ্যসংস্থান না করা এবং নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য অর্থ সংস্থানের ব্যবস্থা করা এবং নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য অর্থ সংস্থানের ব্যবস্থা না করা। এর কিছুই না করে মানুষকে ঘরে থাকতে বাধ্য করা রীতিমতো অমানবিক ও অর্থহীন প্রচেষ্টা।
তিনি বলেন, লকডাউন ঘোষণার আগেই জনগনের মৌলিক চাহিদা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের মৌলিক দায়িত্ব। শুধুমাত্র ঘোষণা দিয়ে মানুষকে ঘরের ভেতরে রাখা যাবে না। কারণ মানুষের খাদ্যের প্রয়োজন হয়। এদেশের ৮৬ শতাংশ মানুষ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন সেকথা একবারের জন্য মনে করা হয়নি।

করোনার দ্বিতীয় ধাপ মোকাবিলায় লকডাউনের ফলে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ ‘দিন আনে দিন খায়’ গরীব দিনমজুর, পেশাজীবী ও নিম্ন আয়ের মানুষের প্রত্যেককে অনতিবিলম্বে রাষ্ট্রীয় বিশেষ তহবিল থেকে বিশেষ বরাদ্ধের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে তিন মাসের জন্য ১৫ হাজার টাকা এককালীন নগদ অর্থ পৌঁছিয়ে দেয়া, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্তরত শ্রমিকদের প্রত্যেককে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে বিশেষ বরাদ্ধের মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে তিন মাসের জন্য ১৫ হাজার টাকা এককালীন নগদ অর্থ প্রদান, সমগ্র দরিদ্র জনগোষ্ঠিকে ‘সুরক্ষায় সহায়তা’ প্যাকেজের আওতায় আনা, নিরপেক্ষভাবে দুঃস্থ উপকারভোগীদের তালিকা প্রস্তুত করা, ক্ষতিগ্রস্থ এসএমই, প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক শিল্প ও কৃষিখাতে রাষ্ট্রীয় তহবিল থেকে বিশেষ প্রণোদনা বরাদ্ধ, রাজনৈতিক বিবেচনা না করে ক্ষতিগ্রস্থ শিল্পোদ্যোক্তা ও ক্ষতিগ্রস্থ প্রবাসীদের রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে ঋণ প্রণোদনা প্রদান, উদ্যোক্তাদের পূঁজির ব্যবস্থার সুনিদিষ্ট প্রস্তাব দলের পক্ষ থেকে তুলে ধরেন বিএনপি মহাসচিব।

একই সঙ্গে ২০২০ সালের এপ্রিলে বিএনপির পক্ষ থেকে বিভিন্নখাতে ৮৭ হাজার কোটি টাকার প্যাকেজ প্রণোদনা প্রস্তাব যথাযখভাবে মূল্যায়ন করে দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের মনে রাখতে হবে, আমরা পুরো জাতি আজ মহাসংকটের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত করছি। এই মুহুর্তে বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থে দলমত নির্বিশেষে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে ঐক্যবদ্ধ ও সমন্বিত পরিকল্পনা গ্রহণ করে আমাদেরকে এই দুযোর্গ মোকাবিলা করতে হবে। অন্যথায় এর দায় সরকারকেই বহন করতে হবে।

তিনি বলেন, সরকার ২৩ প্যাকেজের মধ্যে প্রায় সোয়া একলাখ কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষাণা করেছিলো। তাদের ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজের অর্ধেকই পৌঁছায়নি ভুক্তভোগীদের কাছে। ঘোষিত প্যাকেজের ৫০ হাজার ৯৫৭ কোটি টাকা বিতরণ সম্ভব হয়নি, যা মোট ঘোষিত অর্থের প্রায় ৪২ শতাংশ। যদি প্রণোদনা প্যাকেজের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই সংশ্লিষ্ট ব্যাংক ও মন্ত্রণালয়কে শতভাগ অর্থ বিতরণের জন্য অক্টোবর পর্যন্ত সময় বেধে দেয় অর্থ মন্ত্রণালয়। প্যাকেজ বাস্তবায়নে সরকারের উদাসীনতা ও আন্তরিকতার অভাবই এজন্য দায়ী।

মির্জা ফখরুল বলেন, করোনার টিকা সংগ্রহে স্বেচ্ছাচারিতা ও নতুন অনিশ্চয়তা গোটা জাতিকে হতাশ করে তুলেছে। রাষ্ট্রীয় অর্থ ব্যবহার করে সরকারের শীর্ষ নেতৃত্বের ঘনিষ্ঠ ও শেয়ারবাজার লুটপাটে অভিযুক্ত এক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানকে টিকা সরবারহের একচেটিয়া সুবিধা দিতে গিয়ে আজ সমগ্র জাতিকে এক ভয়াবহ স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে ফেলে দিয়েছে ভোটারবিহীন দুর্নীতিবাজ বর্তমান এই সরকার।

তিনি বলেন, একই উৎস্য থেকে টিকা সংগ্রহ করতে গিয়ে আজকে এই সংকট সৃষ্টি হয়েছে। প্রথম থেকেই ভারতের বিকল্প সূত্র থেকে টিকা কেনার কথা আমরা বার বার করে বলেছি, বিকল্প উৎস থেকে টিকা সংগ্রহের কথা বলেছি। কিন্তু কোনটাই করা হয়নি। ফলে আজকে একটা ভয়ংকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। যদিও এখন আমরা দেখতে পারছেন যে, শেষ সময় এসে সরকার রাশিয়া ও চীনের সঙ্গে পাওয়ার জন্য গ্রুপ তৈরি করে ভ্যাকসিন সংগ্রহের চিন্তা করছে। আমাদের মনে হয় সেটা দেরি হয়ে গেছে ইতোমধ্যে। আগে করতে পারলে অনেকটা কম হতে পারতো।

লকডাউনের সুযোগে বিরোধীদলের উপর নিপীড়নের অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল বলেন, লকডাউনের নামে সরকার মূলত বিএনপিসহ বিরোধী রাজনৈতিক দল ও আন্দোলনকারী আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে ক্র্যাকডাউন ঘোষণা করেছে। লকডাউন শুরুর দিন থেকেই সারাদেশে ব্যাপকভাবে বিরোধী রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের ঢালাওভাবে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। দেশের প্রখ্যাত আলেম-ওলামাসহ বিএনপি ও এর অংগসংগঠনের শত শত নেতাকর্মীকে নির্বিচারে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন চালানো হচ্ছে।

তিনি বলেন, সরকারের অপকর্ম, দুর্নীতি, অত্যাচার, নির্যাতন ও ফ্যাসিবাদী শাসনের বিরুদ্ধে যাতে কেউ কোনো শব্দ উচ্চারণ করতে না পারে সেজন্য সবাইকে কোনো না কোনোভাবে নির্বতনমূলক আইনের আওতায় এনে কন্ঠ রোধ করা হচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে দলের নেতাকর্মীদের যার যার সাধ্য অনুযায়ী ‘দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের’ পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

করোনা মোকাবিলায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশ তাদের জিডিপির ৫০ শতাংশ বরাদ্ধের পরিসংখ্যান তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, বাংলাদেশ ১ দশমিক ৪ শতাংশ। বাংলাদেশের আর্থিক বরাদ্ধ নিয়ে আইএমএফের বিশ্লেষনে উঠে এসেছে রাজস্ব থেকে ঘোষিত প্রণোদনার মধ্যে উপকারভোগীদের মাছে মাত্র ১৬ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। সেই বিবেচনায় জিডিপির অনুপাতে জনগণকে আর্থিক সহায়তা দেয়ার দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বের অন্যান্য দেশের তুলনায় একেবারেই তলানীতে রয়েছে। এমন অবস্থায় সরকারকে নতুন করে যুগোপযোগী অর্থনৈতিক প্রণোদনা পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিতে হবে।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ খাদ্য নিরাপত্তার ঝুঁকিতে রয়েছে। আজকে অনেক পত্রিকায় এসেছে যে, সবচেয়ে কম মজুদ এবার তিন লক্ষ টন। যেখানে ১১ লক্ষ টন থাকার কথা। এবার চালের মজুদ কম থাকায় আগে খাদ্য আমদানি করার কথা থাকলেও সেটা হয়নি। পত্রিকায় এসেছে যে, খাদ্য মন্ত্রীও এ বিষয়ে কোনো সন্তোষজনক জবাব দিতে পারছেন না। মজুদদাররা মাঠ থেকে চড়া দামে ধান কিনে ফেলছে। সরকার এখনো ধান কেনা শুরু করেনি।

তিনি বলেন, আমরা সঠিক মূল্য নির্ধারণ করে অবিলম্বে কৃষকদের কাছ থেকে ধান ক্রয়ের জন্য আহ্বান জানাচ্ছি এবং স্বল্প দামে জনগনের কাছে তা পৌঁছানোর জন্য ওএমএস কর্মসূচি দ্রুত বাড়ানোর অনুরোধ করছি জানাচ্ছি।

সর্বশেষ সংবাদ

গুঞ্জন উড়িয়ে ম্যানসিটিতে আরও ২ বছর থাকছেন পেপ গার্দিওলা

গুঞ্জন ছিল ম্যানচেস্টার সিটি ছেড়ে ব্রাজিলের দায়িত্ব নিতে পারেন কোচ পেপ গার্দিওলা। কিন্তু ব্রাজিলিয়ান সমর্থকদের কষ্ট দিয়ে বৃহস্পতিবার (২১...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ