করোনাভাইরাস মহামারির দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবিলা করছে ভারত। ভয়াবহ এই পরিস্থিতিতে দিল্লির হাসপাতালগুলোতে দেখা দিয়েছে অক্সিজেনের তীব্র সংকট। কিন্তু এরপরও যেন এ বিষয়ে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেই। আর এতেই ক্ষুব্ধ দিল্লি হাইকোর্ট বলছে, সরকারের কাছে মানুষের জীবনের কোনো গুরুত্ব নেই। সরকার অক্সিজেনের প্রয়োজন নিয়ে ভাবে না।
বুধবার (২১ এপ্রিল) দুপুর থেকেই দিল্লির একের পর এক বড় হাসপাতালে অক্সিজেনের অভাব দেখা দিতে শুরু করে। উপায় না পেয়ে সন্ধ্যায় দিল্লির পটপরগঞ্জের ম্যাক্স হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দিল্লি হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয়ে জানায়, তাদের কাছে আর মাত্র তিন ঘণ্টার অক্সিজেন রয়েছে। ৪০০ রোগীর মধ্যে ২৬২ জনের জীবন আশঙ্কাজনক।
এরপর রাতেই জরুরি ভিত্তিতে হওয়া শুনানিতে বিচারপতি ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, (অক্সিজেন সংকটের কথা জানাতে) কেবল একটি হাসপাতাল আদালতে এসেছে। অন্য হাসপাতালেও একই অবস্থা। সারা দেশেই অক্সিজেনের সংকট রয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকার কেন এ বিষয়ে আগে ভাবেনি, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন বিচারপতিরা।
তারা বলেন, ‘এর অর্থ হল, সরকারের কাছে মানুষের জীবনের তেমন গুরুত্ব নেই। আমরা হতভম্ব যে, সরকার অক্সিজেনের প্রয়োজন নিয়ে ভাবে না।’
অক্সিজেন সরবরাহ বন্ধ হয়ে গেলে ‘নারকীয় পরিস্থিতি’ তৈরি হবে বলেও মন্তব্য করেন বিচারপতিরা। এসময় ভিক্ষা করে, ধার করে, চুরি করে— যেভাবে হোক, মোদি সরকারকে দেশের হাসপাতালে অক্সিজেন সরবরাহ অব্যাহত রাখতেই হবে বলে বুধবার নির্দেশ দেন দিল্লি হাইকোর্ট।
ভারতের রাজধানী দিল্লিসহ বিভিন্ন রাজ্যে কোভিড রোগীদের জন্য অক্সিজেনের তীব্র হাহাকারের মধ্যেই বুধবার মোদি সরকারকে দিল্লি হাইকোর্ট মনে করিয়ে দিয়েছে যে, গুরুতর অসুস্থ নাগরিকের জীবনের অধিকার, চিকিৎসা পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করা কেন্দ্রীয় সরকারের দায়িত্ব। যেসব রোগীর অক্সিজেন প্রয়োজন, যেকোন উপায়ে তাদের অক্সিজেন দিতে হবে।
উল্লেখ্য, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার কয়েকদিন আগে শিল্পকারখানায় অক্সিজেন সরবরাহ নিষিদ্ধ করে। অর্থাৎ সংকট মেটাতে চিকিৎসার জন্যই কেবল অক্সিজেন সরবরাহ করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। তবে ইস্পাত উৎপাদনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজস্ব অক্সিজেন উৎপাদন ব্যবস্থা রয়েছে, তাই তাদের বাইরে থেকে সরবরাহ করা হয় না।
এ নিয়ে বিচারপতিরা প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘এখনও ওই সংস্থাগুলোর থেকে অক্সিজেন নিচ্ছে না কেন কেন্দ্রীয় সরকার? আমরা বিস্মিত যে, হাসপাতালে অক্সিজেন ফুরিয়ে যাচ্ছে অথচ ইস্পাত কারখানায় অক্সিজেন যাচ্ছে। কেন সরকারের ঘুম ভাঙছে না? আমরা মানুষকে মরতে দিতে পারি না।’
আদালতের আদেশ, সকল ইস্পাত কারখানা থেকে অক্সিজেন চিকিৎসার জন্য পাঠাতে হবে। প্রয়োজনে পেট্রোলিয়াম কারখানা থেকেও অক্সিজেন পাঠাতে হবে। আর তাতে প্রয়োজন হলে উৎপাদন বন্ধ রাখতে হবে।