করোনাভাইরাসের ‘তৃতীয় ঢেউ’ নিয়ে দুশ্চিন্তায় জার্মানি। দেশটিতে শিথিল হচ্ছে না লকডাউন। সম্ভবত আরো কড়া লকডাউনের পথই বেছে নিচ্ছে জার্মানি। সোমবার চ্যান্সেলর ম্যার্কেল ও মুখ্যমন্ত্রীরা সেই সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। করোনা সঙ্কটের ‘তৃতীয় ঢেউ’ নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছে দেশটির বিশেষজ্ঞরা।
বেশ কয়েক মাস ধরে জার্মানিতে লাগাতার লকডাউন চলছে। কখনো বিধিনিষেধ কঠোর করা হচ্ছে, কখনো সামান্য শিথিল। করোনা সঙ্কট মোকাবেলায় সরকার ও প্রশাসন অন্য কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। ফলে জোরালো সমালোচনাও শুনতে হচ্ছে দেশটির সরকারে থাকা লোকদের।
একাধিক সূত্র মতে, সোমবার জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীরা বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে পর্যালোচনা করে লকডাউনের মেয়াদ ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়াতে চলেছেন। একইসাথে করোনা সংক্রমণের হার কমাতে আরো কঠোর পদক্ষেপও ঘোষণা করতে পারেন তারা। রাত থেকে ভোর ৫টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করার প্রস্তাবও বিবেচনা করা হচ্ছে।
রোববার জার্মানিতে প্রতি এক লাখ মানুষের মধ্যে সাপ্তাহিক গড় সংক্রমণের হার ১০০ পেরিয়েছে। গত সপ্তাহের শেষে করোনা পরীক্ষার সব তথ্য রবার্ট কখ ইনস্টিটিউটের কাছে না পৌঁছানোর কারণে প্রকৃত চিত্র পাওয়া যায়নি। চলতি সপ্তাহে সংক্রমণের হার আরো বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। হাসপাতালের ইন্টেনসিভ কেয়ার ইউনিটগুলোতে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা বেড়েই চলেছে।
দেশটির বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মে মাসের শুরুতে প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের এমন জরুরি চিকিৎসার প্রয়োজন পড়তে পারে। আসন্ন ইস্টারের ছুটিতে পরিস্থিতির আরো অবনতি এড়াতে কঠোর পদক্ষেপের প্রয়োজন। কিন্তু সরকারের প্রতি মানুষের বেড়ে চলা অসন্তোষ সত্ত্বেও কড়াকড়ি কার্যকর করা বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠতে পারে। দুর্নীতি কেলেঙ্কারি ও সঙ্কট মোকাবেলায় সরকারের ব্যর্থতার অভিযোগ জোরালো হচ্ছে।
মোটকথা জার্মানিতে করোনা সংক্রমণের চলমান ‘তৃতীয় ঢেউ’ আরো মারাত্মক পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে।
এখনো সবার জন্য সহজে করোনা পরীক্ষা ও করোনার টিকার যথেষ্ট জোগান না থাকায় পরিস্থিতির উন্নতির আশা অত্যন্ত ক্ষীণ। এপ্রিল মাস থেকে টিকার সরবরাহ বাড়তে শুরু করলে এবং দেশজুড়ে টিকাদানকর্মসূচির গতি বাড়ানো সম্ভব হলে কিছু অগ্রগতি সম্ভব। তার আগে সংক্রমণ ও মৃত্যুর হার নিয়ন্ত্রণে রাখতে যথাসাধ্য চেষ্টা করার উপর জোর দিচ্ছে প্রশাসন।
দেশটির চ্যান্সেলর ও মুখ্যমন্ত্রীরা গত বৈঠকে বিধিনিষেধ আরো শিথিল করার আশা প্রকাশ করেছিলেন। গত বৈঠকে কড়া শর্তে চুল কাটার সেলুন, দোকান-বাজার ইত্যাদি খোলার পর চলতি সপ্তাহে খোলা আকাশের নিচে রেস্তোরাঁ খোলার মতো সিদ্ধান্ত নেবার কথা ছিল। বেড়ে চলা সংক্রমণের হার ওই প্রত্যাশা কেড়ে নিচ্ছে। এমন বিলম্বের ফলে বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে যেতে পারে।
সূত্র : ডয়চে ভেলে