কারাগারে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ করা ২৪ বাংলাদেশিকে বিজিবির কাছে হস্তান্তর করেছে মিয়ানমার। টেকনাফ বিজিবি ও মিয়ানমার ৪ নম্বর বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্রাঞ্চের মধ্যে মংডুতে সোমবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকালে পতাকা বৈঠক শেষে তাদের হস্তান্তর করা হয়।
ফেরত আসা বাংলাদেশিরা দুই থেকে সাড়ে ৫ বছর কারা ভোগ করে মানবেতর জীবনযাপন করেছেন বলে জানান তারা। তাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য পরীক্ষা শেষে উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইনে পাঠানো হয়েছে। বিভিন্ন সময়ে নাফনদী, সাগরে মাছ শিকার এবং মালয়েশিয়া যাত্রাকালে আইনশৃঙ্খলাবাহিনীর সদস্যরা তাদের গ্রেপ্তার করেন।
বিজিবি জানায়, মংডুতে বেলা ১১টায় এক বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে বিজিবি-২ ব্যাটালিয়ন অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ফয়সল হাসান খান নেতৃত্বে ৯ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল ও মিয়ানমার সামরিক জান্তার মংডুর ৪ নম্বর বর্ডার গার্ড পুলিশ ব্রাঞ্চের কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল জু লিন অং নেতৃত্বে ৭ সদস্যের প্রতিনিধি দল যোগ দেন।
বাংলাদেশ প্রতিনিধি দল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ফেরত নাগরিকদের নিয়ে টেকনাফ পৌরসভার চৌধুরী পাড়া সংলগ্ন বাংলাদেশ-মিয়ানমার ট্রানজিট ঘাটে পৌঁছায়। পরে দুপুর দেড় টার দিকে জেটি ঘাটে দুই এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ ফয়সল হাসান খান সংবাদ সম্মেলন করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, বিজিবি দুইয়ের উপ অধিনায়ক মেজর রুবায়াৎ কবীর, অপারেশন অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্মকর্তা মুহতাসিম শাকিল, এডিসি নাজমুল হুদা ও উপজেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি উপজেলা সিনিয়র মৎস কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন প্রমুখ।
সংবাদ সম্মেলনে বিজিবির অধিনায়ক মোহাম্মদ ফয়সল হাসান খান জানান, ‘বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ভোগ করা ২৪ বাংলাদেশিকে ফেরত আনা হয়েছে। এসব ব্যক্তিরা মালয়েশিয়া ও সাগরে মাছ শিকারের সময় মিয়ানমারের হাতে আটক হয়েছিল। তাদের সাজাভোগ শেষে তাদের পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি পাওয়ার পর দুই দেশের বৈঠকের মাধ্যমে ফেরত আনা হয়। সে দেশের কারাগারে আরও বাংলাদেশি রয়েছে। তাদেরও একই প্রক্রিয়ায় ফেরত আনার চেষ্টা চলছে বলে জানায় বিজিবির এই কর্মকর্তা।’
সব চেয়ে বেশি সাজা ভোগ করে ফেরত আসা রহমত উল্লাহ ও মোহাম্মদ সেলিম জানায়, ‘সাড়ে পাঁচ বছর মিয়ানমারের কারাগারে সাজা ভোগ করেছি। সাগরে মাছ ধরতে গেলে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ আমাদের ধরে নিয়ে যায়। পরে তাদের সাজা দেওয়া হয়। সেদেশে কারাগারে অনেক কষ্ট। তাঁরা ঠিকমত খাবার দিতেন না। কারাগারে আরও অনেক বাংলাদেশী কষ্টে দিন পার করছেন। তাদেরও ফেরত আনার উদ্যোগ নিতে সরকারের কাছে অনুরোধ জানাই। পাশাপাশি সরকারকে ধন্যবাদ জানাই, আমাদের ফেরত আনার জন্য।’