সরকারি হেফাজতে থাকা অবস্থায় পাকিস্তানের জঙ্গি সংগঠন তেহরিক-ই-তালেবানের (টিটিপি) সাবেক মুখপাত্র এহসানউল্লাহ এহসান কী করে পালিয়ে গেল, সে ব্যাপারে প্রশ্ন তুলেছেন শান্তিতে নোবেলজয়ী পাকিস্তানের নারীশিক্ষা আন্দোলনের কর্মী মালালা ইউসুফজাই।
টুইটারে এহসানের অ্যাকাউন্ট থেকে হত্যার হুমকি দেওয়ার জেরে এ ব্যাপারে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী এবং সে দেশের সেনাবাহিনীর কাছে জবাব চেয়েছেন ২৩ বছর বয়সী মালালা। টাইমস অব ইন্ডিয়া এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মালালা ইউসুফজাইকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। আগে যেই ব্যক্তি হামলা চালিয়েছিলেন, এবার হুমকি দেওয়া ব্যক্তি তিনিই।
প্রসঙ্গত, এহসানউল্লাহ এহসান ২০১২ সালে মালালা ইউসুফজাইয়ের ওপর হামলা চালিয়েছিলেন। গত বুধবার টুইটারে আবারো নিজের অ্যাকাউন্ট থেকে মালালাকে হুমকি দিয়ে বলা হয়েছে, সোয়াতে নিজের আসল বাড়িতে ফিরে আসুন, আপনার ও আপনার বাবার (জিয়াউদ্দীন ইউসুফজাই) সঙ্গে আমাদের বিশেষ অসম্পূর্ণ কাজ আছে। শুরু করা সেই কাজটা শেষ করতে চাই। পরেরবার আর কোনো ভুল করা হবে না বলেও জানান এহসান।
হুমকি পাওয়ার পর এক টুইট বার্তায় মালালা লেখেন, তেহরিক-ই-তালেবান পাকিস্তানের (টিটিপি) সাবেক মুখপাত্র তিনি। আমার ওপর এবং অসংখ্য নিরীহ মানুষের ওপর হামলার দায় স্বীকার করেছেন তিনি। তিনি এখন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে মানুষকে হুমকি দিচ্ছেন। তিনি কীভাবে পালিয়ে গেলেন? প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান এবং মেজর জেনারেল বাবব ইফতেখারের কাছে সে ব্যাপারে জানতে চেয়েছেন মালালা।
যদিও ইমরান খানের মুখপাত্র আর্সলান খালিদ জানিয়েছেন, এহসানের নামে টুইটারে ওই অ্যাকাউন্টটি ভুয়া। ভুয়া অ্যাকাউন্ট এবং পাকিস্তানে চরমপন্থা জিরো টলারেন্সে রয়েছে। ভুয়া অ্যাকাউন্সের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য টুইটার কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হয়েছে বলেও জানান তিনি।
মালালাকে হুমকি দেওয়ার ঘটনায় টুইটার কর্তৃপক্ষ অবশ্য গত বুধবার এহসানউল্লাহ এহসানের অ্যাকাউন্ট বন্ধ করে দিয়েছে।
প্রসঙ্গত, পাকিস্তানের প্রত্যন্ত সোয়াত উপত্যকায় জন্ম নেওয়া মালালা ইউসুফজাই তালেবানের বাধা উপেক্ষা করে নারীদের শিক্ষা দেওয়ার কাজ করে যাওয়ায় ২০১২ সালে জঙ্গিদের হামলার শিকার হন।
পরে মালালা ইউসুফজাইকে গুলি করার বিষয়টি স্বীকার করে নেন এহসান। ২০১৪ সালে সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন মালালা।
গত বছরের ১১ জানুয়ারি পাকিস্তান সরকারের হেফাজত থেকে পালিয়ে যান এহসান। এ নিয়ে পাকিস্তানে ব্যাপক শোরগোল পড়ে।
এহসানের পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি পাকিস্তানের বিরোধী দলের পক্ষ থেকে সরকারের অযোগ্যতা হিসেবে তুলে ধরা হয়। গত বছরের জানুয়ারিতে ফাঁস হওয়া এক অডিও বার্তায় এহসান বলেন, পাকিস্তানের কারাগার থেকে পালাতে সক্ষম হয়েছি। যদিও তা পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে নিশ্চিত করা হয়নি।
ওই সময় এহসান এক অডিও বার্তায় বলেন, আমি এহসানউল্লাহ এহসান। তেহরিক-ই-তালিবানের সাবেক মুখপাত্র। ২০১৭ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে বিশেষ চুক্তিতে আত্মসমর্পণ করি। প্রায় তিন বছর ওই চুক্তির প্রতি আমি সম্মান দেখিয়েছি। কিন্তু পাকিস্তান কর্তৃপক্ষ চুক্তি লঙ্ঘন করে আমার সন্তানসহ আমাকে জেলে আটকে রাখে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া