তফসিলি ব্যাংকগুলোর লভ্যাংশ দেওয়ার ক্ষেত্রে নতুন একটি নীতিমালা ঘোষণা করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংক। চলমান করোনা সংকটে ব্যাংকের আর্থিক সক্ষমতা এবং ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের রিটার্নের বিষয়টি বিবেচনা করে এ লভ্যাংশ দেওয়ার নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।
রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের ডিপার্টমেন্ট অব অফ-সাইট সুপারভিশন থেকে ২০২০ সালের জন্য শেয়ারের বিপরীতে লভ্যাংশ ঘোষণার নীতিমালা সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনটি দেশে কার্যরত সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে পাঠানো হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বর্তমানে দেশে ভ্যাকসিন প্রয়োগের মাধ্যমে বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে করোনামুক্ত রাখার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। একই সঙ্গে সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত বিভিন্ন আর্থিক ও নীতি সহায়তামূলক প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নের মাধ্যমে অর্থনীতির গতি ফিরিয়ে এনে জাতীয় অগ্রগতিকে করোনা সংক্রমণের পূর্ববর্তী ধারায় উপনীত করার কার্যক্রমও অব্যাহত আছে। এরূপ পরিস্থিতিতে আসন্ন বছরগুলোতে ব্যাংকগুলোর মূলধন কাঠামো অধিকতর সুসংহত করার প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে।
এজন্য ব্যাংকের আর্থিক সক্ষমতা এবং ব্যাংকের শেয়ারে বিনিয়োগকারীদের রিটার্নের বিষয়টি সামগ্রিকভাবে বিবেচনা করে শেয়ারের বিপরীতে ডিভিডেন্ড দিতে হবে।
ক)(১) প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ইতোপূর্বে গৃহীত ডেফারেল সুবিধার অধীনে নয় বা বিবেচ্য পঞ্জিকাবর্ষে এরূপ কোনো ধরনের ডেফারেল সুবিধা গ্রহণ ব্যতিরেকে যেসব ব্যাংক ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ২.৫ শতাংশ ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফারসহ ন্যূনতম ১৫ শতাংশ বা তার বেশি মূলধন সংরক্ষণ করতে সক্ষম হবে, সেসব ব্যাংক তাদের সামর্থ্য অনুসারে সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ নগদসহ মোট ৩০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারবে।
(২) প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ইতোপূর্বে গৃহীত ডেফারেল সুবিধার অধীনে নয় বা বিবেচ্য পঞ্জিকাবর্ষে এরূপ কোনো ধরনের ডেফারেল সুবিধা গ্রহণ ব্যতিরেকে যেসব ব্যাংক ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ২.৫ শতাংশ ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফারসহ ন্যূনতম ১৩.৫ শতাংশ থেকে অনূর্ধ্ব ১৫ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ করতে সক্ষম হবে, সেসব ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে তাদের সামর্থ্য অনুসারে সর্বোচ্চ ১২.৫ শতাংশড় নগদসহ মোট ২৫ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারবে।
(৩) প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ইতোপূর্বে গৃহীত ডেফারেল সুবিধার অধীনে নয় বা বিবেচ্য পঞ্জিকাবর্ষে এরূপ কোনো ধরনের ডেফারেল সুবিধা গ্রহণ ব্যতিরেকে যেসব ব্যাংক ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফারসহ ন্যূনতম ১১.৮৭৫ শতাংশ মূলধন সংরক্ষণ করতে সক্ষম হবে, সেসব ব্যাংক, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে তাদের সামর্থ্য অনুসারে সর্বোচ্চ ৭.৫ শতাংশ নগদসহ মোট ১৫ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারবে। এরূপ যেসব ব্যাংকের মূলধন সংরক্ষণের পরিমাণ ১১.৮৭৫ শতাংশের কম হবে, সেসব ব্যাংকের ডিভিডেন্ড ঘোষণার ক্ষেত্রে অনুচ্ছেদ খ(৩) এ উল্লিখিত পরিমাণ অনুসৃত হবে।
খ)(১) প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিবেচ্য পঞ্জিকাবর্ষের জন্য গৃহীত বা ইতোপূর্বে গৃহীত ডেফারেল সুবিধা বাদে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে যেসব ব্যাংকের মূলধন ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফারসহ ন্যূনতম ১২.৫ শতাংশ বা তার বেশি হয়, সেসব ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে সর্বোচ্চ ৬ শতাংশ নগদসহ মোট ১২ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারবে।
(২) প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিবেচ্য পঞ্জিকাবর্ষের জন্য গৃহীত বা ইতোপূর্বে গৃহীত ডেফারেল সুবিধা বাদে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে যেসব ব্যাংকের মূলধন ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফারসহ ন্যূনতম ১১.৮৭৫ শতাংশ থেকে অনূর্ধ্ব ১২.৫ শতাংশ হয়, সেসব ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ নগদসহ মোট ১০ শতাংশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারবে।
(৩) প্রভিশন সংরক্ষণসহ অন্যান্য ব্যয় মেটানোর জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে বিবেচ্য পঞ্জিকাবর্ষের জন্য গৃহীত বা ইতোপূর্বে গৃহীত ডেফারেল সুবিধা বাদে ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের বিপরীতে যেসব ব্যাংকের ন্যূনতম মূলধন ক্যাপিটাল কনজারভেশন বাফারসহ অন্যূন ১০.৬২৫ শতাংশ থেকে অনূর্ধ্ব ১১.৮৭৫ শতাংশ হয়, সেসব ব্যাংক বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদনক্রমে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ স্টক ডিভিডেন্ড ঘোষণা করতে পারবে।
ব্যাংক কোম্পানি আইন, ১৯৯১ এর ৪৫ ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশ জারি করা হলো। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর সমাপ্ত হিসাববছরের জন্য ডিভিডেন্ড ঘোষণার ক্ষেত্র থেকে সব তফসিলি ব্যাংকের জন্য প্রযোজ্য হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।