আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত বা আইসিসি বলেছে, ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরাইলি যুদ্ধ অপরাধের তদন্ত ও বিচার করার অধিকার রাখে আইসিসি। ফিলিস্তিন স্বশাসন কর্তৃপক্ষের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের এক আবেদনের জবাবে এই ঘোষণা দিল আন্তর্জাতিক বিচারিক এ সংস্থাটি। আইসিসি’র প্রধান প্রসিকিউটর ফ’তু বিন সাওদা ২০১৯ সালে বলেছিলেন পশ্চিম তীর ও গাজায় ইসরাইলি অপরাধযজ্ঞের বিষয়ে তদন্ত চালানোর বিষয়ে নানা যৌক্তিক ভিত্তি রয়েছে। তবে এই তদন্ত চালানোর এখতিয়ার আইসিসির রয়েছে কিনা সে বিষয়ে এই বিচারিক সংস্থাকে আগে একটি রায় দিতে হবে। -পার্সটুডে
আইসিসি তার রায়ে বলেছে, ইসরাইল ফিলিস্তিনের যেসব অঞ্চল ১৯৬৭ সালে দখল করেছে সেসব অঞ্চল যেমন, পূর্ব বায়তুল মোকাদ্দাসসহ পশ্চিম-তীর এবং গাজা- এই অঞ্চলগুলোতে আইসিসি’র বিচার কার্যক্রম চালানোর অধিকার রাখে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের ঘোষণা তথা আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী অধিকৃত ফিলিস্তিনে সব ধরনের ইসরাইলি বসতি ও স্থাপনা নির্মাণ পুরোপুরি অবৈধ। কিন্তু ইহুদিবাদী ইসরাইল এ বিষয়টিকে উপেক্ষা করে আসছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত গঠন করা হয় ২০০২ সালে। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ, জাতিগত নিধন বা গণহত্যা, ধর্ষণ ও অন্যান্য অপরাধ যা আগ্রাসনের সময় চালানো হয় সেসব বিষয়ে তদন্ত করা এ সংস্থার দায়িত্ব। কিন্তু ইসরাইল এই সংস্থায় যোগ দেয়নি ও এ সংস্থাকে স্বীকৃতিও দেয়নি। এ অবস্থায় আইসিসি’র ইসরাইল বিরোধী রায় বা ঘোষণায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে ইসরাইলি কর্মকর্তারা। ইসরাইলি প্রধানমন্ত্রী বেনইয়ামিন নেতানিয়াহু আইসিসি’র ঘোষণার জবাবে বলেছে, এ ঘোষণাটি আবারও প্রমাণ করলো যে সংস্থাটি একটি রাজনৈতিক পক্ষ মাত্র বিচারিক সংস্থা নয়!
ইসরাইলি নেতৃবৃন্দের ক্ষুব্ধ হওয়ার কারণ তারা এই আতঙ্কে রয়েছেন যে, ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইসরাইলের যুদ্ধ অপরাধগুলো বিচারিক তদন্ত প্রক্রিয়ায় প্রমাণিত হবে এবং তাতে শীর্ষস্থানীয় ইসরাইলি নেতাদের গ্রেফতারের নির্দেশও দেয়া হতে পারে! সম্প্রতি আরব লিগের মহাসচিব আহমাদ আবুলগ্বাইত জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে স্বীকার করেছেন যে ফিলিস্তিনি ইস্যুটি ইচ্ছাকৃত উদাসীনতার শিকার হয়েছে। তিনি বলেছেন, ইস্যুটির ব্যাপারে ভারসাম্যহীন নীতি গ্রহণ করা হয়েছে এবং ফিলিস্তিন-ইসরাইল সংঘাতকে কেবল ইসরাইলি দৃষ্টিকোণ থেকে দেখা হচ্ছে! বিনা বিচারে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করা ও বন্দি করা, ফিলিস্তিনিদের ঘরবাড়ি ভেঙ্গে দেয়া ও তাদের কৃষি জমি দখল করা, অবৈধ ইসরাইলি বসতি নির্মাণ এবং গাযার ওপর অমানবিক অবরোধ আরোপ- এসবই মানবাধিকার লঙ্ঘনের খুব নিকৃষ্ট দৃষ্টান্ত যা ইসরাইল যুগ যুগ ধরে চালিয়ে আসছে। এ অবস্থায় আইসিসি’র এই ঘোষণা ফিলিস্তিনিদের জন্য বড় ধরনের বিজয়।