প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার এক মামলার ডেথ রেফারেন্স এবং আপিলের ওপর পরবর্তী শুনানি আগামী ১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠীত হবে।
সোমবারও (২৫ জানুয়ারি) শুনানি শেষে রাষ্ট্রপক্ষের লিখিত যুক্তিতর্ক ও আসামিদের বিষয়ে তথ্য জমা দিতে পরবর্তী এই শুনানির দিন ধার্য করেছে হাইকোর্ট। ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষের সর্বশেষ শুনানির দিন ধার্য রয়েছে। গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় বোমা পুঁতে রেখে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় করা মামলার ধারাবাহিকতায় এই মামলা হয় হাইকোর্টে।
বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি মো. বদরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ আজকের এই আদেশ দেয়। সর্বশেষ শুনানি শেষে আদালত মামলাটির রায়ের ঘোষণার দিন ঠিক করবেন।
সোমবার আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন। তার সঙ্গে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. বশির উল্লাহ, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মদ শাহীন মৃধা, মিজানুর রহমান খান শাহীন ও মোহাম্মদ শাফায়াত জামিল। আসামিপক্ষে ছিলেন এসএম শাহজাহান ও মো. আহসান। এছাড়া পলাতক আসামির পক্ষে আদালতে শুনানি করেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী অমূল্য কুমার সরকার।
আদালত থেকে বের হওয়ার পর গণমাধ্যমকে আইনজীবী মো. বশির উল্লাহ বলেন, আজ রাষ্ট্রপক্ষে মামলার পেপারবুক শুনানি শেষ করা হয়েছে। আগামী ১ ফেব্রুয়ারি এ মামলার যুক্তিতর্ক ও বিভিন্ন মামলার নজির হাইকোর্টে লিখিতভাবে দাখিল করা হবে। একইদিন মামলার শুনানি শেষ করারও নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।
আইনজীবী বলেন, শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টা মামলায় ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত ১০ আসামির ডেথ রেফারেন্স শুনানি শুরু হওয়ার পরে অব্যাহতভাবে চলছিলো। দীর্ঘ শুনানি শেষে আগামী ১ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি শেষ করতে বলেছেন। ওই দিন আমাদের (রাষ্ট্রপক্ষ) লিখিত আবেদন দাখিল করার জন্যেও বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে আসামিপক্ষের আইনজীবীরা যুক্তিতর্ক শেষ করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষ থেকে সর্বশেষ যুক্তিতর্ক শেষ করলে মামলাটি রায়ের জন্য থাকবে।
প্রধানমন্ত্রীকে হত্যাচেষ্টার মামলায় ২০১৭ সালের ২০ আগস্ট ঢাকার দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-২ এর বিচারক মমতাজ বেগম ১০ জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড দিয়ে রায় দেন। এছাড়া চার আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়। এ মামলার রায়সহ সব নথি ওই বছরের ২৪ আগস্ট হাইকোর্টে পাঠানো হয়। এরপর প্রধান বিচারপতির কাছে নথি উপস্থাপন করা হলে তিনি জরুরিভিত্তিতে পেপারবুক তৈরির নির্দেশ দেন। মামলাটি শুনানির জন্য প্রস্তুত শেষে কার্যতালিকায় দেয়া হয়।
বিচারিক আদালতে এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- ওয়াসিম আকতার, রাশেদ ড্রাইভার ওরফে আবুল কালাম, ইউসুফ ওরফে আবু মুসা হারুন, শেখ ফরিদ ওরফে মাওলানা শওকত ওসমান, হাফেজ জাহাঙ্গীর আলম বদর, মাওলানা আবু বক্কর, হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই ও মাওলানা আবদুর রউফ ওরফে আবু ওমর।
এছাড়া, মেহেদি হাসান ওরফে আবদুল ওয়াদুদকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে। আনিসুল ওরফে আনিস, মো. মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান এবং সরোয়ার হোসেন মিয়াকে ১৪ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা অনাদায়ে আরও এক বছরের দণ্ড দেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, ২০০০ সালের ২০ জুলাই গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সমাবেশস্থলের পাশে তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রাখা হয়। শেখ লুৎফর রহমান মহাবিদ্যালয়ের উত্তর পাশের একটি চায়ের দোকানের পেছনে এ বোমা বিস্ফোরণের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছিল বলে তদন্তে উঠে আসে। এ ঘটনায় তৎকালীন কোটালীপাড়া থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) নূর হোসেন মামলা দায়ের করেন।