আমেরিকার নবনিযুক্ত প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন অফিসে তার প্রথম ৪৮ ঘন্টার মধ্যে প্রায় ৩০টি এক্সিকিউটিভ অর্ডার বা কার্যাদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যেগুলির মধ্যে প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ১৪টি নির্বাহী আদেশ অকার্যকর করা অন্তর্ভুক্ত ছিল। বাকিগুলো মহামারি এবং অর্থনৈতিক সঙ্কটের মোকাবেলায় জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছে। বাইডেনের কার্যাদেশের মাধ্যমে ট্রাম্পের কার্যাদেশগুলি অকার্যকর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত রয়েছে: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে অর্থায়নের প্রতিশ্রুতি পুনঃস্থাপন, প্যারিস আবহাওয়া ঐক্যে পুনরায় যোগদান, বেশ কয়েকটি দেশ, প্রধানত মুসলিম দেশগুলোর অভিবাসন এবং দেশের অভ্যন্তরে অভিবাসন প্রক্রিয়া বন্ধ করে দেয়ার বিষয়ে ট্রাম্পের নিষেধাজ্ঞা অকার্যকর করা, সীমানা প্রাচীরের নির্মাণ বন্ধ, এলজিবিটিকিউ কর্মীদের জন্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা, যা ট্রাম্পের নিয়োগপ্রাপ্তদের কর্মীদের দ্বারা হ্র্রাস পেয়েছে, কীস্টোন এক্সএল পাইপলাইন পারমিটটি বাতিল করা, আর্টিকের বন্যপ্রাণীদের আশ্রয়স্থলে ড্রিলিং নিষেধাজ্ঞা পুনর্বহাল, ট্রাম্পের ‘১৭৭৬ কমিশন’-এর প্রতিবেদনটিতে নীতিগত নীতিমালা আরোপ করা এবং বাতিল করা।
প্রশাসনের প্রথম দু’বছর ধরে ট্রাম্প কংগ্রেসের উভয় কক্ষেই সংখ্যগরিষ্ঠতা উপভোগ করেছেন, তিনি যে নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছিলেন, সে বিষয়ে আইন প্রণয়নের সুযোগ নিয়ে অভিবাসন বিধিনিষেধকে আরো কঠোর করেছেন এবং মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর তৈরি করেছেন, ওবামা কেয়ারকে বাতিল করেছেন এবং আমেরিকার পশ্চিম মধ্যাংশকে অর্থনৈতিক বিপর্যয় কাটাতে সাহায্য করেছেন। তবে তিনি কখনোই সচেতনভাবে অভিবাসন সংস্কারের বিষয়ে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার চেষ্টা করেননি এবং এই ইস্যুতে দৃঢ় অবস্থান নেয়ার পরিবর্তে তিনি তার শাসনকালের প্রথম দিকে বেশ কয়েকটি মুসলিম ও আফ্রিকান দেশ থেকে আগত পর্যটকদের উপর নিষেধাজ্ঞায় স্বাক্ষর করেছেন এবং তার স্বাক্ষর সেশনগুলো টেলিভিশনে উপস্থাপনের মাধ্যমে ক্ষমতার প্রদর্শন ঘটিয়েছেন। একই সাথে, ট্রাম্প উচ্চাভিলাষী অবকাঠামো নীতিমালা তৈরির উদ্যোগগুলো দূরে ঠেলে দিয়েছেন, যা থেকে একটি টেকসই আইন তৈরির সুযোগ ছিল। এটি পরিশেষে তার শাসনকালের গতিপথ পরিবর্তন করে দিয়েছে।
বাইডেনও ট্রাম্পের মতো এক্সিকিউটিভ অ্যাকশনের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীল হয়ে উঠবেন কিনা তা এখন দেখার বিষয়। তবে বাইডেনের দলের অনেকে গাইড হিসাবে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি এলেনা কেগানের ২০০১ সালের ১শ’ ৪০ পৃষ্ঠার আইন পর্যালোচনা নিবন্ধটি ব্যবহার করছেন, যেখানে একটি কার্যনির্বাহী ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণ করার মধ্যম পন্থা হিসাবে আরেকটি কার্যনির্বাহী আদেশকে সমর্থন করা হয়েছে; প্রেসিডেন্টের অধঃস্তনদের দ্বারা একতরফাভাবে গৃহীত সিদ্ধান্ত বলবৎ করার লাইসেন্স হিসাবে নয়। শুক্রবার বাইডেনের অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ব্রায়ান ডিজ বলেছেন যে, প্রশাসনের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার ছিল ১.৯ ট্রিলিয়ন ডলার করোনাভাইরাস ত্রাণ প্যাকেজ পাস করা। তবে, সরকারি কর্মকর্তাদের জন্য সম্ভাব্য ন্যূনতম মজুরি বৃদ্ধি এবং খাদ্য সহায়তা বাড়ানোও আদেশে অন্তর্ভুক্ত রাখার দরকার ছিল, যা দেশটিকে একটি অত্যন্ত গুরুতর অর্থনৈতিক বিপর্যয় থেকে ঠেকাতে পারতো।
বাইডেনের আদেশ কার্যকর করার সাথে জড়িত দু’জন কর্মকর্তা বলেছেন যে, প্রেসিডেন্ট ক্ষমতা বলে তার নির্বাহী আদেশের ব্যবহার ক্ষমতা প্রদর্শনের প্রতিচ্ছবি নয়, বরং করোনা মহামারি এবং ট্রাম্পের দ্বারা যে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে, তার প্রতিক্রিয়া। তারা বলেছেন যে, কংগ্রেসনাল পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে তার কার্যাদেশের ব্যবহার হ্রাস পাবে। সূত্র : দ্য নিউ ইয়র্ক টাইম্স।