পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে নতুন বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের পর এবার ‘লাখো কণ্ঠে কোরআন তেলাওয়াত’-এর আয়োজনের ঘোষণা দিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের বহিষ্কৃত বিধায়ক হুমায়ুন কবির। কলকাতায় সনাতন সংস্কৃতি সংসদের আয়োজনে ‘পাঁচ লাখ কণ্ঠে গীতাপাঠ’ অনুষ্ঠানের দিনই তিনি এ ঘোষণা দেন।
হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন, আগামী ফেব্রুয়ারিতে মুর্শিদাবাদে একটি বৃহৎ প্যান্ডেল তৈরি করে এক লাখ মুসলিমকে নিয়ে কোরআন তেলাওয়াত অনুষ্ঠিত হবে। অংশগ্রহণকারীদের জন্য মাংস-ভাতের ভোজের ব্যবস্থাও থাকবে। তিনি বলেন, বিজেপি যেমন রামমন্দিরের অ্যাজেন্ডায় কাজ করছে, আমরাও মুসলিমদের অধিক আসনে জয়ের জন্য কোরআন পাঠের আয়োজন করবো। এক লাখ হাফেজকে দিয়ে কোরআন পাঠ করাবো।
হুমায়ুনের কথায়, ‘বিজেপি আজ নতুন করে হিন্দুত্ব করছে না। রামমন্দিরের অ্যাজেন্ডা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে বিজেপি। বাংলা দখল করার জন্য এখন গীতাপাঠ করছে। আগামীদিনে মুসলিমদের নিয়ে কোরআন পাঠের আয়োজন করব’
তিনি বলেন, ‘সনাতন ধর্ম অবলম্বনকারী মানুষ গীতপাঠ করতেই পারে। গীতাকে তারা সম্মান করে। এনিয়ে আমার শ্রদ্ধা আছে ওনাদের প্রতি। আমি আগামী দিনে মুসলমানদের, বেশি বেশি করে বিধানসভায় সিট জেতার জন্য, কোরআন পাঠেরও আয়োজন করব। কোরআন পাঠ হবে, লাখ লোক নিয়ে। তাদেরকে আরামসে খাওয়া-দাওয়া করিয়ে, দিনভর মুর্শিদাবাদে কোরআন পাঠের আয়োজন করাবো। ১ লাখ হাফেজকে দিয়ে কোরআন পাঠ করাব। মুর্শিদাবাদের কোনও একটা জায়গায় প্যান্ডেল করব বড় করে।’
এর আগে, গত শনিবার ভারতের উত্তর প্রদেশের অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ধ্বংসের ৩৩তম বার্ষিকীতে মুর্শিদাবাদের বেলডাঙা ২ নম্বর ব্লকের ছেতিয়ানি এলাকায় নতুন বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন হুমায়ুন কবির।
এই মসজিদ নির্মাণের ঘোষণা নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক শুরু হলে বিষয়টি কলকাতা হাইকোর্ট পর্যন্ত গড়িয়েছিল। হাইকোর্ট থেকে সবুজ সংকেত পাওয়ার পর শনিবার কড়া নিরাপত্তার মধ্যে মহা সমারোহে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন সম্পন্ন করা হয়। ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অনুষ্ঠানে মুসল্লিদের ঢল নামে। সরকারিভাবে কিছু জানানো না হলেও একটি মহলের তরফে দাবি করা হয়েছে যে লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয়েছে বাবরি মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনের অনুষ্ঠানে। তাদের অনেকে মাথায় করে ইট নিয়ে আসেন।
অন্যদিকে বাবরি মসজিদ পুনর্নির্মাণের ঘোষণা দেওয়ায় এবং দলীয় মতের বাইরে যাওয়ায় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে হুমায়ুন কবীরকে অনির্দিষ্টকালের জন্য বহিষ্কার করে তার দল তৃণমূল কংগ্রেস। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আসন্ন নির্বাচনের আগে হুমায়ুনের এই উদ্যোগ তৃণমূলকে তীব্র বিড়ম্বনায় ফেলেছে।
তবে এ বিষয়ে বরখাস্ত হওয়া বিধায়ক বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অযোধ্যায় রাম মন্দির নির্মাণ করেছেন, কিন্তু এর বিরুদ্ধে ভারতের মুসলিম সমাজ কোনো প্রতিবাদ করেনি। বাবরি মসজিদ আবারও তৈরি হবে এবং কোনো শক্তি এটিকে আটকে রাখতে পারবে না।
এদিকে প্রস্তাবিত বাবরি মসজিদের জন্য দানের ঢল নেমেছে। মোট ১১টি দানবাক্স রাখা হয়েছিল সভাস্থলে। সেগুলো ২ দিনেই ভরে গেছে পুরোপুরি।
রোববার বিশেষ মেশিন দিয়ে দানের টাকা গোনা শুরু হয়। এখন পর্যন্ত চারটি বাক্স আর একটি বস্তা মিলিয়ে পাওয়া গেছে ৩৭ লাখ ৩৩ হাজার রুপি। শুধু নগদ নয়, অনলাইনেও এসেছে অনেক দান। কিউআর কোড স্ক্যান করে এখন পর্যন্ত এসেছে ৯৩ লাখ রুপি।
হুমায়ুন কবির জানিয়েছেন, বাবরি মসজিদ তৈরি করতে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা খরচ হবে, যা সম্পূর্ণভাবে সংখ্যালঘু মুসলমানদের অনুদানে নির্মিত হবে। তিনি জোর দিয়ে বলেন, তিনি সরকারের কাছ থেকে কোনো টাকা নেবেন না, কারণ এতে মসজিদের পবিত্রতা নষ্ট হবে।
এছাড়াও শনিবারই অনুষ্ঠান মঞ্চ থেকে তিনি আরও জানান, পবিত্র এ মসজিদ নির্মাণের জন্য নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজ্যের একজন বিশিষ্ট শিল্পপতি ইতোমধ্যে ৮০ কোটি রুপি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন।
উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যায় বাবরি মসজিদ ভাঙাকে ঘিরে উত্তাল হয়েছিল গোটা ভারত। ৩৩ বছর পর, এবার একই দিনে বাবরি মসজিদ পুনরায় নির্মাণকে কেন্দ্র করে পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে তৈরি হয়েছে চরম উত্তেজনা।
সূত্র: এবিপি আনন্দ

