ইউরোপের ক্রমবর্ধমান সামরিকীকরণকে কেন্দ্র করে কঠোর জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তিনি বলেন, ইউরোপ সামরিকীকরণের পথে এগোচ্ছে এবং এর জবাবে রাশিয়া ‘গুরুত্বপূর্ণ ও কঠোর পদক্ষেপ’ নেবে।
একই সঙ্গে ন্যাটো আক্রমণের নামে রাশিয়াকে ঘিরে চলা প্রচারণাকে ‘অর্থহীন হিস্টেরিয়া’ বলে অভিহিত করেন পুতিন। তার দাবি, সব ন্যাটো দেশই এখন কার্যত রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে নেমেছে।
আজ শুক্রবার (৩ অক্টোবর) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
গতকাল (বৃহস্পতিবার) রাশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর সোচিতে পররাষ্ট্রনীতি বিষয়ক এক ফোরামে বক্তব্য দিতে গিয়ে পুতিন বলেন, তারা (ন্যাটো) নিজেরাই বিশ্বাস করে না যে রাশিয়া ন্যাটোতে হামলা চালাবে। যদি সত্যিই বিশ্বাস করে, তাহলে তারা অবিশ্বাস্যভাবে অযোগ্য, কারণ এই বাজে কথায় আস্থা রাখা যায় না। আর যদি না বিশ্বাস করে, তাহলে তারা কেবল অসৎ।
ইউরোপের সামরিক শক্তি বাড়ানোর প্রবণতায় ক্ষোভ প্রকাশ করে পুতিন বলেন, রাশিয়া পরিস্থিতি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে এবং দ্রুতই এর পাল্টা জবাব দেবে।
উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, জার্মানিতে বলা হচ্ছে তাদের সেনাবাহিনী ইউরোপের সবচেয়ে শক্তিশালী বাহিনী হবে। খুব ভালো। আমরা সেটা শুনেছি এবং দেখছি এর মানে আসলে কী।
তার ভাষ্য, রাশিয়া কখনো দুর্বলতা বা দ্বিধা দেখাবে না। যা ঘটছে, আমরা তা উপেক্ষা করতে পারি না।
২০২২ সালে ইউক্রেনে আক্রমণের পর থেকেই রাশিয়া ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের সম্পর্ক চরম সংকটে পড়ে। এর প্রেক্ষিতে ইউরোপ তাদের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা আরও জোরদার করছে। সম্প্রতি ডেনমার্কের আকাশে ড্রোন ও এস্তোনিয়া-পোল্যান্ডের আকাশসীমা লঙ্ঘনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইউক্রেন যুদ্ধ সীমান্ত ছাড়িয়ে পড়তে পারে—এমন আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
ইউক্রেন ও ন্যাটো মিত্রদের অভিযোগ, রাশিয়া ইচ্ছাকৃতভাবে এসব লঙ্ঘন করছে। তবে মস্কো তা অস্বীকার করে বলছে, ইউরোপ শুধু ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে। পুতিনের অভিযোগ, ইউরোপ ইচ্ছাকৃতভাবে ‘হিস্টেরিয়া’ তৈরি করছে, যাতে সামরিক ব্যয় বাড়ানো যায়। তিনি বলেন, “শান্ত হোন, রাশিয়া কোনো হুমকি নয়।”
তার দাবি, ইউরোপের অব্যাহত উত্তেজনা সৃষ্টির নীতিই ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে। “সব ন্যাটো দেশই এখন আমাদের সঙ্গে যুদ্ধ করছে এবং তারা আর তা লুকাচ্ছে না। গোয়েন্দা তথ্য সরবরাহ ও অস্ত্র পাঠানোর মাধ্যমে তারা বাস্তবে যুদ্ধেই অংশ নিচ্ছে।”
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে প্রশংসা করে পুতিন জানান, গত আগস্টে আলাস্কায় শীর্ষ বৈঠকে ইউক্রেন যুদ্ধের সমাধান ও দুই দেশের সম্পর্ক পুনর্গঠনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, ট্রাম্প এমন একজন মানুষ, যিনি কথা শুনতে পারেন।
যদিও মস্কো এখনো ইউক্রেনের সঙ্গে কোনো সমঝোতার ইঙ্গিত দেয়নি। বরং তাদের অবস্থান স্পষ্ট— কিয়েভকে ন্যাটো সদস্যপদ পাওয়ার আশা ত্যাগ করতে হবে এবং কিছু ভূখণ্ড ছাড়তে হবে।
এছাড়া ইউক্রেনকে সতর্ক করে পুতিন বলেন, রাশিয়ার দখলে থাকা জাপোরিঝঝিয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে হামলা চালিয়ে কিয়েভ বিপজ্জনক খেলা খেলছে। এর জবাবে রাশিয়া ইউক্রেনের নিয়ন্ত্রণাধীন পারমাণবিক স্থাপনায় পাল্টা হামলা চালাতে পারে বলেও ইঙ্গিত দেন তিনি।
সূত্র: আল-জাজিরা