বিশ্বনেতাদের সামনে নিজেদের আধুনিক অস্ত্রভাণ্ডার প্রদর্শন করেছে এশিয়ার পরাশক্তি চীন। যার মাধ্যমে চীনের ডিএফ-৫সি পারমাণবিক অস্ত্র দেখল বিশ্ব।
সাম্প্রতিক একটি সামরিক কুচকাওয়াজে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের উপস্থিতিতে পারমাণবিক ও অত্যাধুনিক অস্ত্রের প্রদর্শনী হয়। ঐতিহাসিক এই অনুষ্ঠানে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনসহ অন্তত দুই ডজন দেশের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
কুচকাওয়াজে সবচেয়ে বেশি নজর কাড়ে চীনের নতুন তিনটি আন্ত-মহাদেশীয় ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র (ICBM)—ডিএফ-৫সি, ডিএফ-২৬ডি এবং ডিএফ-৬১। এর মধ্যে ডিএফ-৬১ ক্ষেপণাস্ত্রকে পশ্চিমা বিশ্লেষকেরা ডাকছেন ‘গুয়াম কিলার’ নামে, কারণ এটি সরাসরি যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ নৌঘাঁটি গুয়ামে আঘাত হানতে সক্ষম।
প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক আলেকজান্ডার নিলের মতে, চীন তাদের ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট বাহিনীকে কৌশলগত প্রতিরোধ শক্তি হিসেবে গড়ে তুলছে। এর মূল লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্রের নৌ-আধিপত্যের বিরুদ্ধে ভারসাম্য তৈরি করা।
বিশ্বের সবচেয়ে বড় ও আধুনিক নৌবাহিনী যুক্তরাষ্ট্রের হলেও, চীন এই জায়গায় পিছিয়ে রয়েছে। তাই ‘গুয়াম কিলার’সহ উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে নিজেদের সামরিক দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করছে তারা।
বিশ্লেষকদের মতে, এসব নতুন ক্ষেপণাস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রের বিমানবাহী রণতরী ও স্ট্রাইক গ্রুপগুলোর কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। চীনা হামলার ঝুঁকিতে এসব যুদ্ধজাহাজ এখন অনেকটাই ‘সিটিং ডাকস’ বা সহজ শিকার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চীন কেবল প্রথম হামলার সক্ষমতা নয়, বরং দ্বিতীয় দফার পাল্টা পারমাণবিক আঘাত বা ‘সেকেন্ড স্ট্রাইক ক্যাপাবিলিটি’ গড়ে তুলতেও মনোযোগী বলে জানান প্রতিরক্ষা বিশ্লেষকেরা। এর মানে হলো—প্রথম হামলার পরও শত্রুর বিরুদ্ধে পাল্টা পারমাণবিক আঘাত হানার ক্ষমতা।
এই কুচকাওয়াজে চীন প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে হাইপারসনিক গ্লাইড ভেহিকল ‘ওয়াইজে-১৭’ এবং হাইপারসনিক ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ‘ওয়াইজে-১৯’ প্রদর্শন করে। এছাড়াও পানির নিচে থেকে আঘাত হানতে সক্ষম বড় আকারের স্বয়ংক্রিয় ড্রোন ‘AJX002’ উন্মোচন করা হয়, যা পশ্চিমা নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সঙ্গে ছিল গোয়েন্দা নজরদারি ও মাইন খুঁজে বের করতে সক্ষম রোবটিক ‘নেকড়ে ড্রোন’-এর প্রদর্শনীও।
চীনের এই সামরিক প্রদর্শন বিশ্বের ভূরাজনৈতিক ভারসাম্যে বড় পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
সূত্র: বিবিসি

