spot_img

মহররমে বিয়ে নিয়ে বিতর্ক: ধর্ম কী বলে

অবশ্যই পরুন

বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলে এখনো একটি প্রচলিত ধারণা হচ্ছে, মহররম মাসে বিয়ে করা অশুভ। কথিত রয়েছে, এ মাসে বিয়ে করলে সংসার টেকে না, অশান্তি আসে, এমনকি মৃত্যুও ডেকে আনে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই বিশ্বাসের ভিত্তি কী? ইসলামে সত্যিই কি মহররম মাসে বিয়ে করা নিষিদ্ধ?

ইসলামী স্কলারদের ভাষ্য অনুযায়ী, মহররম মাস হিজরি বছরের প্রথম মাস এবং এটি চারটি ‘হারাম’ বা ‘সম্মানিত মাসের’ একটি।  হাদিসে এ মাসটিকে আল্লাহর মাস বলা হয়েছে। এ মাসের রোজাকে রমজানের রোজার পর সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ বলা হয়েছে। আবু হোরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,

أَفْضَلُ الصِّيَامِ بَعْدَ رَمَضَانَ شَهْرُ اللَّهِ الْمُحَرَّمُ وَأَفْضَلُ الصَّلاَةِ بَعْدَ الْفَرِيضَةِ صَلاَةُ اللَّيْلِ

রমজানের রোজার পর সর্বোত্তম রোজা হচ্ছে আল্লাহর মাস মহররমের রোজা এবং ফরজ নামাজের পর সর্বোত্তম নামাজ হচ্ছে রাতের নামাজ। (সহিহ মুসলিম: ২৬২৬)

এই মাসের গুরুত্ব অনেক, বিশেষত আশুরার দিনে হজরত হোসাইন (রা.)-এর কারবালার আত্মত্যাগ স্মরণীয়। কিন্তু এই শোকাবেগকে ঘিরে যে কুসংস্কার জন্ম নিয়েছে, তা শরিয়তসম্মত নয়।

কোন মাসকে ‘অশুভ’ বলা ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়

ইসলামে সময়, দিন, মাসকে অলক্ষুণে বা অশুভ মনে করার কোনো সুযোগ নেই। বরং এ ধরনের বিশ্বাসকে ইসলামী পরিভাষায় ‘তাইয়ারা’ বা কুসংস্কার বলা হয়, যা জাহেলিয়াত যুগের অবশিষ্ট। আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সময়কে মন্দ বলতে বা গালি দিতে নিষেধ করে বলেছেন,

لاَ يَسُبُّ أَحَدُكُمُ الدَّهْرَ فَإِنَّ اللَّهَ هُوَ الدَّهْرُ

তোমরা কেউ যেন সময়কে গালি না দাও, কারণ আল্লাহই সময়’ (সহিহ মুসলিম: ৫৮২৭)

অর্থাৎ সময়ের স্রষ্টা ও নিয়ন্ত্রক আল্লাহ নিজেই, যা হয়, আল্লাহ ইচ্ছায় হয়, সময় অশুভ হয় না বা সময়ের কোনো ক্ষমতাও নেই। তাই মহররম বা অন্য যেকোনো মাসে বিয়ে, ব্যবসা, যাত্রা বা কোনো বৈধ কাজ শুরু করা নাজায়েজ বা মাকরূহ নয়।

বিয়ে একটি বৈধ ইবাদত- সময়ে নয়, নিয়তে নির্ভর

ইসলামের বিধান অনুযায়ী, বিয়ে একটি সম্মানিত ও গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। এর বৈধতা কোনো নির্দিষ্ট মাস বা দিনের সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। বরং নিয়ত, প্রস্তুতি ও শরিয়তের নির্দেশনা অনুযায়ী বিয়ের চুক্তি হলেই তা পূর্ণতা পায়। কোনো দিন বা মাসকে অলক্ষুণে মনে করা জাহেলি যুগের ধারণা। শরিয়ত এ ধারণাকে সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ ও শিরকি ধারণা বলে অভিহিত করেছে। আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) থেকে বর্ণিত আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন,

الطِّيَرَةُ شِرْكٌ الطِّيَرَةُ شِرْكٌ ثَلاَثًا وَمَا مِنَّا إِلاَّ وَلَكِنَّ اللهَ يُذْهِبُهُ بِالتَّوَكُّلِ

কোনো কিছুকে অলুক্ষুণে মনে করা শিরক। কোনো কিছুকে অশুভ মনে করা শিরক, কোনো কিছুকে কুলক্ষণ মনে করা শিরক। আমাদের মধ্যে এমন কেউ নেই যার মনে কুধারণা জন্মে না, তবে আল্লাহ ওপর ভরসার মাধ্যমে আল্লাহ তা দূর করে দেন। (সুনানে আবু দাউদ: ৩৯১২)

কাজেই মহররম মাসে বিয়ে করলে সেই বিয়েতে বরকত হবে না, এগুলো কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই নয়। তাছাড়া এক বর্ণনা মতে বুঝা যায়, ফাতেমা (রা.) ও আলী (রা.)- এর বিয়ে মহররম মাসে হয়েছিল। সুতরাং এ ধরনের ভিত্তিহীন কথাবার্তার উপর বিশ্বাস করা উচিৎ নয়। (আল-বিদায়া ওয়ান নিহায়া : ৩/৪১৯)

কুসংস্কার সমাজে ভয় ছড়ায়, শরিয়ত আনে শান্তি

ধর্ম বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মহররম মাসে বিয়ে করলে সংসারে অমঙ্গল নেমে আসে, এমন ধারণা ভিত্তিহীন। বরং এ ধরনের বিশ্বাস সমাজে অকারণ ভীতির সঞ্চার করে এবং মানুষকে শরিয়ত থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। ইসলামের প্রকৃত শিক্ষা হলো- সমাজে প্রচলিত কুসংস্কারের বদলে কোরআন ও হাদিসের নির্দেশনাকে অনুসরণ করা।

সর্বশেষ সংবাদ

জোতার সম্মানে তার জার্সি তুলে রাখলো লিভারপুল

সড়ক দুর্ঘটনায় লিভারপুল ফরোয়ার্ড দিয়োগো জোতা ও তার ভাই আন্দ্রের মৃত্যুর খবরে শোকস্তব্ধ ফুটবলবিশ্ব। মাঠের বাইরের এই মর্মান্তিক ঘটনায়...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ