spot_img

অনৈতিক ও অসুস্থ সম্পর্কে অপূরণীয় ক্ষতি

অবশ্যই পরুন

মানব সম্পর্ক বেশ রহস্যময় বিষয়। এর বহু মাত্রিক রূপ আছে। কিছু সম্পর্ক আছে রক্তের, যেগুলো জন্মসূত্রে গড়ে ওঠে। কিছু সম্পর্ক আছে ঈমানের, যেগুলো ধর্মীয় বিশ্বাস আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে গড়ে ওঠে। কিছু সম্পর্ক সাহচর্য ও সহমর্মিতার, যেগুলো একসঙ্গে পথ চলতে গিয়ে, বিপদে পাশে থেকে কিংবা একই মিশন নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তৈরি হয়। কিছু সম্পর্ক বন্ধুত্বের, মন-মানসিকতা ও মূল্যবোধের মিল থেকে যেসব বন্ধন তৈরি হয়।

কিছু সম্পর্ক আত্মীয়তার, যেগুলো সাধারণত বিয়ের মাধ্যমে তৈরি হয়, আবার কিছু সম্পর্ক ব্যবসা-বাণিজ্যের, যেগুলো পরস্পর চাহিদা পূরণ ও লাভ-ক্ষতির ভিত্তিতে তৈরি হয়। এভাবে সম্পর্কের বহু রূপ আছে। যেগুলোর অনেকগুলো পবিত্র ও আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের মাধ্যম। আবার এমন অনেক রূপ আছে, যেগুলো মানুষকে বিপথগামী ও ঈমানহারা করে দেওয়ার মাধ্যম। যেগুলোর ইসলামী স্বীকৃতিতো নেই, কোনো সামাজিক স্বীকৃতিও নেই। কোনো সুস্থ মস্তিষ্কসম্পন্ন মানুষ যেসব সম্পর্ককে কোনো ভাবেই স্বাভাবিক ভাবে নিতে পারে না। তেমনই একটি সম্পর্ক হলো, ‘সিচুয়েশনশিপ’। মানুষের ধর্মীয় মূল্যবোধ ও নৈতিকতা হরণের সাবলীল রূপ এটি।

অক্সফোর্ড ডিকশনারির ভাষ্যমতে, সিচুয়েশনশিপ বলতে এমন রোমান্টিক সম্পর্ক বোঝায়, যার আদতে কোনো প্রতিষ্ঠিত রূপ নেই। কেউ কেউ মজা করে একে ‘বন্ধুর চেয়ে কিছু বেশি, প্রেমিক-প্রেমিকার চেয়ে কিছু কম’ বলেও সংজ্ঞা দেওয়ার চেষ্টা করেন। তবে এ ধরনের সম্পর্ককে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ‘অসংজ্ঞায়িত’ই রেখে দেওয়া হয়।

এটি মূলত সম্পর্কের অসুস্থ রূপ। যেখানে নারী-পুরুষের মাঝে একটি অসুস্থ সম্পর্ক গড়ে উঠবে। যেখানে কোনো দায়বদ্ধতা থাকবে না। থাকবে না ধর্মীয় কোনো বিধি-নিষেধ পালনের চিন্তা। থাকবে শুধু রোমান্সের নামে অবৈধ উপায়ে নফসের খাহেশ মেটানোর একটি অনর্থক সম্পর্ক। নিম্নে সম্পর্কের এই অসুস্থ রূপের কিছু নেতিবাচক দিক তুলে ধরা হলো—

এটি বৈধ সম্পর্কের কাঠামোয় পড়ে না:

মহান আল্লাহ নারী-পুরুষের সম্পর্কের কিছু সীমারেখা তৈরি করে দিয়েছেন, কিছু সম্পর্ক মাহরাম ভিত্তিক সম্পর্ক পবিত্র কোরআনে যেসব নারীর সঙ্গে বিয়ে হারাম করা হয়েছে। কিন্তু এদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত ইত্যাদি জায়েজ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতাদের, তোমাদের মেয়েদের, তোমাদের বোনদের, তোমাদের ফুফুদের, তোমাদের খালাদের, ভাতিজীদের, ভাগ্নিদের, তোমাদের সে সব মাতাকে যারা তোমাদেরকে দুধপান করিয়েছে, তোমাদের দুধবোনদের, তোমাদের শাশুড়িদের, তোমরা যেসব স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়েছ সেসব স্ত্রীর অপর স্বামী থেকে যেসব কন্যা তোমাদের কোলে আছে তাদের, আর যদি তোমরা তাদের সাথে মিলিত না হয়ে থাক তবে তোমাদের উপর কোনো পাপ নেই এবং তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রীদের এবং দুই বোনকে একত্র করা (তোমাদের উপর হারাম করা হয়েছে)। তবে অতীতে যা হয়ে গেছে তা ভিন্ন কথা। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ২৩)

উল্লিখিত নারীদের সঙ্গে পুরুষদের এমন একটি সম্পর্ক আছে, যে তারা পরস্পর দেখা-সাক্ষাত করতে পারে। তবে এদের সঙ্গেও তথাকথিত ‘রোমান্স’ করা হারাম।

নারীদের সঙ্গে তথাকথিত ‘রোমান্সের’ সম্পর্ক করার দুটি পথ আছে, এক হলো বিয়ে করা স্ত্রী। আরেকটি হলো, দাসী। দাসীর প্রথা যেহেতু এখন নেই, তাই বিয়ে প্রথাই এখন নারীদের সঙ্গে ‘রোমান্সের’ সম্পর্ক স্থাপনের একমাত্র হালাল মাধ্যম এবং মহান আল্লাহ কর্তৃক অনুমোদিত একমাত্র বৈধ সম্পর্ক কাঠামো। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন, ‘তাঁর নিদর্শনের মধ্যে হলো এই যে তিনি তোমাদের জন্য তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন যাতে তোমরা তার কাছে শান্তি লাভ করতে পার আর তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পরিক ভালোবাসা ও দয়া সৃষ্টি করেছেন। এর মাঝে অবশ্যই বহু নিদর্শন আছে সেই সম্প্রদায়ের জন্য যারা চিন্তা করে। (সুরা রুম, আয়াত : ২১)

ব্যভিচারে পথকে সুগম করে:

সিচুয়েশনশিপ নামক অসুস্থ এই সম্পর্কটি দৈহিক সম্পর্কে রূপ নেওয়ার উচ্চ ঝুঁকিতে থাকে। যেহেতু সম্পর্কটার চরিত্রই রোমান্টিক, তাই বলা যায়, আপাতত শারীরিক চাহিদা মেটানোর একটি অসুস্থ সম্পর্ক কাঠামো এটি, যাকে ইসলামের দৃষ্টিতে ব্যভিচার হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা ব্যভিচারের কাছেও যেয়ো না। নিশ্চয়ই তা অশ্লীল কাজ ও মন্দ পথ।’ (সুরা বনি ইসরাঈল, আয়াত : ৩২)

এই সম্পর্কটি যদি কারো ক্ষেত্রে শারীরিক সম্পর্কের চূড়ান্ত ধাপ পর্যন্ত নাও পৌঁছায় তবুও সেখানে ব্যভিচারের গুনাহ থাকে। কেননা অবৈধ উপায়ে রোমান্সের প্রতিটি ধাপই মূলত ব্যভিচার। হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, চোখের ব্যভিচার হলো (বেগানা নারীকে) দেখা, জিহ্বার ব্যভিচার হলো (তার সঙ্গে) কথা বলা (যৌন উদ্দীপ্ত কথা বলা)।’ (বুখারি, হাদিস : ৬২৪৩)

অন্য হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, দুই চোখের জিনা (বেগানা নারীর দিকে) তাকানো, কানের জিনা যৌন উদ্দীপ্ত কথা শোনা, মুখের জিনা আবেগ উদ্দীপ্ত কথা বলা, হাতের জিনা (বেগানা নারীকে খারাপ উদ্দেশ্যে) স্পর্শ করা আর পায়ের জিনা ব্যভিচারের উদ্দেশে অগ্রসর হওয়া এবং মনের জিনা হলো চাওয়া ও প্রত্যাশা করা। (মেশকাত, হাদিস : ৮৬)

সিচুয়েশনশিপে এর সব কটি গুনাহই প্রতিনিয়ত ঘটে।

ঈমানকে ক্ষতিগ্রস্ত করে:

এই অবৈধ সম্পর্কের মোহ মানুষের ঈমানকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। কেননা ব্যভিচার এমন একটি মারাত্মক পাপ, যা মানুষের হিতাহিত জ্ঞান যেমন কেড়ে নেয়, তেমনি ঈমানকে কলুষিত করে। হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ব্যভিচারী ব্যক্তি ব্যভিচারে লিপ্ত থাকাবস্থায় মুমিন থাকে না…। (মুসলিম, হাদিস : ১০৬)

পরিবার ব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করে:

ইসলাম নারী-পুরুষের চরিত্র ও বংশের পবিত্রতা রক্ষায় বিয়ে সহজ করার প্রতি তাগিদ দেয়। যেমন পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আর তোমরা তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নারী-পুরুষ ও সত্কর্মশীল দাস দাসীদের বিবাহ দাও। তারা অভাবী হলে আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে অভাবমুক্ত করে দেবেন। আল্লাহ প্রাচুর্যময় ও মহাজ্ঞানী। (সুরা নুর, আয়াত : ৩২)

হাদিস শরীফে ইরশাদ হয়েছে, আবু হুরায়রা (রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা যে ব্যক্তির দীনদারী ও নৈতিক চরিত্রে সন্তুষ্ট আছ তোমাদের নিকট সে ব্যক্তি বিয়ের প্রস্তাব করলে তবে তার সাথে বিয়ে দাও। তা যদি না কর তাহলে পৃথিবীতে ফিতনা-ফ্যাসাদ ও চরম বিপর্যয় সৃষ্টি হবে। (তিরমিজি, হাদিস : ১০৮৪)

কিন্তু আজকাল বিয়ে কঠিন হয়ে গেছে। শারীরিক চাহিদা মেটানোর জন্য বিভিন্ন আকর্ষণীয় রূপে ব্যভিচার সহজ হয়ে গেছে। যা সমাজকে দিন দিন চরম বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

মহান আল্লাহ আমাদের সমাজকে এসব অসুস্থ সম্পর্ক থেকে রক্ষা করুন। আমিন।

সর্বশেষ সংবাদ

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে প্রথমবার ‘প্রাণঘাতী ক্লাস্টার বোমা’ ব্যবহারের অভিযোগ

ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে প্রথমবারের মতো প্রাণঘাতী অস্ত্র ‘ক্লাস্টার বোমা’ ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। ইসরায়েলের অভিযোগ, ইরান যেসব প্রাণঘাতী বোমা ব্যবহার করেছে,...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ