টেলিযোগাযোগ খাতে বড় ধরনের সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। এর অংশ হিসেবে লাইসেন্স অবকাঠামো, সেবা পরিচালনার খোলনলচে পাল্টে ফেলার উদ্যোগ নিচ্ছে সরকার।
দেশি-বিদেশি বিনিয়োগে ভারসাম্য তৈরির পাশাপাশি লাইসেন্সিং কাঠামো সহজীকরণ করাই এ সংস্কারের প্রধান লক্ষ্য। ‘টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক ও লাইসেন্সিং কাঠামো সংস্কার নীতিমালা ২০২৫’-এর খসড়ায় সংশ্লিষ্টদের মতামত-ও নেয়া হয়েছে।
নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) বলছে, সেবার মান বৃদ্ধি এবং খরচ কমানোর জন্য অতিরিক্ত স্তরভিত্তিক সেবাকাঠামো ছেঁটে ফেলা হচ্ছে।
বিটিআরসির চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী বলেছেন, আগে লাইসেন্স ছিল টুকরো টুকরোভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে। এখন তা পুনঃসংগঠনের প্রক্রিয়ায় আছি। এই পুনঃসংগঠনের সময় আমরা একটি মূলনীতি অনুসরণ করার চেষ্টা করেছি— প্রতিটি ক্যাটাগরি এমনভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে, যাতে এক ক্যাটাগরির সঙ্গে আরেক ক্যাটাগরির প্রতিযোগিতা না হয়। মূলত বাজারটিকে ধাপে ধাপে ডিরেগুলেট করার একটি প্রচেষ্টা চলছে। পাশাপাশি, আমরা লাইসেন্স দেয়ার সংখ্যা নিয়ন্ত্রণ না করে বরং কেপিআই ভিত্তিক রেগুলেশন চালু করতে চাই।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রস্তাবনায় সেবা কাঠামোতে অপ্রয়োজনীয় অতিরিক্ত স্তর বিলুপ্তির পরিকল্পনা করা হচ্ছে। ২০২৭-এ মেয়াদ শেষে ব্যবসার সুযোগ হারাবে আইজিডব্লিউ, আইসিএক্স, আইআইজির মতো স্থানীয় উদ্যোক্তারা।
প্রযুক্তিবিদরা বলছেন, সংস্কার প্রস্তাবনা বাস্তবায়ন হলে অনেক ক্ষেত্রে অনেক উদ্যোক্তা ব্যবসা হারাবে। সরকারের রাজস্ব কমে যাবে এমন আশঙ্কাও তৈরি হচ্ছে।
প্রযুক্তিবিদ সুমন আহমেদ সাবির বলেছেন, বর্তমানে যে কিছু লাইসেন্স বন্ধ করার কথা বলা হচ্ছে—যেমন আইজি, আইসিএস, আইজিডব্লিউ—তা মূলত এ ব্যবসাগুলোর কার্যক্রম কমে যাওয়ার কারণে। কারণ, এখন মানুষ আর প্রচলিত টেলিফোনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক কল করে না। ফলে যখন একটি লেয়ার (স্তর) থাকে না, তখন সেখান থেকে আয় ভাগ হয়ে চলে যায়। তবে এমনটা হলেও আমাদের যে বিষয়টি মাথায় রাখা উচিত, তা হলো সরকারের রাজস্ব (ট্যাক্সেশন) আদায়ের জায়গাটি কিন্তু এতে কমে যেতে পারে।
নতুন নীতিমালায় বিদেশি বিনিয়োগের জন্য দরজা আরও উন্মুক্ত করা হয়েছে। এনআইসিএসপি লাইসেন্সে সর্বোচ্চ ৭০ শতাশ এবং আইসিএসপি লাইসেন্সে ৪৯ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশি মালিকানা অনুমোদন করার সুপারিশ করা হয়েছে। এসব পরিবর্তন, দেশের টেলিকম খাতে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগ ও প্রযুক্তি স্থানান্তরের পথ প্রশস্ত করবে—এমন কথা বলছে বিটিআরসি।
যদিও স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের ব্যবসা সংকুচিত হওয়ার আশঙ্কাও করছেন খাত সংশ্লিষ্টরা। বিনিয়োগবান্ধব, প্রতিযোগিতা তৈরি এবং ব্যবসায়ীক সুযোগ তৈরির পরামর্শ দিচ্ছেন মোবাইল অপারেটররা।
রবি আজিয়াটা লিমিটেডের চিফ রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স অ্যান্ড কর্পোরেট অফিসার শাহেদ আলম বলেন, সংস্কারের এই উদ্যোগ নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। বিটিআরসি অনেক ক্ষেত্রেই চায় সরাসরি হস্তক্ষেপ না করে এমন একটি নীতিগত কাঠামো গড়ে তুলতে, যা বাজারে সহায়ক পরিবেশ তৈরি করবে। যাতে অর্থনৈতিক পরিসর বাড়ে, প্রতিযোগিতা বাড়ে। আর সেজন্য বিনিয়োগ আসার সুযোগ তৈরি হয়।
উল্লেখ্য, নতুন এই নীতিমালায় আইএলডিটিএস নীতিমালা ২০১০-সহ সংশ্লিষ্ট অন্যান্য নীতিমালাকে প্রতিস্থাপন করবে।