spot_img

মৃত্যুপথের যাত্রীর জন্য করণীয়

অবশ্যই পরুন

পৃথিবীতে মানুষের আগমন ক্ষণস্থায়ী। মানুষ তাঁর জীবনযাত্রা শেষ করে পা বাড়ায় অনন্ত জীবনের পথে। মৃত্যু সেই অনন্ত জীবনের দুয়ার খুলে দেয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর তার মৃত্যু ঘটান এবং তাকে কবরস্থ করেন। এরপর যখন ইচ্ছা তিনি তাকে পুনর্জীবিত করবেন।’ (সুরা আবাসা, আয়াত : ২১-২২)

মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত গুরুত্বপূর্ণ কেন

ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের মৃত্যুর পূর্বক্ষণটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা মৃত্যুর সময় ব্যক্তির ভালো-মন্দ পরিণতি প্রকাশিত হয়। পাপীদের ব্যাপারে ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি যদি দেখতে পেতে ফেরেশতারা অবিশ্বাসীদের মুখমণ্ডল ও পিঠে আঘাত করে তাদের প্রাণহরণ করছে এবং বলছে, তোমরা দহনযন্ত্রণা ভোগ কোরো।’ (সুরা আনফাল, আয়াত : ৫০)

অন্য আয়াতে মুমিনের মৃত্যুর দৃশ্য এভাবে তুলে ধরা হয়েছে, ‘তাকে বলা হলো, জান্নাতে প্রবেশ কোরো। সে বলে উঠল, হায় আমার সম্প্রদায় যদি জানতে পারত—কিভাবে আমার প্রতিপালক আমাকে ক্ষমা করেছেন এবং আমাকে সম্মানিত করেছেন।’ (সুরা ইয়াসিন, আয়াত ২৬-২৭)

তাই মৃত্যুপথের যাত্রীর পরকালীন যাত্রাটা যেন সুন্দর হয় সেই চেষ্টা করা আবশ্যক। সেদিকে ইঙ্গিত করে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমল তো শেষ অবস্থা অনুসারেই বিবেচিত হবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস ৬৬০৭)

মৃত্যুপথের যাত্রীর জন্য করণীয়

হাদিসে মৃত্যুপথের যাত্রীর জন্য কিছু করণীয় বর্ণিত হয়েছে। যা নিম্নে তুলে ধরা হলো—

১. কালেমার তালকিন : মুমূর্ষূ ব্যক্তিকে কালেমা স্মরণ করিয়ে দেওয়া এবং তাকে কালেমা পাঠের তাগিদ দেওয়াকে তালকিন বলা হয়। যখন কারো ভেতর মৃত্যুর আলামতগুলো প্রকাশ পেতে থাকে, তখন উপস্থিত ব্যক্তিদের উচিত তাকে কালেমা পাঠে উদ্বুদ্ধ করা হয় এবং আল্লাহকে স্মরণ করতে বলা। মুমূর্ষূ ব্যক্তির জন্য একবার কালেমা পাঠ করাই যথেষ্ট, বার বার তা পাঠ করানোর প্রয়োজন নেই। প্রাজ্ঞ আলেমরা বলেন, মুমূর্ষূকে ব্যক্তিকে কালেমা পাঠে পীড়াপীড়ি করা নিষেধ। কারণ, হতে পারে বিরক্ত হয়ে সে কালেমা পাঠ করতে অস্বীকার করে বসবে এবং তা তার জন্য দুর্ভাগ্য বয়ে আনবে। উত্তম হলো, এমন ব্যক্তির পাশে বসে শব্দ করে কালেমা পড়তে থাকা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা তোমাদের মৃত্যুগামী ব্যক্তিদের ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’-এর তাগিদ দাও।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৯১৬)

২. কেবলামুখী করা : মুমূর্ষূ ব্যক্তিকে কেবলামুখী করে দেওয়া মুস্তাহাব। যেন কেবলামুখী অবস্থায় তার মৃত্যু হয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘বায়তুল্লাহ তোমাদের জীবিত ও মৃত উভয় অবস্থায় কেবলা।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ২৮৭৫)

৩. সুরা ইয়াসিন পড়া : মুমূর্ষূ ব্যক্তির পাশে বসে সুরা ইয়াসিন পাঠ করা উত্তম। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মৃত্যুপথযাত্রী যারা তাদের পাশে তোমরা সুরা ইয়াসিন পাঠ কোরো।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস ৩১২৩)

৪. দোয়া করা : মৃত্যুপথের যাত্রীর মৃত্যু যেন ঈমানের সঙ্গে হয় এবং তার মৃত্যুযন্ত্রণা হালকা হয় এজন্য উপস্থিত ব্যক্তিরা দোয়া করবে। বিশেষত মুমূর্ষূ ব্যক্তির যদি হুশ জ্ঞান থাকে তবে সেও দোয়া করবে। মৃত্যুশয্যায় মহানবী (সা.) মৃত্যুযন্ত্রণা হালকা হওয়ার জন্য দোয়া করেছিলেন, ‘হে আল্লাহ! মৃত্যুকষ্ট ও মৃত্যুযন্ত্রণা হ্রাসে আমায় সহায়তা করুন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৯৭৮)

৫. যন্ত্রণা লাঘব করার চেষ্টা করা : মৃত্যুর সময় মানুষ শারীরিক ব্যথা ও যন্ত্রণা অনুভব করতে পারে। এমন অবস্থায় ব্যক্তির স্বজনরা তাঁর ব্যথা লাঘবের চেষ্টা করবে। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে মুমূর্ষু অবস্থায় দেখেছি একটি পানিভর্তি বাটি তার সামনে রাখা ছিল। তিনি সেই বাটিতে তার হাত প্রবেশ করাচ্ছিলেন এবং পানি দিয়ে তার মুখমণ্ডল মলছিলেন। আর বলছিলেন, ‘হে আল্লাহ, মৃত্যুকষ্ট ও মৃত্যুযন্ত্রণা হ্রাসে আমায় সহায়তা করুন।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৯৭৮)

কালেমার তালকিন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ

উল্লিখিত কাজগুলোর ভেতর কালেমার তালকিন বা উত্সাহ দেওয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। কারণ, কালেমা যার জীবনের শেষ কথা হবে তাকে জান্নাতের সুসংবাদ দেওয়া হয়েছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “যার শেষ কথা হবে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ সে জান্নাতে প্রবেশ করবে।” (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস ৩১১৮)

কালেমা পাঠের তালকিন অবিশ্বাসীকেও দেওয়া যায়। নবীজি (সা.) নিজের চাচা আবু তালিবের মৃত্যুর সময় তাঁকে কালেমা পাঠের আহ্বান করেন। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, এক ইহুদির ছেলে নবী (সা.)-এর সেবা করত। ছেলেটির অসুখ হলে নবী (সা.) তাঁর অসুখের খোঁজ নিতে গেলেন। তিনি বললেন, তুমি ইসলাম গ্রহণ কোরো। সে ইসলাম গ্রহণ করল। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৬৫৭)

মৃত্যুর পর দুই কাজ

মুমূর্ষু ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর তার আপন জনরা আরো দুটি কাজ করবে। তা হলো—

১. হিসাব সহজের দোয়া করা : দাফনের পর স্বজনরা ব্যক্তির হিসাব সহজ হওয়ার দোয়া করবে। রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার একজনকে দাফন করার পর সেখানে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘তোমরা তোমাদের ভাইয়ের জন্য ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা) কোরো এবং তার জন্য প্রার্থনা করো সে যেন সত্যের ওপর অবিচল থাকতে পারে। এখন তো তাকে প্রশ্ন করা হবে।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ৩২২৩)

২. সদকা করা : মৃত ব্যক্তির পরকালীন মুক্তি ও মর্যাদা বৃদ্ধির জন্য দোয়া ও সদকা করা যায়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘মানুষ যখন মারা যায় তখন তার সব আমলই বন্ধ হয়ে যায়। ব্যতিক্রম কেবল তিনটি—সদকায়ে জারিয়া, উপকারী ইলম আর এমন নেককার সন্তান, যে তার জন্য দোয়া করবে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস ১৬৩১)

মৃত্যু সুন্দর হওয়ার আমল

সুস্থ স্বাভাবিক অবস্থায় মুমিনের ভালো আমল ও অবিরাম দোয়া তাঁর মৃত্যুকে সুন্দর করতে পারে। আবুল ইয়াসার (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) হে আল্লাহ! আমি আপনার কাছে চাপা পড়ে মৃত্যুবরণ থেকে আশ্রয় চাই, আশ্রয় চাই গহ্বরে পতিত হয়ে মৃত্যুবরণ থেকে, আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই পানিতে ডুবে ও আগুনে পুড়ে মৃত্যুবরণ থেকে এবং অতিবার্ধক্য থেকে। আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই মৃত্যুকালে শয়তানের প্রভাব থেকে, আমি আশ্রয় চাই আপনার পথে জিহাদ থেকে পলায়নপর অবস্থায় মৃত্যুবরণ করা থেকে এবং আমি আপনার কাছে আশ্রয় চাই বিষাক্ত প্রাণীর দংশনে মৃত্যুবরণ থেকে।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ১৫৫২)

আল্লাহ সবাইকে উত্তম জীবন ও সুন্দর মৃত্যু দান করুন। আমিন।

সর্বশেষ সংবাদ

মালয়েশিয়ায় জাকির নায়েকের প্রকাশ্যে বক্তব্য দেয়ার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার

ভারতীয় ইসলামী চিন্তাবিদ ও বক্তা ড. জাকির নায়েকের প্রকাশ্যে বক্তৃতা দেয়ার নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে মালয়েশিয়া। ২০১৯ সালে সাময়িকভাবে তাকে...

এই বিভাগের অন্যান্য সংবাদ