পরিবেশ, বন, জলবায়ু পরিবর্তন ও পানি সম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকার তিনটি প্রধান অগ্রাধিকারকে গুরুত্ব দিচ্ছে- বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন। বৃহস্পতিবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যায় রাজধানীর একটি হোটেলে নর্ডিক ডে উদযাপন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
উপদেষ্টা বলেন, বিচার প্রতিষ্ঠা সরকারের সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার, যাতে অতীতের অন্যায়ের জবাবদিহি নিশ্চিত করা যায়। আগের দমনমূলক শাসনের সময় যারা নিহত, আহত বা অন্ধ হয়ে গেছেন, তাদের প্রতি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ।
সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জনগণের মধ্যে তাড়াহুড়ো থাকলেও কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন আনতে সুসংগঠিত প্রক্রিয়ার প্রয়োজন। তিনি সতর্ক করে বলেন, প্রক্রিয়া সঠিক না হলে কাঙ্ক্ষিত ফলও ন্যায়সঙ্গত হবে না।
নির্বাচন প্রসঙ্গে রিজওয়ানা হাসান বলেন, সরকার গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা এবং জনগণের ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে তিনি বলেন, নির্বাচনই সব সমস্যার সমাধান নয়, কাঠামোগত সংস্কারও জরুরি। রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণ ছাড়া এ সংস্কার কার্যকর হবে না।
তিনি জানান, সরকারের সংস্কার পরিকল্পনায় খাতভিত্তিক বিশেষজ্ঞদের সম্পৃক্ত করা হয়েছে, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ চলছে এবং তাদের সুপারিশের ভিত্তিতে আলোচনার নতুন ধাপ শুরু হয়েছে।
দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, গত ৫৩ বছরে আমাদের জনগণ বারবার গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করেছে। তবে এবারের পরিবর্তন ছিল ব্যতিক্রম-রাজনৈতিক প্রভাব বা বাহ্যিক চাপ ছাড়াই তরুণদের উদ্যোগে এ পরিবর্তন এসেছে।
তিনি বলেন, অর্থনীতি স্থিতিশীল রাখা, জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা ও আর্থিক খাতের সংকট সামলানো চ্যালেঞ্জিং। সরকার উত্তরাধিকার সূত্রে একটি দুর্বল ব্যাংকিং ব্যবস্থা পেয়েছে। কিন্তু জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করাই তাদের প্রধান লক্ষ্য।
প্রতিবাদ ও বিক্ষোভ সামলানো প্রসঙ্গে তিনি জানান, গত ছয় মাসে আমরা ১৮০টি আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে মোকাবিলা করেছি। প্রচলিত পুলিশি কৌশল ব্যবহার না করে ধৈর্য দেখিয়েছি, যা হয়তো একদিন স্বীকৃতি পাবে।
উপদেষ্টা বলেন, আমাদের সামনে আরেকটি সুযোগ নেই। বাংলাদেশ বারবার গণতন্ত্রের জন্য লড়তে পারে না, এবার সঠিক পথেই হাঁটতে হবে।
সংস্কারের চাপ যেমন আছে, তেমনি দ্রুততম সময়ে অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন আয়োজনের দায়িত্বও আমাদের কাঁধে বলে স্বীকার করেন তিনি।
মানবাধিকার প্রসঙ্গে তিনি গভীর দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, অনেক মানুষ তাদের দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছে, কেউ চিরতরে অন্ধ হয়ে গেছে। এই ক্ষতিগুলো মানুষকে হতাশ ও ক্ষুব্ধ করে তোলে, যা পরিস্থিতিকে জটিল করে তুলতে পারে। তিনি সবাইকে সংযত থাকার আহ্বান জানান এবং জাতীয় ঐক্যের ওপর গুরুত্ব দেন।
উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান নর্ডিক দেশগুলোর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, আপনাদের সহায়তা শুধু মাত্র অন্তর্বর্তী সরকারের জন্য নয়, নাগরিক সমাজের জন্যও অত্যন্ত মূল্যবান। সরকারে যোগদানের আগে যখন আমি একটি বেসরকারি সংস্থা পরিচালনা করতাম, তখনও আপনাদের সমর্থন পেয়েছি।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত ফিনল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত কিমো লাহদেভির্তা, ডেনমার্কের রাষ্ট্রদূত ক্রিশ্চিয়ান ব্রিক্স মোলার, নরওয়ের রাষ্ট্রদূত হোকন আরল্ড গুলব্রান্ডসেন এবং সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস বক্তব্য দেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও পরিবেশ সংরক্ষণকে এগিয়ে নিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কূটনীতিক, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ ও বিভিন্ন খাতের নীতিনির্ধারকরা উপস্থিত ছিলেন।