পুষ্পা ২: দ্য রুল-এর প্রিমিয়ারে এক ভক্তের মৃত্যুর ঘটনায় আল্লু অর্জুনের গ্রেপ্তারি নিয়ে যে নাটকীয় মোড় তৈরি হয়েছিল, তা যেন সিনেমার পালে আরও হাওয়া লাগিয়েছে। মুক্তির পর ১১ দিনে বিশ্বব্যাপী ১ হাজার ৩০০ কোটি রুপির ব্যবসা করেছে এ সিনেমা! মুক্তির পর দ্বিতীয় সপ্তাহে পড়লেও এখনো ‘পুষ্পা ২’ নিয়ে উন্মাদনা থামেনি। ভাটা পড়েনি বিক্রিতেও। তাই অচিরেই ছবিটি দুই হাজার কোটির ক্লাবে নাম লেখাবে—এ ভবিষ্যদ্বাণীও করছেন অনেকে।
বহুল চর্চিত সিনেমা ‘পুষ্পা ২’ এত জনপ্রিয়তার কারণ কী?
‘পুষ্পা ২’ সিনেমায় পুষ্পার লড়াই যেন নিজের সঙ্গে নিজের। নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়াই এ পুষ্পার কাজ। ক্ষমতার এ খেলা পুষ্পা খেলে যায় নিজের ছকে। তাঁর সামনে কোনো বাধাই বাধা হয়ে উঠতে পারে না। ‘পুষ্পা ফুল নয়, আগুন নয়, দাবানল’ বলে যেখানে ট্রেলার শেষ হয়েছিল, ‘পুষ্পা ২’ যেন সেটাই করে দেখানো হয়েছে পুরো সিনেমায়।
‘পুষ্পা’তে শ্রীভাল্লি রূপে রাশমিকা মান্দানার অভিনয় তেমনটা চোখে না পড়লেও ‘পুষ্পা ২’তে তিনি সেটা পুষিয়ে দিয়েছেন। পুষ্পা অর্থাৎ আল্লু অর্জুনের সঙ্গে তাঁর প্রেমের রসায়ন বেশ উপভোগ্য ছিল। তবে শুধু প্রেম নয়, আদর্শ সঙ্গী হয়ে সে পুষ্পার পাশে ছিল সব সময়। পূজার আসরে পুষ্পার ভাই তাঁর অপমান করলে শ্রীভাল্লি সবার সামনে তাঁকে কথা শোনাতে ছাড়ে না। আবার পুষ্পা ভাতিজি কাবেরীকে বাঁচাতে গেলে কপালে টিকা পরাতে পরাতে শ্রীভাল্লি বলে ওঠে, ‘পাপ-পুণ্যের হিসাব গঙ্গা মার ওপর ছেড়ে দাও। কাবেরীকে যারা হাত লাগাবে, তাঁদের তুমি ছাড়বে না।’
পুষ্পার সবকিছুই যেন তাঁর স্ত্রী শ্রীভাল্লি। বলতে গেলে শ্রীভাল্লির একটা ছোট্ট চাওয়া মেটাতে ‘পুষ্পা ২’ সিনেমা শুরু। পুষ্পা যখন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে যায়, তখন শ্রীভাল্লি তাঁর সঙ্গে পুষ্পাকে একটা ছবি তুলতে বলে। কিন্তু চোরাকারবারির সঙ্গে ছবি উঠতে রাজি হোন না মুখ্যমন্ত্রী। তাতে পুষ্পা মুখ্যমন্ত্রীকেই বদলে ফেলার পরিকল্পনা করে। আর এ জন্য যে টাকার প্রয়োজন, তা জোগান দিতে পুষ্পা খুঁজে বের করে চন্দন কাঠ বিক্রি করার আরেক মাফিয়াকে। দুই হাজার টন কাঠের এ চালান তাঁর কাছে বিক্রি করার চুক্তি করে পুষ্পা। তবে পুলিশের এসপি ভাওয়ার সিং শেখাওয়াত (ফাহাদ ফাসিল) থেমে থাকে না। সে তক্কে তক্কে থাকে প্রতিশোধ নেওয়ার। তাই পুষ্পা যখন শেখাওয়াতকে দুই হাজার টন কাঠের চালান ঠেকানোর চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেয়, তখন খেলা জমে ওঠে নতুন করে।
‘পুষ্পা ২’ প্রথা ভাঙার সিনেমা বললেও ভুল বলা হবে না। নায়কের চরিত্রকে শক্তিশালী বা ‘আলফা মেইল’ হিসেবে দেখাতে গিয়ে যেখানে নারীকে ছোট করা হচ্ছে, সেখানে ‘পুষ্পা ২’-তে দেখা যায় এক ভিন্ন চিত্র। পুষ্পা নারীদের সম্মান করে। স্ত্রীর চাওয়াকে প্রাধান্য দেয়। অনাগত সন্তানকে সে বংশের নাম দিতে পারবে না দেখে কান্নায় ভেঙে পড়ে। পরিবার তাঁর কাছে স্থান পায় সবার আগে।
তবে পুষ্পা সিনেমার সবচেয়ে আইকনিক সিন শাড়ি পরে পুষ্পার নাচ। এখানে পুষ্পাকে যেভাবে মাইথোলজির একটি চরিত্র হিসেবে উপস্থাপন করেছেন, পরিচালক সুকুমার সে জন্য প্রশংসার দাবিদার। আবার শেষ দিকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় ‘পুষ্পা’র মারামারির দৃশ্যের প্রশংসাও আলাদাভাবে করতেই হবে।
‘পুষ্পা ২’ প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টার সিনেমা। দীর্ঘ সময়ের এই সিনেমা যেন বানানো হয়েছে উপভোগ করার জন্যই। দেখতে গিয়ে আলাদা করে কিছু ভাবতে হয় না। পুরো সিনেমায় ভরপুর অ্যাকশন, থ্রিল, কমেডি, রোমান্স, আর নাচ-গান। তবে যুক্তির চিন্তা করলে অনেক দৃশ্যই হয়তো আপনার মনে খটকা জাগাবে। তবে পরিচালকের উপস্থাপনা, সিনেমাটোগ্রাফি, আর আল্লু অর্জুনের দুর্দান্ত অভিনয় দেখে সেসব ভাবার সুযোগ পাবেন না মোটেও। ‘পুষ্পা ২’ সবকিছুর ছাপিয়ে উপভোগ্য আনন্দে মাতিয়ে রাখে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত।