মিষ্টি কুমড়া যেমন সুস্বাদু, তেমনি শরীরের জন্যও উপকারী। পুষ্টিগুণে ভরপুর মিষ্টি কুমড়া নিয়মিত খেলে দূরে থাকতে পারবেন অনেক রোগ থেকে। হাল্কা মিষ্টি স্বাদের এই সবজি নানা পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। গর্ভবতী, শিশু থেকে শুরু করে সর্দি-কাশি, চোখ, ত্বক, হার্ট, ক্যান্সার ইত্যাদি ছাড়াও অন্য রোগের ক্ষেত্রে উপকারে আসে এই মিষ্টি কুমড়া।
মিষ্টি কুমড়ায় রয়েছে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন এ (বিটা-ক্যারোটিন), ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স, ভিটামিন সি এবং ভিটামিন ই, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাঙ্গানিজ, আয়রন, জিঙ্ক, ফসফরাস, কপার, ক্যারটিনয়েড এবং অন্যান্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস।
মিষ্টি কুমড়ার ইংরেজি নাম Sweet gourd বা Pumpkin, বৈজ্ঞানিক নাম Cucurbita moschata । এটি মিষ্টি লাউ নামেও পরিচিত। মিষ্টি কুমড়া গাছের উৎপত্তিস্থল মধ্য আমেরিকা কিংবা দক্ষিণ আমেরিকার উত্তরাংশ। মিষ্টি কুমড়া ভাজি, তরকারি ছাড়াও ভর্তা করে খাওয়ারও প্রচলন রয়েছে। তবে অনেক দেশে ডেজার্ট, স্যুপ এবং সালাদেও এটি ব্যবহার করে থাকে।
চরাঞ্চলের পলি মাটিতে মিষ্টি কুমড়ার ফলন ভালো হয়। জৈব পদার্থ সমৃদ্ধ দোঁ-আশ বা এঁটেল দোঁ-আশ মাটি এর চাষাবাদের জন্য উত্তম। বাসা-বাড়ির ছাদেও মিষ্টি কুমড়ার চাষ করা যেতে পারে।
প্রতি ১০০ গ্রাম মিষ্টি কুমড়ার পুষ্টিগুণ
খাদ্যশক্তি ২৬ কিলোক্যালরি, আমিষ ১ গ্রাম, শর্করা ৫ গ্রাম, ফাইবার ০.৫ গ্রাম, চর্বি ০.১ গ্রাম, ভিটামিন এ ৭২০০ মাইক্রোগ্রাম, ভিটামিন সি ৯ মিলিগ্রাম, পটাশিয়াম ৩৪০ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ২৪ মিলিগ্রাম, সোডিয়াম ১ মিলিগ্রাম, কোলেস্টেরল ০ মিলিগ্রাম, লৌহ ০.৮ মিলিগ্রাম, জিংক ০.৩ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ৪৪ মিলিগ্রাম।
পুষ্টিবিদরা বলছেন, খাদ্য তালিকায় নিয়মিত মিষ্টি কুমড়ার উপস্থিতি অসুখ-বিসুখ থেকে অনেক দূরে রাখে। এবার জেনে নেই মিষ্টি কুমড়ার উপকারিতা :
চোখ সুস্থ রাখে
চোখ অমূল্য সম্পদ। এই সম্পদ ধরে রাখিতে মিষ্টি কুমড়া অন্যন্য। কারণ এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ বা বিটা ক্যারোটিন। আমাদের রেটিনার বিভিন্ন অসুখ প্রতিরোধে মিষ্টি কুমড়া বিশেষ ভূমিকা পালন করে। বিটা-ক্যারোটিন ও আলফা-ক্যারোটিনের মত ক্যারটিনয়েড সমূহ চোখের ছানি পড়া রোধসহ চোখের রেটিনা কোষ রক্ষা করে। তাই চোখকে সচল ও সুস্থ রাখতে আপনার খাদ্য তালিকায় প্রতিদিন মিষ্টি কুমড়া রাখুন।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়
শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে মিষ্টি কুমড়া একটি অত্যন্ত উপকারি সবজি। মিষ্টি কুমড়ার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভিটামিন ই মানবদেহকে ক্যান্সার ও আলঝেইমার রোগের ঝুঁকি কমিয়ে দেয়। এছাড়া এ সবজির ভিটামিন-সি রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়িয়ে তুলে সর্দি-কাশি, ঠাণ্ডা লাগা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
ওজন কমায়
কম ক্যালোরি এবং প্রচুর পরিমাণে আঁশ বা ফাইবার থাকায় মিষ্টি কুমড়া ওজন কমাতে একটি উপযুক্ত খাবার। যারা তাদের শরীরের অতিরিক্ত ওজন নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন তারা সানন্দে মিষ্টি কুমড়া খেতে পারেন।
উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করে
যারা উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যায় ভোগেন তারা মিষ্টি কুমড়া খেতে পারেন। কারণ মিষ্টি কুমড়াতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম আছে, যা শরীরে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে। তাছাড়া মিষ্টি কুমড়াতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি থাকে যা রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সহায়তা করে।
ত্বক উজ্বল করে
ত্বক উজ্বল করতেও মিষ্টি কুমড়া সাহায্য করে। মিষ্টি কুমড়ার ভিটামিন-এ ও সি চুল ও ত্বক ভালো রাখে। তাই উজ্জ্বল চুল ও চকচকে ত্বকের জন্য নিয়মিত মিষ্টি কুমড়া খেতে পারেন। বয়সের ছাপ প্রতিরোধ করতেও মিষ্টি কুমড়া সাহায্য করে। এছাড়া এই সবজিতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে জিংক যা ইমিউনিটি সিস্টেম ভালো রাখে ও অস্টিওপোরোসিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে।
খাদ্য হজমে সহায়ক
মিষ্টি কুমড়ায় প্রচুর পরিমাণে আঁশ বা ফাইবার থাকায় তা সহজেই হজম হয়। হজমশক্তি বৃদ্ধি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে মিষ্টি কুমড়া গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। ডায়রিয়া নিয়ন্ত্রণ ও পরিপাক নালীর খাদ্য সঠিক উপায়ে সরবরাহে মিষ্টি কুমড়ার তুলনা হয়না।
গর্ভবতীর রক্তস্বল্পতা রোধ করে
মিষ্টি কুমড়া ও কুমড়ার বীজ গর্ভবতী মায়েদের রক্তস্বল্পতা রোধ করে অকাল প্রসবের সম্ভাবনা কমিয়ে দেয়, তাই গর্ভবতী মায়েরা তাদের অনাগত সন্তানের সুস্বাস্থ্যের জন্য নির্দ্বিধায় খেতে পারেন মিষ্টি কুমড়া।
এছাড়া মিষ্টি কুমড়ার বিভিন্ন উপাদান দেহের কিডনি, লিভার, হার্টকে সুস্থ রাখে, বাতের ব্যথাসহ দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার প্রশমন ঘটায়। মিষ্টি কুমড়ার ফাইবার দেহে কোলেস্টেরলের মাত্রা ঠিক রেখে স্ট্রোকের ঝুঁকি থেকে রক্ষা করে।
তথ্যসূত্র : নিউট্রিশন হাউস অব বাংলাদেশ