বহু বছর আগে থেকেই মহামারির প্রস্তুতি নিয়ে প্রচার চালিয়ে আসছেন মাইক্রোসফটের সহ-প্রতিষ্ঠাতা বিল গেটস।
ছয় বছর আগে টিইডি কনফারেন্সের এক আলোচনায় বিশ্বজুড়ে মহামারিতে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন তিনি।
মহামারির প্রাণহানি নিয়ে সতর্ক করে কথা বললেও প্রতিষেধকের প্রস্তুতপ্রণালী বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোকে দিতে অস্বীকার জানিয়েছেন বিল গেটস।
উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছে টিকার প্রস্তুতপ্রণালী গোপন রাখারও অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
গত ২৫ এপ্রিল স্কাই নিউজের সোফি রিজের অনুষ্ঠানে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তাকে প্রশ্ন করা হয়েছিল যে কোভিড-১৯ এর টিকার পেটেন্ট সুরক্ষা তুলে দেওয়া উচিত হবে কিনা কিংবা টিকার প্রস্তুতপ্রণালী বিশ্বকে দিয়ে দিলে তাতে কার্যকর ফল আসবে কিনা।
জবাবে কোনো রাখঢাক না রেখেই বিল গেটস বলেন, ‘এটা উচিত হবে না।’
এর আগে তিনি যোগ করেন, বিশ্বে অনেক টিকা উৎপাদন কারখানা আছে এবং টিকার নিরাপত্তায়ও মানুষ খুব গুরুত্ব দিচ্ছেন। তিনি বলেন, মহামারি বিনাশে বিশ্বের দরিদ্র দেশগুলোকে টিকার প্রস্তুতপ্রণালী দেওয়া যাবে না।
এরপরেই ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ এই ধনকুবেরকে।
বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) মেধাস্বত্ব সুরক্ষা আইনের পরিবর্তনের সমর্থকরা এ ঘটনায় বিল গেটসকে তুলাধোনা করেন।
এই সফটওয়্যার উদ্ভাবকের মন্তব্য ও তার পেছনে যে আদর্শিক মতবাদ কাজ করছে—তা ভীতিকর বলে মন্তব্য করেছেন গ্লোবাল জাস্টিস নাউয়ের নির্বাহী পরিচালক নিক ডিয়েরডেন।
আগামী মাসে অনুষ্ঠেয় ডব্লিউটিও’র বৈঠকে পেটেন্ট উঠিয়ে নিতে আহ্বান জানানো আন্তর্জাতিক জোটের অন্যতম অংশীদার গ্লোবাল জাস্টিস নাউ।
করোনার টিকার পেটেন্ট তুলে দেওয়া ও প্রযুক্তি দরিদ্র দেশগুলোকে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে গার্ডিয়ানে গভীর বিশ্লেষণমূলক একটি কলাম লিখেছেন সাংবাদিক স্টিফেন বুরিয়ানি।
এই মার্কিন ধনকুবেরের ‘ভয়াবহ’ যুক্তির বিরোধিতা করে বক্তব্য দিয়েছেন তিনি। সাংবাদিক স্টিফেন কঠোর সমালোচনার করে বলেন, এই ধনকুবের আশাবাদী মানুষের মতো কাজ করলেও তিনি আসলে বিশ্বের বিষণ্ণতার ছায়ামূর্তি।
স্কাই নিউজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বিল গেটস বলেন, যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের মতো ধনী দেশগুলো নিজেদের নাগরিকদের যে আগে টিকা দিচ্ছে, এটা পুরোপুরি অবাক হওয়ার কিছু না। কারণ এসব দেশেই মহামারি সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে।
বিল গেটসের অধিকাংশ ব্যক্তিগত সম্পদ মেধাসত্ত্ব আইনের ওপর নির্ভরশীল। তার সফটওয়্যার উদ্ভাবন থেকে কোটি কোটি ডলার এসে নিয়মিত তার সম্পদে যোগ হচ্ছে।
এদিকে বিল গেটস টিকার প্রস্তুতপ্রণালী দিতে অস্বীকার জানালেও করোনা প্রতিরোধে কার্যকর ওষুধ হিসেবে বাংলাদেশ থেকে ‘রেমডেসিভির’ রফতানি হচ্ছে বিশ্ববাজারে।
ঔষধ প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের সেপ্টেম্বরের শেষ থেকে ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে পৌনে তিন মাসে ১০০ কোটি টাকার বেশি রেমডেসিভির রফতানি করেছে বাংলাদেশের ওষুধ প্রস্তুতকারী ছয়টি প্রতিষ্ঠান।
যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সংযুক্ত আরব আমিরাত, আফ্রিকা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি দেশসহ বিভিন্ন দেশে ওষুধটি রফতানি করা হয়।
অনেক দেশ তাদের সরকারি দরপত্র আহ্বানের মাধ্যমে এ ওষুধ বাংলাদেশ থেকে আমদানি করে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রসহ বেশকিছু দেশে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ‘রেমডেসিভির’ ব্যবহার করা হচ্ছে। সার্স ও ইবোলা ভাইরাসের বিরুদ্ধে ভালো প্রতিকার দিয়েছিল ওষুধটি।
কভিড-১৯ প্রতিরোধে যুক্তরাষ্ট্রের ওষুধ প্রশাসন (এফডিএ), জাপান সরকার এবং ইউরোপীয় দেশগুলোর ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ ‘ইউরোপিয়ান মেডিসিন এজেন্সি’ বিশেষ পরিস্থিতিতে জরুরি ওষুধ হিসেবে রেমডেসিভির ব্যবহারের অনুমোদন দেয়।
গেল বছরের ১ মে রয়টার্সের খবরে বলা হয়, করোনা প্রতিরোধের প্রতিষেধক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে পাঁচ কোটি হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন রফতানি করে ভারত।
সবমিলিয়ে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের ধনী দেশগুলোকে বাংলাদেশ ও ভারতের মতো দেশগুলোকে ব্যাপক আকারে নির্ভর করতে হচ্ছে।